ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কালো সোনার হাতছানি ॥ অমিত সম্ভাবনার ব্লু ইকোনমি

প্রকাশিত: ২২:০০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

কালো সোনার হাতছানি ॥ অমিত সম্ভাবনার ব্লু ইকোনমি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বহুক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে। কিন্তু অপার সম্ভাবনার বড় যে একটি ক্ষেত্র এবং যা থেকে আহরিত সম্পদ বদলে দিতে পারে পুরো দেশের অর্থনীতি সে খাতেই দেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। সে খাতটির নাম নীল সমুদ্র অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি। আরও সহজভাবে বলতে হয় দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকা থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির কাঠামো আরও মজবুত করার বিশাল হাতছানি। সমুদ্রের তলদেশে খনিজ সম্পদের যে ভান্ডার যাকে কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে- সেটি আহরণ করা গেলে ব্লু ইকোনমিকে অমিতবিক্রমে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমুদ্র নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের দূরদৃষ্টি সেদিকেই। অথচ, চিরায়ত সেই লালফিতার দৌরাত্ম্য, অবহেলা, অনভিজ্ঞতা ক্ষেত্র বিশেষে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সন্দেহের ষড়যন্ত্রের কারণে ঐতিহাসিক সমুদ্রসীমা জয়ের পাঁচ বছর পরও দেশ এ খাতে এখনও সুফল বয়ে আনতে পারেনি। মাত্র কিছুদিন আগে গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমা এলাকা থেকে মূল্যবান টুনা মাছ ও সহজাতীয় মাছের প্রাপ্যতা যাচাই এবং আহরণে ৬১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। যদি সবকিছু সোজা পথে চলতে পারে চলতি বছরই শুরু হয়ে এ পাইলট প্রকল্প আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ সম্পন্ন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ তো গেল টুনা মাছসহ সমজাতীয় মৎস্য সম্পদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গৃহীত মাত্র একটি প্রকল্প। কিন্তু সমুদ্রকে ঘিরে আরও যেসব সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্প গ্রহণের স্বরূপ দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে আগ্রহী মহলে জল্পনা-কল্পনা ও প্রশ্নের শেষ নেই। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। সূত্র মতে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় আদালতের রায়ে বাংলাদেশ বিশাল এলাকার মালিকানা অর্জন করেছে। এরপর থেকে সমুদ্র অর্থনীতির প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসে গেছে ব্যাপকভাবে। তখন থেকেই বলা শুরু হয় বর্তমান পৃথিবীতে বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমাগতভাবে প্রতিযোগিতার মুখে থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ৯ বিলিয়ন মানুষের আহার জোগাড় করার বিষয়টি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামুদ্রিক সম্পদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হওয়ার বিষয়টি গবেষকদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। কেননা, দেশের সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। অথচ, ভূ-ভাগের আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। সঙ্গত কারণে ভূ-ভাগের কাছাকাছি সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকা। এত বিশাল টেরিটোরিয়াল সি এলাকার ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অন্যান্য সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার লাভ করেছে বাংলাদেশ। অথচ, বিশাল এ অঞ্চলে মৎস্য, জলজ, খনিজসহ যেসব সম্পদ রয়েছে তা এখনও অনাবিষ্কৃত এবং অনাহরিত। এ সমুদ্র অঞ্চলের উপরিভাগ থেকে তলদেশ সীমা, তলদেশের নিচের স্তর- এ তিন পর্যায়ে রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিশাল ক্ষেত্র। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি গবেষণাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ দেশের সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে যে বার্তাটি পৌঁছে দেয়া হয় সেটা হচ্ছে সমুদ্র থেকে সরাসরি আহরণযোগ্য জৈব ও অজৈব সম্পদ, উন্নয়নযোগ্য সম্পদ এবং মানব সম্পদ নিয়ে তথ্যাদি। জৈব ও অজৈব সম্পদের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে তলদেশীয় মাছ, নদী ও মোহনার মাছ, উন্মুক্ত সামুদ্রিক সাতারু মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার, শামুক, ঝিনুক, লবণ ও লবণাক্ত পানি, ডি স্যালাইনেশন, তেল, গ্যাসসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ, যাকে কালো সোনা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিহিত করা হচ্ছে। অপরদিকে, উন্নয়নযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পর্যটন, সামুদ্রিক ক্রীড়া। সমুদ্র পরিবহন ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহারের বৃদ্ধিতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জাহাজফ্লিট সম্প্রসারণ, বন্দর উন্নয়ন, ট্রানজিট উন্নয়ন, স্থল ভূমি উদ্ধার ও উন্নয়ন। বনজ সম্পদের উন্নয়ন সমুদ্র স্রোত, ঢেউ, জোয়ার ভাটা, সামুদ্রিক বায়ু প্রবাহের শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত শক্তি উৎপাদন, এছাড়া বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ এবং পেশাজীবীদের এ খাতে দক্ষভাবে গড়ে তোলা। সূত্র জানায়, ১৯৮৩-৮৬ সালের পর বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদের পরিপূর্ণ কোন জরিপ ও মজুদ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন ক্রয় করা জরিপ জাহাজ নিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। গত প্রায় ৩৬ বছরেরও আগের মজুদের প্রায় অস্বচ্ছ একটি ধারণার ওপর বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ কার্যক্রম চলছ। ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য লং লাইনার জাহাজের লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্র রেখা ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। উপকূলে ৫০ সহস্রাধিক নৌকা ৩০ নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে মাছ ধরে। এর বাইরে আরও ২০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় প্রায় ২০০ ট্রলার মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকে। অথচ দেশের সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি। ফলে ৫০ নটিক্যাল মাইল এলাকার বাইরে আরও দেড় শ’ নটিক্যাল মাইল এলাকা রয়েছে দেশীয় কোন ইঞ্জিন বোট, ট্রলার যায় না বা যাওয়ার উপযোগী নয়। ফলে এ বিস্তীর্ণ গভীর সাগর এলাকা থেকে মাছ অনাহরিতই থাকছে। এছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদ বলতে যা বোঝায এবং যা ব্লু ইকোনমির অন্যতম অনুষঙ্গ সবই রয়েছে অধরা। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ, অপ্রাণিজ বা খনিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার ও কর্তৃত্ব লাভ করার পর ব্লু ইকোনমিতে অবদানের যে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছে তা দেশের জন্য বড় ধরনের আশীর্বাদ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। সূত্র মতে, এখন দরকার প্রকৃত অর্থের গবেষণা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার পথ সুগম করা। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস বিভাগের গবেষক অধ্যাপক শরীফুজ্জামানের মতে, ২০১৪ সালে তাদের বিভাগীয় গবেষণা রিপোর্ট উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। এখন দরকার ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া অন্য সম্ভাবনার খাতগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়েও গবেষণা শুরু করা অতীব জরুরী। কয়েকটি বিষয়ে জাতিসংঘসহ বন্ধুপ্রতিম দেশ ইতোমধ্যে এগিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন করা, যা সময়ের দাবি। তার মতে, দেশে মহিলা বিষয়ক, ক্রীড়ার উন্নয়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রণালয় রয়েছে। সিঙ্গাপুরে আছে বন্দর নিয়ে একক মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনার ব্লু ইকোনমি নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করতে দোষ কোথায়। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পাঁচ বছর সময় পেরিয়ে ছয় বছরের দ্বার প্রান্তে। ব্লু ইকোনমি নিয়ে অতটা গতি আসেনি। সবে মাত্র শুরু হচ্ছে। সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ নিয়ে শুরু করে সমুদ্রভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য সবই এখনও চলছে আগের ধাঁচেই। জলজ সম্পদ, খনিজ সম্পদের তথ্য নতুন করে তেমন কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত নয়। বিষয়টি বড় দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে সমুদ্রভিত্তিক গবেষকদের একাধিক সূত্র। বর্তমানে দেশের জলসীমার পরিমাণ স্থলের ৮১ শতাংশ। কত বিশাল সমুদ্র অঞ্চল। আর এ অঞ্চলে যেসব সম্পদের সমাহার থাকার কথা সেসব থেকে একে একে সম্পদ আহরিত হতে থাকলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতিবছর ৮শ’ মিলিয়ন টন মাছ আহরিত হয়ে থাকে। অথচ, সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অনাহরিত থাকছে। এ অঞ্চল থেকে বিদেশীদের মৎস্য লুণ্ঠন চলছে। এ সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে সীমান্ত পাহারায় জনবল বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ বৃদ্ধির পদক্ষেপ বাঞ্ছনীয়। প্রসঙ্গত, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত হওয়ার পর এখন কয়েক ব্লকে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের বাধাও অপসারিত হয়েছে। সূত্র মতে, সমুদ্রের উপরিভাগে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশাল বাণিজ্যিক কর্মকান্ড। উপরিভাগ থেকে তলদেশ পর্যন্ত রয়েছে মৎস্য ও বিভিন্ন জলজ সম্পদ। যা আহরিত হচ্ছে পরিমাণের তুলনায় একেবারেই কম। সবশেষে রয়েছে তলদেশের গভীরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বঙ্গোপসাগরের নিচে পৃথিবীতের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি সম্পদের মজুদ রয়েছে। ফলে সাগর অঞ্চল গুরুত্ববহ, যেখানে রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। বিশ্বজুড়ে গবেষকরা বর্তমানে ২০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস মজুদের যে হিসাব কষছেন তা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ববৃহৎ জ্বালানি উৎস হিসাবে মনে করা হচ্ছে। শুধু গ্যাস নয়, বঙ্গোপসাগরে ভারি খনিজ সম্পদও রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করছেন। হেভি মিনারেল বা ভারি খনিজ সম্পদের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা ইলমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট, মোনাজাইট, কোবাল্টসহ আরও নানা জাতের সম্পদ। দেশের কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, নিঝুমদ্বীপ, কুয়াকাটাসহ সাগর পাড়ের অঞ্চলগুলোতে রয়েছে ভারি খনিজ বা কালো সোনার ভান্ডার। দেশের এসব কোস্টাল অঞ্চলে প্রায় ১৬০ হাজার টন জিরকন, ৭০ হাজার টন রুটাইল, ১০২৬ হাজার টন ইলমেনাইট, ২২৫ হাজার টন গার্নেট, ১৭ হাজার টন মোনাজাইট ও ৮১ হাজার টন ম্যাগনেটাইট মজুদ থাকার আভাস দিয়েছে গবেষকরা। এদিকে, দেশে সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র ছাড়া এখনও আর কোন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। সাঙ্গুর উত্তোলিত গ্যাস ইতোমধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে। ফলে এত বিশাল সমুদ্র এলাকায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধান নিশ্চিত করে উত্তোলনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসে গেছে। উল্লেখ্য, দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরিভাবে সমুদ্রভিত্তিক। প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয় সমুদ্র পথে। বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে সমুদ্র পথে। অভ্যন্তরীণ বন্দর ও নির্মিতব্য গভীর সমুদ্রবন্দর সাগরের গুরুত্বকে বিশেষভাবে জানান দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের জলসীমা অভ্যন্তরে রয়েছে প্রায় ৪০টি ছোট ছোট দ্বীপ। যেগুলোতে মানুষের কোন বসবাস নেই। পর্যটন বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় খাতে কাজে লাগানো যায়। নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরকে উন্নয়ন করে যেভাবে কাজে লাগানো হয়েছে সেটি জ্বলন্ত একটি উদাহরণ। রোহিঙ্গারা সেখানে যাক বা না যাক এটি একটি স্বনির্ভর দ্বীপে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ দ্বীপটির কার্যক্রমও দেশের সমুদ্র অর্থনীতিকে বেগবান করবে নিঃসন্দেহে। টুনা মাছ ॥ বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও দামী একটি মাছ হচ্ছে ব্লু-ফিন টুনা। জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত কিছু দেশে এ জাতীয় টুনা মাছের বিরাট কদর রয়েছে। আলোচনা আছে, একটি ব্লু-ফিন টুনা মাছের মূল্যের বিনিময়ে জাপানী একটি টয়োটা কার মিলে যায়। এ জাতীয় টুনাসহ সব ধরনের মাছের আহরণে বিনিয়োগ উৎসাহ করতে সরকার ইতোমধ্যে ৬১ কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গবেষকদের মতে, টুনা মাছ কয়েক জাতের রয়েছে। তন্মধ্যে ব্লু-ফিন টুনা সবচেয়ে দামী। সূত্র জানায়, নতুন অর্জিতসহ দেশের সমুদ্রসীমার শেষ প্রান্তের আকৃতি ত্রিভুজের উপরিভাগের মতো। ফলে এক্ষেত্রে লং লাইন ফিশিং কার্যক্রম নিয়ে এখনও জটিলতা রয়েছে। কেননা, ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বরশি দিয়েই টুনা ফিশ ধরা হয়। এতে জলসীমার শেষ প্রান্ত কোনকৌনিক হওয়ায় টুনা মাছ ধরার ক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে অন্যান্য জাতের টুনা মাছ নিয়মিত কম হলেও ধরা পড়ছে। অধিক হারে ধরার জন্য সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ব্লু ইকোনমিকে সমৃদ্ধ করতে সমুদ্রভিত্তিক উপরিভাগ, মধ্যভাগ এবং তলদেশের নিচের সবজাতীয় সম্পদের আহরণ নিশ্চিত করতে পারলে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি নিশ্চিতভাবে পাল্টে যাবে- এমন মত দিয়েছেন সমুদ্রভিত্তিক গবেষকদের বিভিন্ন সূত্র।
×