ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আশ্বিন মাস এখন। অথচ বৃষ্টি দেখে আষাঢ় বলেই মনে হচ্ছে। যখন তখন কাঁদতে শুরু করছে ঢাকার আকাশ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ভ্যাপসা গরম কিছুটা দূর হয়েছে। বাতাস এখন মোটামুটি ঠা-া। কখনও কখনও শুধু ঠা-া নয়, হেমন্তের হালকা সেই শীতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর বেশি দিন বাকি নেই। চলতি মাস বিদায় নিলেই নতুন ঋতু। হেমন্তের শিশির ঝরা রাত। কেউ কেউ তো বলছেন, এখনই ভোর বেলায় শিশির ঝরছে। হতেও পারে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে একদিন তা পরখ করে দেখতে হবে। তবে শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা। ঠাণ্ডা পরিবেশে এ ভাইরাস নাকি বেশি সক্রিয় হয়। বাইরের কিছু দেশে এ কারণেই বিপুল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় ঢাকাবাসীকে আরও সতর্ক হতে হবে। করোনাকে অবহেলা না করে ফিরতে হবে স্বাস্থ্যবিধিতে। বিশেষজ্ঞনরা এমন পরামর্শ দিয়ে বলছেন, অন্যথায় আসতে পারে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ। এদিকে করোনার চিকিৎসায় বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে ঢাকার রোগীদের। অনেকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল। আর তারপর একই বিষয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানালেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সভায় আতিক তার এ অসন্তোষের কথা জানান। রাখঢাকা না করেই মেয়র বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ডাকাতির মাধ্যমে, ডাকাতির মতন করে পয়সা আদায় করছে। হাসপাতালে ঢোকার আগে পয়সা দিতে হচ্ছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা করছে বিভিন্ন হাসপাতাল। হাসপাতালগুলোর চেকআপের বিল অনেক বেশি। আপনি একটা চেকআপ করতে দেন- ইউরিন চেকআপ করেন, ব্লাড চেকআপ করেন, কথায় কথায় চেকআপ হচ্ছে ভাল কথা, কিন্তু তাদের যে বিল, তাদের যে হাসপাতালের বিল, তাদের বিভিন্ন পরীক্ষার যে বিল তা সম্পূর্ণ একটি ডাকাতির মতো। এমনটি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। মেয়রের এ বক্তব্যে সাধারণ ভুক্তভোগীদের কথাই উঠে এসেছে। নানা অযুহাতে কোভিড চিকিৎসার ব্যয় বাড়িয়ে চলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে আবারও বড় সঙ্কট তৈরি হবে দেশে। সরকারের উচিত সময় থাকতে বিষয়টির দিকে নজর দেয়া। অন্য প্রসঙ্গ। পুরান ঢাকায় আজ শুক্রবার থেকে চালু হচ্ছে নতুন একটি নাট্যমঞ্চ। সাধারণত থিয়েটার মানে শিল্পকলা একাডেমি। থিয়েটার মানে বেইলি রোড। এই বলয়ের বাইরে মঞ্চ নাটককে নিয়ে যাওয়ার নানা চেষ্টা হয়েছে বটে। তেমন কাজে আসেনি। নাটক চেনা গন্ডিতে থেকে যাওয়ার অনেক কারণ। তবে অন্যতম প্রধান কারণটি, বলার অপেক্ষা রাখে না, মঞ্চের অভাব। নগরীজুড়ে বিশাল বিশাল ভবন হচ্ছে। স্থাপনা গড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু নাটক করার মতো মঞ্চ পাওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় অতি সম্প্রতি পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নতুন একটি মঞ্চ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়। লক্ষ্মীবাজার চাইল্ড হেভেন স্কুলে (সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশে) আজ শুক্রবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। মঞ্চটির নামকরণ করা হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের নামে। বাংলা ভাষার প্রথিতযশা কবি সব্যসাচী হিসেবে আলাদা পরিচিতি পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটককে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ঢাকার মঞ্চের খুব বিখ্যাত কয়েকটি প্রযোজনার কথা বলা হলে সেখানে সৈয়দ হকের নাটক থাকবে। প্রয়াত নাট্যকারের সেই অবদানের কথা স্মরণে রেখে হলের নামকরণ করা হয়েছে। মঞ্চটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে মৈত্রী থিয়েটার ও শৌখিন থিয়েটার। সৈয়দ হকের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকীর প্রাক্কালে হলটি উদ্বোধন করবেন খ্যাতিমান অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চাইল্ড হেভেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মোঃ আহসান সিদ্দিকী। সঞ্চালনা করবেন মৈত্রী থিয়েটারের দলপ্রধান নিয়াজ আহমেদ। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এখানে নিয়মিত নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা সম্ভব হবে। দর্শকও উন্মুখ হয়ে আছেন। থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশংসনীয় উদ্যোগ এগিয়ে নিতে জাতীয় পর্যায়ের নাট্যদল ও নাট্য সংগঠকদের এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। তবেই স্থানীয় নাট্যকর্মীদের এ উদ্যোগ সফল হবে। আমরা সে সাফল্যই দেখতে চাই।
×