ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হালদায় ছাড়া হচ্ছে দুই টন কার্প মাছের পোনা

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

হালদায় ছাড়া হচ্ছে দুই টন কার্প মাছের পোনা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির মাছের প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। মডেল পুকুর থেকে হালদার পোনা হালদাতেই ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো। এ বছর দুই টন পোনা ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে তা মৎস্য বিজ্ঞানী বা গবেষকদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে পোনার আকার কত বড় হবে। পোনা কালেকশনের জন্য হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সরোয়ার মোরশেদের পুকুরটি মডেল পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৬০ শতক বা দুইকানি আয়তনের এ পুকুরটিতে হালদার পোনা ছাড়া হয়েছে গত জুলাই মাসে। ইতোমধ্যে রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউশ জাতীয় পোনাগুলো বড় হয়ে বিভিন্ন আকার ধারণ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা মডেল পুকুরের পোনাগুলোই হালদায় ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কালিবাউশের পোনার সঙ্কট থাকায় স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে যদি কালিবাউশের পোনা থাকে তাও উপজেলা প্রশাসন ক্রয় করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কারণ, মডেল পুকুর থেকে ১২০ কেজি হালদার পোনায় মাত্র ৬০টি কালিবাউশের পোনা পাওয়া গেছে। এতে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন কালিবাউশের পোনা কালেকশনে হালদার পোনার ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, কালিবাউশের পোনা যেন অন্যত্র বিক্রি না করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিক্রি করেন। হালদার পোনা হালদায় ছাড়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গড়দুয়ারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সরোয়ার মোরশেদের প্রায় দুইকানি আয়তনের পুকুরটি মডেল পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউশের দুই টন পোনা এবার হালদায় ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নদী থেকে কালিবাউশের পোনা অনেকটা হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে হালদার পোনা বড় করা হচ্ছে সে সব পুকুর থেকেও ক্রয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীরা যাতে এসব পোনা অন্যত্র বিক্রি না করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিক্রি করেন সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ হালদার পোনা ব্যতীত হালদা নদীতে অন্যস্থানের পোনা ছাড়া হবে না। অন্যস্থানের পোনায় হালদার প্রজনন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও প্রাণিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়াসহ হালদা বিশেষজ্ঞ, হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় মৎস্যজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী পোনার আকার ঠিক করে হালদায় ছাড়া হবে। জানা গেছে, মিঠা পানির মাছের পোনার জন্য নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়েছে হালদার ওপর। কার্পজাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা। একযুগের ইতিহাসে ২০২০ সালেই ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় চারগুণেরও বেশি। ২৮০টি নৌকায় ৬১৫ মৎস্যজীবী এসব ডিম সংগ্রহ করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশনায় ও হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিনের তত্ত্বাবধানে হালদায় প্রাকৃতিক প্রজনন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া হয় ২০১৯ সালে। হালদার ডিম পরিস্ফুটনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মিত তিনটি হ্যাচারির আওতায় থাকা ৭০ ভাগ আয়তকার চৌবাচ্চা গত পাঁচ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু গত বছর থেকে শতভাগ কুয়া মাছের ডিম ছাড়ার আগেই ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। সরকারী ৫টি হ্যাচারির ১৩১টি কুয়ায় ডিম পরিস্ফুটন করা হয়। গত ১২ বছরের রেকর্ড অনুযায়ী মাছের ডিম সংগ্রহ, রেণু উৎপাদন, পোনা ও মাছ বিক্রি করে বছরে উপজেলা প্রশাসনের আয় হয় ৮২১ কোটি টাকা।
×