ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণার ফল প্রকাশ

তেল ও খাদ্যে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে দ্রুত আইন দাবি

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

তেল ও খাদ্যে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে দ্রুত আইন দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তেল ও সব ধরনের খাদ্য দ্রব্যে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে দ্রুত আইন প্রণয়ন করে তা যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই আইন করে খাবারে থাকা ১০০ গ্রাম ফ্যাটের মধ্যে ২ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেলে (পিএইচও) ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ বিষয়ক গবেষণার ফল প্রকাশ উপলক্ষে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। গবেষণার ফলে বলা হয়, ঢাকার পিএইচও (পারশিয়াল হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) নমুনার ৯২ শতাংশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্সফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। যা ডব্লিউএইচওর সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। ঢাকার পিএইচও ব্র্যান্ডগুলোর নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ফল পেয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল এ্যান্ড রিচার্স ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। গবেষণায় সহায়তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, গ্লোবাল হেলথ এ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (চিএইচআই), কনজিউমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। ওই গবেষণায় বলা হয়, ডব্লিউএইচওর সুপারিশ অনুসরণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রেণে আইন করার জোর দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। যার অন্যতম কারণ ট্রান্সফ্যাট। বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোন নীতিমালা না থাকায় খাদ্য দ্রব্যে এর পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি থেকে যাচ্ছে। যেজন্য হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ভাল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং মানুষকে অসুস্থ করে। ডব্লিউএইচওর মতে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সাধারণত ভাজা পোড়া ও বেকারি খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট থাকে। ভেজিটেবল অয়েলের (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত (হাইড্রোজেনেশন) করলে তেল জমে যায় এবং ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। এই পিএইচও আমাদের দেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ভাজা পোড়া খাদ্যে একই তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বার বার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডব্লিউএইচওর পরামর্শ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্য শক্তির ১ শতাংশের কম; অর্থাৎ দৈনিক ২ হাজার ক্যালোরির ডায়েটে তা ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম হতে হবে। ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে ডেনমার্ক বিশ্বে প্রথম ২০০৩ সালে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ইরান, ভারতসহ মোট ২৮ দেশে খাদ্য দ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পিএইচওর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের ফুড সেফটি এ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি ২০২২ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে কমিয়ে আনার পাশাপাশি খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি পরিবর্তনে ডব্লিউএইচও ২০১৮ সালে ‘রিপ্লেস’ এ্যাকশন প্যাকেজ ঘোষণা করে। যেখানে ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোন নীতিমালা নেই। অনুষ্ঠানে গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, গবেষণা উপদেষ্টা আবু আহাম্মদ শামীম, কনজিউমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অরডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ প্রমুখ।
×