ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক সেবা

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাগরিক সেবা

২০টি মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫৬টি প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে বিভিন্ন খাতে সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় না। এক প্রতিষ্ঠান রাস্তা কেটে ড্রেনেজ পাইপ লাইন স্থাপন শেষ করার কিছুদিন পরই আরেক প্রতিষ্ঠান গ্যাস লাইনের জন্য একই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। কাজ শেষে রাস্তা যখন মেরামত করা হয়, তখন বিদ্যুত অথবা টেলিফোন লাইন স্থাপনের নামে ওই রাস্তা খুঁড়তে আসে আরেক প্রতিষ্ঠান। সমন্বয় না থাকায় পরিকল্পিতভাবে ও সঞ্চিত কাজে বিঘœ ঘটে। এর পরিণতি ভোগ করতে হয় নগরবাসীকে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অত্যাধুনিক সুবিধা নেবেন রাজধানীবাসী, এটি সঙ্গত প্রত্যাশা। ঘরে বসেই যাতে ঢাকাবাসী হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেন তার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখায় সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান মিলবে। বিদেশে বসেও আপীল আবেদনের নির্ধারিত ফি জমা, এ সংক্রান্ত যে কোন অভিযোগ প্রদান ও নিষ্পত্তি করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করের পরিমাণ না বাড়িয়ে এবার করের পরিধি বাড়াতে চাইছে ডিএনসিসি। এটা সমর্থনযোগ্য। বর্তমানে ডিএনসিসি বা ঢাকার উত্তরাংশে সামগ্রিক এলাকায় মোট ২ লাখ ৪০ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। অপরদিকে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি হোল্ডিং রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। করোনা মহামারীর কারণে বর্তমানে ডিএনসিসির রাজস্ব আয় কমেছে, এটা বাস্তবতা। নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের আগে রাজস্ব শাখায় জমানো অর্থ থেকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হতো। অপরদিকে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন তাদের হোল্ডিং অনুযায়ী এবং জনগণের বসবাসের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ীই প্রতি বছরের সেবা প্রদানের কর্মসূচী এমনকি রাস্তাঘাট, স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর বাইরে সকল প্রকার নাগরিক সেবাদানকারী প্রকল্পও হোল্ডিংয়ের ভিত্তিতেই পরিচালনা করা হয়। তাই সেবার মান নিশ্চিত করা এবং তার পরিধি বাড়াতে বাজেট বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বাজেট বাড়াতে হলে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য করে ছাড় দেয়া চলবে না। ঢাকার হাজার হাজার ভবন মালিক ভাড়াটিয়াদের ওপর বর্ধিত ভাড়া চাপিয়ে দেন বছরের শুরুতেই। অথচ সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ফি প্রদানে গড়িমসি করেন। এমনকি বহু বাড়ির মালিক এবং দোকানমালিক বিভিন্ন কৌশলে ট্যাক্স এড়িয়ে যান। সুনাগরিক হতে হলে অবশ্যই রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হবে। পক্ষান্তরে এটাও মনে রাখা চাই যে, নগরবাসী করপোরেশনের কাছ থেকে যথাযথ সেবা ও বিবিধ সুবিধা পেতে চাইবেন। এটিও মেয়রকে সবসময় স্মরণে রাখতে হবে। নগরবাসী নির্ধারিত ট্যাক্স দেবেন, সিটি করপোরেশনও নগরবাসীকে সেবা প্রদানে আন্তরিক ও সক্রিয় থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পরও ঢাকা শহরের মানুষ তাদের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত। মেট্রোপলিটন সিটির নাগরিক হিসেবে মৌলিক যে সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রাপ্য, সেগুলো এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। এটা সিটি কর্পোরেশনের একটি বড় দুর্বলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের যে রূপকল্প দিয়েছেন তার জন্য উন্নত রাজধানী বিনির্মাণ করা আবশ্যক। সেই বিবেচনা থেকেই তিনি সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেহেতু জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, নাগরিক সুবিধাগুলো এখনও পাচ্ছে না, তাই দুই ভাগে বিভক্ত করলে হয়তো সুযোগ-সুবিধাগুলো আরও নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখছি যে, উভয় সিটি করপোরেশনের মানুষ এখনও অবহেলিত। মৌলিক সেবা এবং সুবিধাগুলো এখনও পাচ্ছেন না তারা। ঘরে বসে ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
×