ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২৪ আগস্ট ২০২০

রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি জোরদার করার জন্য জাতিসংঘ, আইএনজিও এবং সরকারের কাছে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং কোভিড ১৯ ও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যন্ত, আর তাই কক্সবাজারে কর্মরত ৫০ টি স্থানীয় এবং জাতীয় এনজিওর এই নেটওয়ার্কটি রোহিঙ্গা আগমনের তৃতীয় বছর প্রাক্কালে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দাবি জানায়। গত ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারেও সিসিএএনএফ এই দাবিগুলো জানিয়েছিলো। সিসিএনএফ আরও উল্লেখ করে যে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সময় লেগেছিলো ১০ বছর। আগামীকাল যদি ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন শুরুও হয়, তবে তা সম্পন্ন হতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগবে, তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে অলস অবস্থায় রাখা উচিত নয়, তাদের মানবিক মর্যাদার সুবিধার্থে তাদের জন্য সহজে বহন ও স্থানান্তরযোগ্য ঘর, শিক্ষা, উপার্জনমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। সিসিএনএফ রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ, খরচ কমিয়ে আনা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ১১দফা সুপারিশমালার পুনরুল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, সেগুলো হলো: (১) সরকারের নেতৃত্বাধীন একটি একক ব্যবস্থাপনা এবং সকল তহবিল ব্যবস্থাপনার একটি একক চ্যানেল বা মাধ্যম থাকতে হবে। (২) জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে, সরকারের বিকল্প সামান্তরাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয় (৩) রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ ও মানবিক কর্মীদের যাতায়াত খরচ কমিয়ে আনতে এবং কক্সবাজার শহরের উপর চাপ কমাতে ত্রাণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর কার্যালয় টেকনাফ বা উখিয়া স্থানান্তর করা উচিত। (৪) শরণার্থীদের জন্য সহজে স্থানান্তরযোগ্য আবাসন, শিক্ষা এবং আয়বর্ধনমূলক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। (৫) মানবিক এবং ত্রাণ কর্মীদেরকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমোদন দেওয়া উচিৎ, যাতে ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বিশেষত উগ্রপন্থী কোনও কার্যক্রম হতে না পারে। (৬) স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইএসসিজি এবং আরআরসিসি’র সভাগুলোতে এবং জাতীয় টাস্ক ফোর্সে (এনটিএফ) অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। (৭) অর্থ সহায়তার স্বছতা নিশ্চিত করতে হবে, ব্যবস্থাপনা খরচ এবং কর্মসূচির খরচ সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পেতে এ সম্পর্কিত পরিস্কার তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সরাসরি কত খরচ হচ্ছে সে বিষয়ে তথ্য জানা যায় এবং এসব বিষয়ে জনগণের নজরদারি নিশ্চিত হতে পারে। ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৪৪৯ ডলার বরাদ্দ ছিলো এবং সর্বমোট এটি প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দই উল্লেখ করেছেন যে, জাতিসংঘ মোট অর্থের প্রায় ৬৫ শতাংশই খরচ করে তাদের পরিচালন ব্যয় বাবদ। (৮) বিদেশীদের উপর নির্ভরতা কমাতে স্থানীয়দের কাছে কিভাবে প্রযুক্তি-দক্ষতা স্থানান্তরিত করা হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। (৯) স্থানীয় এনজিওদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল (পুলড ফান্ড) গঠন করতে হবে এবং মাঠ পর্যায়ের সকল কার্যক্রম স্থানীয় এনজিওদেরকে দিয়ে করতে হবে। (১০) জাতিসংঘের সমস্ত অঙ্গ সংস্থা এবং আইএনজিওগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য সামনে রেখে অংশীদারিত্ব নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত, অংশীদারিত্বে স্থানীয় এনজিওদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়াকে হতে হবে স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক। ১১) আইএনজিওদের কক্সবাজার এবং বাংলাদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা উচিত নয়, তাদের উচিত তাদের নিজ নিজ দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা। পালস’র নির্বাহী পরিচালক এবং সিসিএনএফ’র কো- চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জেলায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার প্রকল্প শুরু করেছেন, কিন্তু অনেক প্রত্যাশা ইতিমধ্যে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলাটি ইতিমধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি, এবং যোগাযোগের অবকাঠামোর দূরাবস্থাসহ নানা সমস্যায় ভূগছে। আর তাই রোহিঙ্গাদেরকে মায়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার জন আমাদের সরকার, জাতিসংঘ এবং আইএনজিওসহ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে, মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত এবং রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার জন্য অর্থের সংস্থান করা প্রয়োজন। মুক্তি কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এবং সিসিএনএফ’র কো-চেয়ার বিমল চন্দ্র দে বলেন, রোহিঙ্গাদের আগমনের সময় প্রথম কয়েক সপ্তাহ স্থানীয় লোকজন, স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় এনজিওরা মাঠে ছিল, এখন তারা সেখানে প্রান্তিক হয়ে গেছে। স্থানীয়করণ টাস্কফোর্স প্রায় ২৪ মাস আগে গঠিত হয়েছিল, তবে এখনও স্থানীয়করণ বাস্তবায়ন রূপরেখা প্রণয়ন করা যায়নি। স্থানীয় এনজিও, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করা উচিত, যাতে তারা সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান জোরদার করতে পারে। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এবং সিসিএএনএফ’র কো- চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিসিএনএফ কক্সবাজারে মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, স্থানীয় এনজিও, স্থানীয় সংগঠন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাবসনের পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এই স্থানীয় এনজিও এবং স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
×