ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এগুলোকে করের আওতায় আনা প্রয়োজন

সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্থিরতা ছড়ালে ব্যবস্থা ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৬ আগস্ট ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্থিরতা ছড়ালে ব্যবস্থা ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা ছড়ালে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বার্থে এগুলোকে ট্যাক্সেশনের আওতায় আনা প্রয়োজন উল্লেখ করেন। প্রয়োজন হলে আলোচনা করে নতুন আইন করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রথম পুত্র এবং দ্বিতীয় সন্তান শহীদ শেখ কামাল ভাইয়ের জন্মদিন একইসঙ্গে যেমন আনন্দের, তেমনই বেদনার স্মৃতিবাহী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘঠিত হয়েছিল, তখন পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা বঙ্গমাতা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনিও নির্মমভাবে শহীদ হন। বাংলাদেশে হত্যা-খুনের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হোক, এটিই এই পবিত্র জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা। বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী এ সময় সবাইকে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা জানান ও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করেছে, এজন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সমাজে অস্থিতরতা তৈরি, ফেক নিউজ করা, কারও চরিত্র হনন করলে এ ধরনের সার্ভিস প্রোভাইডারদের জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনে আমরা জরিমানা করতে পারি। প্রয়োজনে সেই পদক্ষেপ নেব। আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, প্রয়োজন হলে নতুন আইন করা হবে। তবে প্রচলিত আইনেই যারা সার্ভিস প্রোভাইডার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করে নিয়ে যাবেন, আর ডোমেইন ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তা করবে সেটার জবাবদিহিতা থাকবে না, সেটা তো হতে পারে না। পাশাপাশি সমাজে রাষ্ট্রের অস্থিরতা তৈরি করবে, একে অপরের চরিত্রহনন করবে এবং তরুণ সমাজকে বিপথে পরিচালিত করবে। এজন্য যে ডোমেইন বা সার্ভিস দিচ্ছে তাদের দায় রয়েছে। সেজন্য প্রয়োজনে তাদেরও জরিমানা করা হবে। টিকটক ও লাইকি নিয়ে সমাজে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে সরকার কী করছে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছি। এগুলো কীভাবে আমাদের দেশে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, কীভাবে ট্যাক্সেশনের আওতায় আনা যায়, আমাদের দেশের আইন-কানুন সংস্কৃতি এগুলো যাতে মেনে চলে সেজন্য কী করণীয় সে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট পেশ করবে। সেই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোকে নিয়ম-নীতির মধ্যে আনা। ইতোমধ্যে ব্যবহারকারীদের ট্যাক্সেশনের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যবহার করে তারা ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু তারা যে আমাদের দেশকে ব্যবহার করে টাকা উপার্জন করে নিয়ে যাচ্ছে সেজন্য ইনকাম ট্যাক্স দিচ্ছে না। সেটা দেয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে আইন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বার্থে এগুলোকে ট্যাক্সেশনের আওতায় আনা প্রয়োজন। ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্লাটফরমের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো কিভাবে আমাদের দেশে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন এবং কিভাবে তারা করের আওতায় আসবে এবং আমাদের দেশের আইন, নিয়ম-কানুন, সংস্কৃতি যাতে মেনে চলে, সেজন্য কি করা প্রয়োজন, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছি। সেই কমিটিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং একজন আইনজ্ঞ রয়েছে। তারা যে আমাদের দেশ থেকে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে নিয়ে যাচ্ছে এজন্য তারা আয়কর দিচ্ছে না। এটা অবশ্যই দেয়া প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বার্থেই এগুলোকে করের আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া এই ধরনের সার্ভিস প্রোভাইডার, অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার অথবা ইউটিউব বা অন্যান্য যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে সেগুলো ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি, ফেক নিউজ করা, কারও চরিত্রহনন করা, এই কাজগুলো যে করা হচ্ছে, সেজন্য সার্ভিস প্রোভাইডারকে জরিমানা করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন বিধান রয়েছে, আমাদের দেশেও প্রচলিত আইনে আমরা জরিমানা করতে পারি, আমরা প্রয়োজনে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব, জানান ড. হাছান। আমরা আলাপ আলোচনা করছি, এজন্য যদি নতুন আইনের প্রয়োজন হয়, নতুন আইনও করা হবে। মন্ত্রী বলেন, শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশের এক অনন্য ক্রীড়া সংগঠক যিনি আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন করেছিলেন। সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি সেতার বাজাতেন, গান গাইতেন, ক্রিকেট খেলতেন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে একজন ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিদ, সংস্কৃতিমনা প্রচন্ড সম্ভাবনাময় মানুষকে হারিয়েছে। তার জন্মদিনে আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি, মাগফিরাত কামনা করি। এদিন সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ কামালের সমাধিতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অনলাইন নিউজপোর্টাল নিবন্ধন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই ॥ এ সময় নিবন্ধনের জন্য ৩৪টি অনলাইন নিউজপোর্টালের প্রকাশিত তালিকার পরে আরও তালিকা আসবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনলাইন নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বলেছিলাম যে ঈদের আগে যতদূর সম্ভব আমরা নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচিত অনলাইনগুলোর তালিকা প্রকাশ করব। এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ নেই জানিয়ে ড. হাছান বলেন, দেশে অনেক প্রতিষ্ঠিত এবং ভাল অনলাইনের নাম প্রকাশিত তালিকায় আপনারা পাননি, দেখেননি। আমরা তদন্ত সংস্থাগুলোকে বারবার তাগাদা দিয়েছি এবং দিচ্ছি, যাতে তারা দ্রুত প্রতিবেদন দেয়। কেউ যাতে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়, সেজন্য এই ৩৪টির নাম প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি বিজ্ঞপ্তিও আমরা প্রকাশ করেছিলাম। যাদের ব্যাপারেই তদন্ত সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ইতিবাচক রিপোর্ট আসবে, সবাই নিবন্ধনের সুযোগ পাবে। এ নিয়ে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার কোন কারণ নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসককে তথ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে ধন্যবাদ জানাই যে, একজন মাঠের রাজনীতিবিদকে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করেছেন। তিনি একেবারেই তরুণ বয়স থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি মাঠের কর্মী, সবসময় মাঠেই ছিলেন, সর্বজনশ্রদ্ধেয় ভাল মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। আমি মনে করি যে, তিনি সিটি কর্পোরেশনকে এই ক্রান্তিকালে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার মতো একজন রাজনীতিবিদকে মূল্যায়ন করেছেন। এজন্য আমরা সত্যিই চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই।
×