ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহ্ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

প্রতারক ॥ মানবরূপী ভাইরাস

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৩০ জুলাই ২০২০

প্রতারক ॥ মানবরূপী ভাইরাস

আজকাল টিভি চ্যানেল কিংবা সংবাদ পত্রটা খুললে প্রাণটা আঁৎকে ওঠে। করোনার প্রকোপে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। যারা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তারা কবরের চার দেয়ালে বন্দী। যাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে তারা হাসপাতাল কিংবা ঘরের চার দেয়ালে বন্দী। যাদের এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়নি তারা সর্বদা আতঙ্কিত ও ভীতসন্ত্রস্ত। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের চরম অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশের একশ্রেণীর প্রতারক ও জালিয়াত চক্র নিজেদের সঞ্চয় বৃদ্ধির ধান্ধায় অবৈধ বাণিজ্যিক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে যা অত্যন্ত বিবর্জিত বিবেক ও কলুষিত মানসিকতার পরিচায়ক। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রত্যেকের উচিত ছিল পারস্পরিক সহায়তাপ্রবণ হওয়া। যাতে, খুব দ্রুত এই ভাইরাসটাকে প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন! কোভিড-১৯ কে পুঁজি করে একদল প্রতারক চক্র সর্বদা কিভাবে তাদের অর্থ ভা-ার স্ফীত করা যায় সেই চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত। নকল পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, নকল কেএন-৯৫ মাস্ক, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজন সিলিন্ডারের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি ও করোনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ প্রদানসহ নানান অসাধু উপায় অবলম্বন করেছে প্রতারকরা। এমনকি প্লাজমাদাতা সেজে অসহায় করোনা রোগীদের পরিজনদের থেকে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও নজির পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনদের কাছে এসব প্রতারণা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে। প্রতারকদের এসব প্রতারণার জন্য আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাত ও সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আস্থাহীনতা। আর হওয়াটাও স্বাভাবিক। সম্প্রতি প্রতারক সমাজের রোল মডেল সাহেদ করিমের রিজেন্ট হাসপাতাল ও আরিফ-সাবরিনার জেকেজি হেলথকেয়ারের কোভিড-১৯ ভুয়া সনদ প্রদান বাংলাদেশকে সমালোচিত করেছে গোটা বিশ্বে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা আমাদের দেশকে উপহাস করে খবর প্রকাশিত করেছে। এমনকি ইতালি থেকে আমাদের দেশের বিমান যাত্রীদের ফেরত পাঠানো, বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে কোথাও অনৈতিক প্রতারণা কিংবা জালিয়াতির অভিযোগ আজ পর্যন্ত কর্ণগোচর হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আবির্ভাব হওয়ার পর থেকেই এখন পর্যন্ত নানান প্রতারণা, জালিয়াতি, কেলেঙ্কারি ইত্যাদির খবর হর-হামেশাই শোনা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের লাগামহীন বৃদ্ধির শঙ্কায় যখন সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ঠিক তখনই বিভিন্ন প্রতারক চক্র কিভাবে তাদের আখের গোছানো যায় সেই চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত। যেন করোনা নামক ভাইরাসটি এসেছে তাদের আশীর্বাদ হয়ে। এই অল্প সংখ্যক প্রতারকদের জন্য গোটা বাঙালী জাতি বিশ্বের কাছে ছোট হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতারক, মুনাফালোভীদের দায়ভার গোটা জাতি নিবে কেন? প্রতারক যতই গভীর জলের মাছ হোক না কেন, অতি শীঘ্রই চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করা প্রয়োজন। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে অদূর ভবিষ্যতেও কেউ প্রতারণা, জালিয়াতি করার বিন্দুমাত্র সাহস না পায়। নাহলে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে এদের বিস্তার হবে। কুড়িগ্রাম থেকে
×