ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কে রফতানি হচ্ছে ওয়ালটন কমপ্রেসর

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৭ জুলাই ২০২০

তুরস্কে রফতানি হচ্ছে ওয়ালটন কমপ্রেসর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের পর এবার তুরস্কের মাধ্যমে ইউরেশিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি কমপ্রেসর। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনসি সম্প্রতি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুরস্কে বাংলাদেশী কমপ্রেসরের প্রথম চালানের জাহাজীকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। তুরস্কের কারগি সাওতমা ইসিতম সান নামক একটি বিখ্যাত প্রযুক্তিপণ্য মার্কেটিং কোম্পানি এই কমপ্রেসর আমদানি করছে। এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন কমপ্রেসর প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মীর মুজাহেদীন ইসলাম বলেন, তুরস্কে রফতানির মধ্যদিয়ে আমরা ইউরেশিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তুরস্ক হচ্ছে ই্উরেশিয়ার হাব। ওই অঞ্চলের ইলেকট্রিকার ও ইলেকট্রিনক পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় তুরস্ক থেকে। আর যে প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কমপ্রেসর আমদানি করছে ইউরেশিয়া অঞ্চলে রয়েছে তাদের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক। ফলে তুরস্কের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে পারব বলে আশা করছি। তিনি জানান, নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শুরু থেকেই কম্প্রেসর এবং এর নানা যন্ত্রাংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে ওয়ালটন। কারখানা চালুর পর থেকেই জার্মানভিত্তিক বিশ্বের একটি খ্যাতনামা কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ যন্ত্রাংশ নিচ্ছে। কোম্পানিটি আগামী মাসে আরও তিন কন্টেইনার যন্ত্রাংশ আমদানি করছে। এছাড়াও, ইরাক, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কম্প্রেসর ও এর যন্ত্রাংশ রফতানি করছে ওয়ালটন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ৫০ লাখ পিস কমপ্রেসর রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে। এরমধ্যে আগামী বছর ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ লাখ পিস কমপ্রেসর রফতানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দুটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। এরমধ্যে একটি কোম্পানি ১০ লাখ পিস এবং অপর একটি কোম্পানি ২০ লাখ পিস কমপ্রেসর আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে মীর মুজাহেদীন ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী ফ্রীজ ও এয়ারকন্ডিশন তৈরি কোম্পানিগুলোও আমাদের কমপ্রেসার নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা তাদেরকে আমাদেও উৎপাদিত কমপ্রেসার স্যাম্পল হিসাবে দিয়েছি। সেটা তারা যাচাই করে দেখছে। ওয়ালটন কম্প্রেসরের সিইও প্রকৌশলী মীর মুজাহেদীন ইসলাম বলেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর দক্ষতার সমন্বয়ে আমরা বিশ্বমানের কমপ্রেসর ও এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ উৎপাদন করছি। উৎপাদন পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছি। কমপ্রেসর তৈরির পর তা ব্যবহারের আগে এর নির্ভরযোগ্য পারফরমেন্স নিশ্চিতে আমরা বিভিন্ন টেস্ট করে থাকি। এর মধ্যে একটি টেস্ট হলো অন-অফ টেস্ট। যার মাধ্যমে কমপ্রেসর দীর্ঘমেয়াদে চালু থাকা অবস্থায় এর অন-অফ এ কোনো রকম সমস্যা যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করা। এছাড়া ওয়্যার টেস্ট নামে আরেকটি টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে ক¤েপ্রসরে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ডিউরেবিলিটি পরীক্ষা করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০০ ঘন্টা ধরে ওয়ালটন কমপ্রেসরের ওয়্যার টেস্ট করা হয়। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই ক¤েপ্রসর ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যার ফলে আমরা এখন কমপ্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি দিচ্ছি। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কমপ্রেসার তৈরির কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মহিত জার্মানী উদ্বাবিত প্রযুক্তির এই কমপ্রেসার কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। যা এশিয়ার অষ্টম এবং বিশে^র ১৫তম কমপ্রেসার তৈরির কারখানা। কোম্পানিটির বর্তমান বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ লাখ ইউনিট। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এই উৎপাদন ক্ষমতা এক কোটি ইউনিটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
×