ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চরম সঙ্কটে লক্ষাধিক তাঁতি

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৩ জুলাই ২০২০

চরম সঙ্কটে লক্ষাধিক তাঁতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২২ জুলাই ॥ করোনা ও বন্যার প্রভাবে চরম সঙ্কটে পড়েছে টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প। এ শিল্পের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সম্পৃক্তরা। করেনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁতে কাপড় বানানো বন্ধ ছিল। পরে সীমিত পরিসরে শুরু হলেও বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কারণে শাড়ি বিক্রি না হওয়ায় নতুন করে আর উৎপাদন করছেন না তাঁতিরা। ফলে ৯০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে উৎপাদন কাজ বন্ধ থাকায় তাঁতশিল্পীরা পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশা খুঁজছে। জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে শাড়ি উৎপাদনকারী পরেশ বসাকের বাড়িতে ১৮টি তাঁত ছিল। করোনায় সব বন্ধ রয়েছে। কোন তাঁতে এখনও সুতো (তানা) ঝুলছে। এর মধ্যেই মাকড়সার বাসায় ঘিরে ফেলেছে তাঁতগুলো। এমন চিত্র জেলার কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার উপজেলার চ-ীর তাঁতপল্লীতেও। তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, এ জেলায় ৪১৫১ জনের মোট ৩৪৪০২টি তাঁত রয়েছে। এ পেশায় ১ লাখ ৩২০৬ তাঁত শ্রমিক গত পাঁচ মাসে তারা সকলেই কর্মহীন। তাঁতপল্লী ঘুরে জানা গেছে, করোনার কারণে করটিয়া শাড়ি বিক্রির হাট বন্ধ আর শো-রুমগুলোতে ক্রেতা না থাকায় শাড়ি উৎপাদন করেনি মালিক পক্ষ। এদিকে দীর্ঘ সময় তাঁত বন্ধ থাকায় পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যায় তাঁতশিল্পের শ্রমিকরা। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও এখনও একদিকে ক্রেতাশূন্য অন্যদিকে শ্রমিকের অভাব থাকায় অধিকাংশ তাঁত বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এদিকে চ-ী-পাথরাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার হস্তচালিত তাঁত রয়েছে। এগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার তাঁতি কাজ করেন। এছাড়া পুরো জেলাতে লক্ষাধিক তাঁতি রয়েছে। করোনা ছাড়াও নতুন করে তাঁত এলাকাগুলোতে বন্যার পানির কারণে তাঁতিরা এখন পুরোপুরি কর্মহীন। শাড়ি ব্যবসার জন্য বৈশাখী ও ঈদ-উল-ফিতর দুটি প্রধান মৌসুম। এবার এই দুই উৎসবে কোন শাড়ি বিক্রি হয়নি। তাই নতুন শাড়ি বানানো হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তাঁতিদের ধরে রাখতে না পারলে পরবর্তীতে নতুন শ্রমিকদের কাজ শিখিয়ে এ শিল্পকে ধরে রাখা যাবে না। এজন্য তাঁতশিল্প ও তাঁতিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারী প্রণোদনাসহ সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
×