ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ হোক অনলাইনে

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১৮ জুলাই ২০২০

আনন্দ হোক অনলাইনে

আইটি ডট কম ডেস্ক ॥ করোনাকালে অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি আমরা সবাই। ইন্টারনেট সেই অসহ্য সময়টাকে আনন্দময় করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ঘরবন্দি দশায় রীতিমতো সময় কাটানোতে সঙ্গী। করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন সবাই। সেটাই স্বাভাবিক। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। আতঙ্ক, অহেতুক রাগ বা অবসাদের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যে কোন বিপদ মোকাবেলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস। এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মানুষ আজ ঘরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। দীর্ঘ সময় বাসাতে থাকার কারণে এই যেমন বিরক্ত লাগা, মন খারাপ লাগা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স তথা সাংসারিক বিবাদের পরিমাণ বেড়ে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এই জরুরী সময়ে যাতে পরিবারের মধ্যে এই ধরনের কোন সমস্যা না হয়, সে দিকেও বিশেষ নজর রাখা দরকার। বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ব্যস্ত সময় গঠনমূলকভাবে সময় পার করতে পারেন অনলাইনের নানা মাধ্যমে। প্রযুক্তির এই যুগে নানা ধরনের গেজেট বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসই হোক অবসরের অনুসঙ্গ। মিউজিক বা মুভি দেখুন অনলাইনে ॥ কাজের চাপে আর শোনা বা দেখা হয় না শখের কোন মুভি বা মিউজিক? এখন একটা চমৎকার সময় শখের মুভি বা জনপ্রিয় টিভি সিরিজগুলো দেখে নেয়ার। ভাললাগা সব মিউজিক বা মুভির জন্য অনলাইনে রয়েছে নানা পেইড কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স, হৈচৈ, বায়োস্কোপ, ফ্রি ফ্লিক্স ছাড়াও এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ স্টোরে পাবেন বিভিন্ন মুভি বা মিউজিক অর্গানাইজ প্ল্যাটফর্ম। এসব এ্যাপস ডাউনলোডের আগে অবশ্যই রেটিং এবং ডাউনলোডের সংখ্যা দেখে নেবেন। পাশাপাশি ইউটিউবেও পাবেন দেশী বিদেশী লাখ লাখ ভিডিও ও অডিও কনটেন্ট , যা হতে পারে আপনার অবসরের সঙ্গী। তবে মুভি বাছাইতে অবশ্যই আপনার সঙ্গী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগ ॥ আমাদের তো কত বন্ধুই থাকে। ব্যস্ততার কারণে এদের ক’জনের সঙ্গে আমরা কথা বলি? হয়ত ফেসবুকের বন্ধু তালিকার এক কোনে পড়ে আছে, খবর নেয়া হয় না। ফোনবুকে নম্বর আছে, কল করার সময় হয় না। এখনই সময় পুরনো সম্পর্কগুলোকে ঝালিয়ে নেয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করে তাদের সঙ্গে কথা বলুন। দেখবেন কথা বলে, পুরনো স্মৃতিগুলো এক সঙ্গে হাতড়ালে ভালই লাগবে। কথা বলার জন্য ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ, ভাইবার, ইমো বেশ জনপ্রিয় এ্যাপ্লিকেশন। ভিডিও বা অডিওতে গ্রুপ কলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন সহজেই। বই পড়ুন অনলাইনে ॥ সময় কাটানোর আরেকটি চমৎকার উপায় হলো বই। এক কাপ কফির সঙ্গে একটা ভাল বই আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। এক্ষেত্রেও যেসব বই বেশ বড় সেগুলোকে প্রাধান্য দিতে পারেন। পড়ে ফেলতে পারেন প্রিয় লেখকের কিছু উপন্যাস বা প্রিয় কবির কিছু মহাকাব্য, যার যেটা ভাল লাগে। অনলাইনে পছন্দের বইয়ের পিডিএফ ফরম্যাট পেয়ে যাবে। মোবাইলে বা ট্যাবে ইনস্টল করে নিতে পারেন বই পড়ার নানা এ্যাপসও। মেডিটেশন বা ব্যায়াম শিখুন সাইবার দুনিয়ায় ॥ সব সময়ে যে আপনাকে কোন কিছু উপভোগ করতে হবে এর কোন মানে নেই। নিজের মটিভেশন ও মেধা বৃদ্ধির জন্যও কিছু কাজ করা যেতে পারে। মেডিটেশন তার মধ্যে একটা। এ ছাড়াও লম্বা সময় ঘরে বসে থাকার কারনে শরীরের প্রয়োজনীয় যে মুভমেন্ট সেটা হচ্ছে না। তাই নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এ ছাড়া নারীরা তাদের রূপচর্চা সংক্রান্ত কিছু কাজ করে নিতে পারেন। নিজেকে সুন্দর দেখলে মন মেজাজ এমনিতেই ভাল থাকবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। কিভাবে মেডিটেশন করবেন বা করবেন রূপচর্চা বা শিখবেন সুস্থ থাকার স্বাস্থ্য টিপস ও ব্যায়াম তা জানতে অনলাইনে ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন। সাবক্রাইব করতে পারেন নানা প্রয়োজনীয় ইউটিউব চ্যানেল। লিখতে পারেন ব্লগ ॥ লেখালেখি হতে পারে সময় পার করার অন্যতম সেরা উপায়। অভ্যাস নেই? সমস্যা কি, চেষ্টা করার সময় তো এটাই! আপনার ব্লুগটি হতে পারে করোনাভাইরাস নিয়ে। অথবা আপনি আপনার পছন্দের যে কোন বিষয়েও লিখতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লিখতে পারেন বিভিন্ন বিষয়ে গঠনমূলক ফিচার, বিশ্লেষণও। এ ছাড়া নিজের ব্লুগ পেজ খুলতে পারেন WordPress, Blogger, Medium সহ এ রকম অনেক চমৎকার প্ল্যাটফর্মে যা একদম ফ্রি। পেইন্টিং করুন ডিজিটাল ক্যানভাসে ॥ যাদের এই শখ আছে তারা তো করবেনই। যাদের শখ নাই তাদেরও চেষ্টা করায় কোন দোষ নেই। আঁকানো একটা দারুণ ব্যাপার। আঁকার মাধ্যমে আপনি নিজের একটা জগত তৈরি করব ফেলতে পারেন। রং পেন্সিল নেই? তাতে কি? ল্যাপটপে, ফোনে বা ট্যাবে নামিয়ে নিন প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বা এ্যাপস। ‘লান হাউ টু ড্র অ্যান্ড স্কেচ’ এ্যাপটি থাকলে ছবি আঁকা আর জটিল মনে হবে না। ধাপে ধাপে একটি ছবি আঁকা কমপ্লিট করতে পারবেন। ভিডিও গেমস খেলুন ॥ ভিডিও গেমসের ব্যাপারে যাদের আসক্তি, তাদের এই কথা মনে করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই, জানি। তবে যারা কখনও খেলেননি বা খেলার ইচ্ছা থাকলেও সময় হয় না, তাদের জন্য এটা হতে পারে এক রঙিন সময়। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। আপনার গেমস নিয়ে ব্যস্ততা যেন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিঃসঙ্গ না করে দেয়। অনলাইনে বিভিন্ন গেমস এখন খেলছে তরুণ প্রজন্ম। পাজলভিত্তিক গেমস খেলুন ॥ এই ধরনের খেলাগুলো আপনার মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখবে। এই খেলার সময় চিন্তা-ভাবনা করতে হয়, তাই সময় কিভাবে কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না! তা ছাড়া এটি পরিবারের সবাইকে নিয়ে অংশ নেয়ার মতো একটি খেলা। বিভিন্ন খবরের কাগজে এই পাজলগুলো দেয়া থাকে। এ ছাড়া অনলাইনেও ফ্রি খেলতে পারবেন। ইউটিউব ভিডিও তৈরি করুন ॥ আপনি যেই হোন না কেন, কোন না কোন বিষয়ে আপনি অন্যদের চাইতে ভাল ধারণা রাখেন। যেহেতু আপনি সেই বিষয়ে দক্ষ, সেহেতু আপনি সেই বিষয় অন্যদের শেখাতে পারবেন। এই বিষয়ের ওপর তৈরি করে ফেলতে পারেন কিছু ইউটিউব ভিডিও, চালু করতে পারেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল। এতে আপনার সময়ও ভাল কাটবে, নিজের জানা শোনাগুলোও আরেকটু ঝালাই করে নেয়া হবে। কে কি ভাবল বা আপনাকে যথেষ্ট স্মার্ট দেখাল কিনা, এগুলো ছোটখাটো ব্যাপারে ভাববেন না। ভিডিও এডিটিং না পারলে ফ্লিমওরা সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিখে নিতে পারেন সহজেই। পরিবারকে একান্ত সময় দিন অনলাইনে ॥ সব কাজ দূরে রেখে পরিবারের জন্য সময় বের করুন। তাদের সঙ্গে ভালভাবে কথা বলুন। কারও কোন সমস্যা থাকলে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার এটা একটা মোক্ষম সুযোগ। বাবা, মা সঙ্গে থাকলে সময় দিন। দূরে থাকলে নিয়মিত ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে খোঁজ খবর নিন। আপনার সব থেকে আপনজন কিন্তু আপনার পরিবার।
×