ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দুবাইয়ের হোটেলে ড্যান্স বারের তথ্য ফাঁস

বিএনপি-জামায়াতের পাণ্ডা আজম খান নারী পাচারের পাণ্ডা

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১৬ জুলাই ২০২০

বিএনপি-জামায়াতের পাণ্ডা আজম খান নারী পাচারের পাণ্ডা

শংকর কুমার দে ॥ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার আজম খান দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে শত শত তরুণী-কিশোরী পাচার করেছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় এই অপরাধীর দুবাইয়ে আছে ফাইভ স্টার হোটেল। সেখানে নাচ, গান, পানীয়, অসামাজিক কাজ চলে। দুবাই গেলে আজম খানের হোটেলে উঠেন বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই-এমনটাই দাবি আজম খানের। সম্প্রতি এই কুখ্যাত নারী পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। প্রথমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিল আজম খান। এরপর জামায়াত-শিবিরের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন তিনি। জামায়াত-বিএনপি ঘরানার প্রায় সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে তার। এমনকি দলীয় শীর্ষ নেতারা দুবাই গেলে আজম খানের হোটেলে উঠেন। জিয়া আদর্শ একাডেমি নামের একটি সংগঠন তৈরি করে সেটির কেন্দ্রীয় সভাপতি তিনি। দুবাই থেকে দেশে এলে ওই সংগঠনের ব্যানারে সভা-সমাবেশ করে। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এসব সভা-সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকতেন। অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির হাতে গ্রেফতার আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আজম খানের দেয়া জবানবন্দী, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা গেছে দুবাইয়ের ফরচুন পার্ল হোটেল এ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক এবং বাংলাদেশে নারী পাচারকারী চক্রটির গডফাদার আজম খান। অর্ধশত দালালের মাধ্যমে অল্পবয়সী মেয়েদের অথবা বিশ-বাইশ বছরের তরুণীদের উচ্চ বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করত। বিশ্বস্ততার প্রমাণের জন্য চাকরির আগেই ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হতো। পাশাপাশি দুবাইয়ে যাওয়া-আসার সব খরচও দিত চক্রটি। দালালরা নির্ধারিত দুটি বিদেশী এয়ারলাইন্স এজেন্সির মাধ্যমে তাদের দুবাই পাঠাত। সেখানে যাওয়ার পরে প্রথমে তাদের ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্সবারে নাচতে বাধ্য করা হতো। অন্যথায় শারীরিকভাবে নির্যাতন অথবা বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। দেয়া হতো না কোন খাবার। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন অর্থাৎ প্রস্টিটিউশনে (পতিতাবৃত্তি) বাধ্য করা হতো তাদের। পুলিশের কাছে হস্তগত হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় মঞ্চে আজম খানের একপাশে সাবেক আইনমন্ত্রী এবং অন্যপাশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। একই দাবিতে গত বছরের ৪ মে এক প্রতিবাদসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। এসব ছবি দিয়ে প্রতারণা করে নারী পাচারের কাজে ব্যবহার করত এমন অভিযোগ আজম খানের বিরুদ্ধে। তদন্ত সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা একসময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল এখানকার মানুষ। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল হাজার হাজার বাসিন্দা। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। কিন্তু এলাকার মানুষের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি মনে করে দিয়েছে দুবাইতে নারী পাচারের মূল হোতা ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া আজম খান। কোরবানির পশুর চামড়া, কবরস্থানের গাছ লুট, অপহরণ, নির্যাতন থেকে ছিঁচকে চুরি কিছুই বাদ যায়নি। ২০০০ সালে ওসমান বাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিল আজম খান।
×