ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাজ্যে হাইকোর্টের রায়

ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন হামিদা বেগম

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৬ জুলাই ২০২০

ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন হামিদা বেগম

বিকাশ দত্ত ॥ যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী একজন বাংলাদেশী বিধবা, তার স্বামী মোঃ খলিল মোল্লার অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি মারানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। লন্ডনের হাইকোর্ট শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী ব্রিটিশ কোম্পানি মারান (ইউকে) লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। মোঃ খলিল মোল্লা মারান কোম্পানির একটি সুপার ট্যাঙ্কার বাংলাদেশে অবস্থিত শিপইয়ার্ডে ভেঙ্গে ফেলার সময় ৮তলা সমান উচ্চতা থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণেই এই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে যা মারান কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এই রায়ের ফলে হামিদা বেগম এক লাখ পাউন্ড সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এই জাহাজগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত, এ্যাসবেস্টস এবং রেডিও একটিভ পদার্থে পরিপূর্ণ। শিপইয়ার্ডগুলোতে জাহাজগুলো শ্রমিকদেরকে হাত দিয়ে ভাঙ্গতে হয়, জাহাজগুলো সমুদ্র তীরে নোঙ্গর করা থাকে, কোন ক্রেন দিয়ে আটকান থাকে না। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রিণহীনভাবে যে সমস্ত জাহাজ ভাঙ্গা হচ্ছে তাতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাইকোর্টের রায়ে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের দি গার্ডিয়ান পত্রিকা খলিল মোল্লার মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, খলিল ‘ইকটা’ নামের একটি জাহাজ ভাঙ্গার কাজে চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডে নিয়োজিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের একাধিক রায়ে এই শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নত করা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙ্গার জন্য না নিয়ে আসতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে বেশিরভাগ জাহাজ ভাঙ্গা কোম্পানি এই নিয়ম এবং নির্দেশনা মানছেন না। রায়ে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারক বলেন, মারান ইউকে লিমিটেডের দায়িত্ব ছিল জাহাজ ভাঙ্গার সময় মোঃ খলিল মোল্লার যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। খলিল ‘ইকটা’ নামের একটি জাহাজ ভাঙ্গার কাজে চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডে নিয়োজিত ছিলেন। জাহাজটির ওজন ছিল তিন লাখ টন। এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের দি গার্ডিয়ান পত্রিকা খলিল মোল্লার মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করে। মারান ইউকে গ্রিক একটি শিপিং গ্রুপের মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। এই কোম্পানি ওই জাহাজটির মালিক কিংবা খলিল মোল্লার চাকরিদাতা নন। তবে তারা জাহাজটি বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডে ভাঙ্গার কমিশন প্রদান করেন। গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে বাংলাদেশের শিপিং ইয়ার্ডগুলোতে কাজের পরিবেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিচারপতি তার রায়ে খলিল মোল্লার স্ত্রী হামিদা বেগমের অবহেলাজনিত মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের দাবি নাকচ করেননি। বরং তিনি হামিদা বেগমের আইনজীবীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, মারান ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙ্গতে না পাঠিয়ে অন্য কোন দেশে ভাঙ্গতে পাঠাতে পারতেন যেখানে কর্মপরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু বেশি লাভের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের কথা জানা সত্ত্বেও মারান জাহাজটিকে বাংলাদেশে পাঠায়। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণেই এই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে যা মারান কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এই রায়ের ফলে হামিদা বেগম এক লাখ পাউন্ড সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। হামিদা বেগমের সলিসিটর অলিভার হল্যান্ড এই রায় পাওয়ার পরে বলেন, এই রায়টি হামিদা বেগমের জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক একটি রায়। হামিদা বেগম শুধু যে তার স্বামীকে হারিয়েছেন তা নয় তার জীবনে নিরাপত্তা এবং আয় রোজগারের পথও হারিয়েছেন। তিনি মনে করেন এই রায়ের ফলে যুক্তরাজ্যের জাহাজ কোম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশে জাহাজ ভাঙ্গতে পাঠানোর আগে দুবার ভাববে, কারণ এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ বা ভারত বা পাকিস্তানে কোন শ্রমিক জাহাজ ভাঙ্গতে গিয়ে আহত হলে কিংবা মৃত্যুবরণ করলে তার দায় এই কোম্পানিগুলো এড়াতে পারবে না। এই জাহাজগুলো অত্যন্ত বিষাক্ত, এ্যাসবেস্টস এবং রেডিও একটিভ পদার্থে পরিপূর্ণ। শিপইয়ার্ডগুলোতে জাহাজগুলো শ্রমিকদেরকে হাত দিয়ে ভাঙ্গতে হয়, জাহাজগুলো সমুদ্র তীরে নোঙ্গর করা থাকে, কোন ক্রেন দিয়ে আটকানো থাকে না।
×