ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিনদিনের রিমান্ড

পঙ্কিলতায় পূর্ণ সাবরিনার জীবন

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৪ জুলাই ২০২০

পঙ্কিলতায় পূর্ণ সাবরিনার জীবন

আজাদ সুলায়মান ॥ সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের আলোচিত ছাত্রী সাবরিনার জীবন এতটা পঙ্কিলতাপূর্ণ যেটা কল্পনাতীত ছিল তার সতীর্থদের কাছে। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে চঞ্চলা/উতলা তরুণীর একাধিক প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য কলহপূর্ণ জীবন পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত করোনা প্রতারণায় জেল-হাজতবাসের ঘটনায় বিস্মিত সহপাঠীরা। শিক্ষাজীবনে যার নেশা ছিল মডেল হওয়ার। বাস্তবতার নিরিখে তাকে হতে হয়েছে মানুষের হৃদয় কাটাছেঁড়া করার মতো মহান পেশাদার। এই সাবরিনাকে এখন রিমান্ডে থাকতে হচ্ছে টানা তিনদিন। সোমবার ঢাকার একটি আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রবিবার তেজগাঁও থানায় করোনা প্রতারণায় জিকেজির চেয়ারমান হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে করোনা প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরীক্ষা না করেই করোনার সনদ বিক্রির দায়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজির কেলেঙ্কারি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। দুদক আবারও খতিয়ে দেখবে তার সম্পদ। জানা গেছে, সোমবার ডাঃ সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে চারদিনের রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত প্রাঙ্গণেই সাবরিনার ব্যক্তিগত, পেশাগত ও করোনা প্রতারণার অজানা কাহিনী ফাঁস হতে থাকে ভুক্তভোগীদের মুখে। তাদের কজন আদালতে গিয়েও সাবরিনা দম্পতির বিরুদ্ধে প্রতারণার করুণ কাহিনী শুনিয়েছ্।ে এ ছাড়া গত সপ্তাহে বিদেশ থেকে ফেরৎ কজন থানা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা জেকেজির নকল সনদের শিকার হয়েছেন। তেজগাঁও থানা পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে সাবরিনা দম্পতির নানা কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে। দেশের শীর্ষ হৃদরোগ হাসপাতালের একজন কার্ডিয়াক সার্জনের ব্যক্তিগত জীবন এতটা পঙ্কিল এটা অবিশ্বাস্য ঠেকেছে খোদ তদন্তকারী পুলিশের কাছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই একাধিক বিয়ে, প্রেম, দাম্পত্য কলহ বিচ্ছেদের সব মুখরোচক খবরই এখন ফাঁস হচ্ছে। আলোচিত এই সুন্দরী ও লাস্যময়ী সাবরিনা গ্রেফতারের আগ মুহূতৃ পর্যন্ত হাই প্রোফাইল তদ্বির করেন । কিন্তুু তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে- অনেক অঘটন ঘটন পটিয়সী এই নারী। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার কার্ডিয়াক সার্জন হয়েও তিনি অবলীলায় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। যার নাম জিকেজি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েই তিনি করোনার সুযোগে স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষমহলে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে কাজ বাগিয়ে নেন। সরকারী চাকরি করেও তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ বাগাতেন। আবার মাতিয়ে রাখতেন টেলিভিশনের পর্দা। টক শোর আড়ালে নিজের রূপ যৌবন প্রদর্শনেও ছিলেন বেশ পারঙ্গম। এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ওই হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা কারণে আলোচিত। আল্ট্রা মডার্ন, খোলামেলা পোশাক পরা, কড়া মেকআপ লাগানো ও কথাবার্তায় বলিউড নায়িকাদের মতো ঢং করার মধ্যে দিয়ে সবার নজর কাড়েন। একজন পেশাদার সার্জনের দায়িত্ব পালনের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনকে সবার নজরে আনাই ছিল তার নেশা। শুরুতেই তিনি নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। চিকিৎসক নেতাসহ সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন চিকিৎসক সহকর্মীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এছাড়া সাবরিনার অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খবর মিলেছে। এসব কারণেই আরিফের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। এসব কারণে হাসপাতালেই রটে যায় এই দম্পতির নানা কেলেঙ্কারি। পুলিশের ভাষ্যমতে-সাবরিনা চরম মিথ্যুক। কথায় কথায় তিনি নিজেকে দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে দাবি করতেন। যদিও তা সত্য নয়। আবার আদালত ও পুলিশের কাছেও বার বার দাবি করছেন- তিনি জিকেজির সঙ্গে জড়িত নন। এটি ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন। অথচ টেলিভিশনের টক শোতে পরিচয় দিতেন জিকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে। আবার বলতেন স্বামী আরিফকে তালাক দিয়েছেন। অথচ তিনি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত। আরিফকেও তালাক দিয়েছেন ॥ গ্রেফতারের পর তেজগাঁও থানায় থাকা অবস্থায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাবরিনা। তাকে পেশাগত, দাম্পত্য জীবন ও করোনা সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন-সাবরিনাকে যা কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তার সবই প্রথমে অস্বীকার করেছেন। প্রশ্ন, পাল্টাপ্রশ্ন করায় সাবরিনা এলোমেলো উত্তর দিয়েছেন। তবে তিনি জিকেজির ভুয়া স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন, তা স্বীকার করেছেন। ভুয়া রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে, তাও তিনি জানতেন বলে এক পর্যায়ে স্বীকার করেছেন। ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার চিৎকার-চেঁচামেচিও করেছেন সাবরিনা। এর পরও তাদের সেই কার্যক্রম থামেনি- সেটাও বলেছেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেন, আরিফের সঙ্গে তিনি সংসার করছেন না। জিকেজির সিইও আরিফ চৌধুরী এ মুহূর্তে তার স্বামী নন। তারা বেশ কিছুদিন ধরে আলাদা থাকছেন। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন তিনি। একমাস আগে লেটার পাঠালেও আরও দুই মাস লাগবে ডিভোর্স কার্যকর হতে। জীবনে কোন অনৈতিক কাজ করা তো দূরের কথা, অবৈধ কাজকে তিনি কখনও প্রশ্রয়ও দেননি বলে দাবি করেন। পুলিশের ভাষ্যমতে-এই দম্পতি খুবই ভয়ঙ্কর। তাদের কেউ কারোর চেয়ে কম নয়। যেমন সাহেব তেমনই বিবি। সাবরিনার বর্তমান স্বামী নিজেকে কথায় কথায় প্রভাবশালীর লোক হিসেবে পরিচয় দেন। সাবরিনাকে বিয়ের আগেও তিনি আরও তিনটে বিয়ে করেন। সাবরিনা তার চতুর্থ স্ত্রী। আরিফের দুই স্ত্রী-থাকেন রাশিয়া ও লন্ডনে। আরেক স্ত্রী দেশেই থাকেন। অপর এক স্ত্রীও দূরে আড়ালে-আবডালে। চতুর্থ স্ত্রী হয়েও সাবরিনা তার কাছে পায়নি তেমন মর্যাদা। স্ত্রীকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করত আরিফ। এমনকি স্ত্রীর অধিকার পাবার জন্য স্বামীর পেছনে হন্য হয়ে ছুটছেন। অন্যদিকে স্বামীর চেয়ে এগিয়ে সাবরিনা। কলেজ জীবন থেকেই দ্বিচারিণী সাবরিনার জীবনে রয়েছে অসংখ্য পুরুষের আনাগোনা। বিশেষ করে টেলিভিশনের পর্দায়, টক শোতে তার স্বাস্থ্যজ্ঞানে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য করত। তাতেও পুলকিত হতেন তিনি। অংশ নিতেন চ্যাটে। অথচ আরিফের মতো লোকের কাছেও তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আগের একাধিক বিয়ের তথ্য গোপন করেই সাবরিনাকে বিয়ে করেন আরিফ। সেটার প্রতিশোধ নিতে আরিফ চৌধুরী তাকে একদিন এক চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানো অবস্থায় পেয়েছেন। পরে আরিফের মারধরের শিকার হন ওই চিকিৎসক। এ নিয়ে সাবরিনা শেরেবাংলা থানায় একটি জিডি করেছিলেন। তেজগাঁও থানার পুলিশ সেই জিডির অভিযোগও খতিয়ে দেখছে। গত ২৩ জুন করোনা সনদের প্রতারণায় স্বামী আরিফসহ আরও ১৮ জন গ্রেফতার হবার পর বেরিয়ে আসতে থাকে সাবরিনার অন্ধকার জীবনের কাহিনী। গত রবিবার তাকে গ্রেফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি প্রভাবশালী মহলে হাই প্রোফাইল তদ্বির করিয়েছেন। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে যেতে হয়েছে থানার হাজতে। রাতভর সজাগ ছিলেন ॥ জীবনের প্রথম থানা হাজত বাসের অভিজ্ঞতা নিলেন সাবরিনা। এটা তার জন্য ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরী তেজগাঁও থানার হাজতখানায় সারারাত জেগে ছিলেন। হাজতখানার সামনে একজন নারী প্রহরীর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। ভেতরে পায়চারি করেছেন। বার বার এটা ওটা চেয়েছেন। সেখানকার এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন-থানা হাজতেই তাকে রাখা হয়েছে। আমাদের দু’জন নারী প্রহরী সেখানে ডিউটিতে ছিলেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। আগের দিন রবিবার দুপুরে তাকে গ্রেফতারের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়। এরপর হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী খাবারও দেয়া হয়। কিন্তু সেই খাবার তেমন খেতে পারেননি। ভোরে তিনি আবার ফ্রেশ নাস্তা চান। নাস্তা খাওয়ার পর সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে পুলিশ পাহারায় আদালতে নেয়া হয়। থানায় সাবরিনার স্বজনরা ও একজন গৃহকর্মী ছিলেন। থানা থেকে সরবরাহ খাবারই রাতে খেয়েছেন তিনি। আমাকে কেন ফাঁসানো হচ্ছে ॥ রিমান্ড শুনানি চলাকালে জনাকীর্ণ আদালতে বিচারকের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডাঃ সাবরিনা বলেন,‘ জিকেজির চেয়ারম্যান আমাকে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি জিকেজির চেয়ারম্যান নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি নির্দোষ। আপনারা সব তদন্ত করে দেখেন। আদালতে তাকে সারাক্ষণ কাঁদতে দেখা যায়। তার চোখে-মুখে ছিল অস্থিরতার ছাপ। তার পক্ষে এক আইনজীবী মৌখিকভাবে জামিন চেয়ে সান্ত¦না দিতে থাকেন। শেষেরদিকে গাউন দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে আরও কিছু বলতে থাকেন বিড়বিড়িয়ে। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- আদালতে হাজিরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সাবরিনা বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তেজগাঁও থানা পুলিশের কাছেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আপনারা আগে কাগজ দেখান, তারপর আমার ব্যাখ্যা চান। জয়েন্ট স্টকে আপনারা খবর নেন। আমি কোন কোম্পানির চেয়ারম্যান নই। আমি জিকেজির স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং দিতাম। আমি শুধু ট্রেনিং সেন্টার পর্যন্ত যেতাম। জিকেজির সাইনবোর্ডে তার নামের শেষে আরিফ চৌধুরীর নামের শেষাংশ যুক্ত আছে- এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনও তো হতে পারে এটা আমার আসল নাম না। ফেসবুকীয় নাম। এটা এখনও পরিবর্তন করা হয়নি। দ্রুতই করব। আমি কোন অনৈতিক কাজ করিনি। আজকে কেন জীবনেও করিনি। আমি এ বিষয়ে কনফিডেন্ট। আমি আরিফকে কাজ পাইয়ে দিয়েছি বা দিতাম এগুলো একেবারে মিথ্যা কথা। বরং জিকেজির জাল সনদ তৈরির কথা তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেন। দুদকও দেখবে ॥ ডাঃ সাবরিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। সরকারী চাকরিতে (চিকিৎসক, সার্জারি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত) বহাল থেকে তাঁর স্বামী আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ১৫,৪৬০ টি ভুয়া মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রস্তত ও সরবরাহ করে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগসমূহ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন্ উৎস হতে ডাঃ সাবরিনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সংগ্রহ করে। এসব তথ্য-উপাত্ত সংবলিত অভিযোগ কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হবে। রিজেন্ট জিকেজি দেশের কলঙ্ক ॥ এদিকে করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজি গোটা বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার নামক একটি সংগঠনের নেতারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে বক্তারা বলেন, করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জিকেজি গোটা বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এমন ন্যক্কারজনক ও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ ইতিহাস তৈরি করেছে। সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল ও ডাঃ সাবরিনা দম্পতির জিকেজি হেলথকেয়ার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা না করে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে ভুয়া করোনা রিপোর্ট প্রদান করেছে। এই ঘটনা সম্পূর্ণ প্রতারণা। করোনা মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা কোন্ পর্যায়ে। এখনই সময় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করা। অন্যথায় দেশ আরও বড় বিপদের সম্মুখীন হবে। উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন সাবরিনার স্বামী জিকেজির সিইও আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জন। ঘটনার প্রতিবাদে তার সহযোগীরাও থানায় হামালা চালায়। ওই মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়। এর পর তদন্তে বেরিয়ে আসে সাবরিনার নাম। এই দম্পতি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য তিতুমীর কলেজে ১টি বুথ স্থাপনের অনুমতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ৪০টি বুথ স্থাপন করে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকেও মাঠকর্মী পাঠিয়ে বুথ স্থাপন করে। আবার তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করতেন। আবার অনেককে জিকেজির বুথের ঠিকানা দেয়া হতো। এভাবে কর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। পরে তাদের গুলশানের একটি ভবনের ১৫ তলা অফিসের একটি ল্যাপটপ থেকে ভুয়া সনদ দিত। ওই ল্যাপটপ থেকে জিকেজির কর্মীরা রাতদিন শুধু জাল রিপোর্ট তৈরির কাজ করতেন। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, জিকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়, যা জব্দ করা ল্যাপটপে পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে এই দম্পতির অন্তত ৮ কোটি টাকা এ কায়দায় হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া জেকেজি থেকে করোনা পরীক্ষার জাল সনদ নিয়ে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এতে করে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে জাল পজিটিভ-নেগেটিভ ভুয়া সনদ দেয়া হয়েছে। সত্যিকারের পজিটিজ রোগী পেয়েছে নেগেটিভ সনদ। আর নেগেটিভ রোগী পেয়েছে পজিটিভ সনদ। এতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
×