ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট নেই

৮৩ হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২০, ১৪ জুলাই ২০২০

৮৩ হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানো হচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ৮৩ হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানোর কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসায় জুন ও জুলাইয়ে বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না। সিলিন্ডার দিয়েই সরবরাহ করা হতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ শ্বাসকষ্টে ভোগেন। এজন্য কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক না থাকায় এসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সঙ্কট নেই। অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এমন করোনা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগ নেই। যেসব হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক এখনও স্থাপন করা হয়নি, সেসব হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নতুন যেসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে, সেখানে শুরু থেকেই যাতে এসব জরুরী বিষয় সংযুক্ত রাখা হয়, সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মহাপরিচালক বলেন, সারাদেশে আইসিইউ শয্যা ৩৯৪টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২২৬টিতে এবং খালি আছে ১৬৮টি। অর্থাৎ সাধারণ ও আইসিইউ মিলে রয়েছে মোট ১৫ হাজার ৩৩৯ শয্যা। তার মধ্যে ভর্তি আছেন চার হাজার ৫৮৭ রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১০ হাজার ৭৫২টি। সব হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে মোট ১০ হাজার ২৪০টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা ৮০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৫৫টি। তিনি আরও জানান, ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ছয় হাজার ৩০৫টি। তাতে ভর্তি আছেন দুই হাজার ১৯৯ জন এবং শয্যা খালি আছে চার হাজার ১০৬টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১৪২টি। তাতে ভর্তি আছেন ১০৮ জন এবং খালি আছে ৩৪টি। আর চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৬৫৭টি। এই শয্যায় ভর্তি আছেন ৩১৩ জন এবং খালি আছে ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯টি। তাতে ভর্তি আছেন ১৫ জন এবং ২৪টি খালি রয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৩টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন এবং লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনে সরাসরি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ৩৯টি সরকারী হাসপাতালে জরুরীভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবশিষ্ট ২১টিরও প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক স্মারকে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগী ব্যবস্থাপনার ২৩টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন এবং লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনে সরাসরি ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হলো। আর গত ২ জুন অপর এক স্মারকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গণপূর্ত বিভাগকে ৩৯টি সরকারী হাসপাতালে জরুরীভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এভাবে দুটি স্মারকে অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য উল্লেখিত মোট ৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ২৫টি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ৫টি বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১২টি ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। আরও ২১টি হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের কাজ করবে মন্ত্রণালয়। দুটি স্মারকে যেসব হাসপাতালে ট্যাংক স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে সেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো হলো- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এমএজে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হলো- শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ রসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালগুলো হলো- সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল, মাগুরা জেলা হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, বগুড়া মোহাম্মদ আলী জেনারেল হাসপাতাল, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালগুলো হলো- রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ঝালকাঠি, ঝিনাইদহ এবং লালমনিরহাট। এ ছাড়া ইউনিসেফের সহযোগিতায় আরও ৩০টি হাসপাতালে গ্যাস পাইপলাইন ও অক্সিজেন ট্যাংক বসানো হচ্ছে- পটুয়াখালী, বি. বাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নেয়াখালী, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, শরীয়তপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল। পাবনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ তালিকায় আরও ৯টি হাসপাতাল রয়েছে যেগুলো অন্যান্য তালিকায় বিদ্যমান।
×