ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তিস্তার রুদ্রমূর্তি, দুই পাড়েই রেড এ্যালার্ট

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১৩ জুলাই ২০২০

তিস্তার রুদ্রমূর্তি, দুই পাড়েই রেড এ্যালার্ট

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৮০ হাজার মানুষ। গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এদিকে উজানের ঢলে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তিস্তা। নদীর দুই পাড়েই জারি করা হয়েছে রেড এ্যালার্ট। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে দিয়েও উজানের ঢল সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদিকে পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় ৫০টি চর ও দ্বীপের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বানভাসি মানুষ। এদিকে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। যমুনা তীরের অনেক সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। এদিকে যমুনার পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। যমুনার সব চরে ডুবে গেছে। আর নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও খালিয়াজুড়ির ১২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার এসব তথ্য জানা গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ দুটি নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চরের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ। রবিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেমি, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেমি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নীলফামারী ॥ ভারতের গজলডোবার তিস্তা ব্যারাজও পাহাড়ী ঢল, ভারি বর্ষণের পানির চাপ ধরে রাখতে পারেনি। গজলডোবার জলকপাটগুলো উন্মুক্ত করে প্রতি সেকেন্ডে পানি ছাড়া হয় দুই হাজার ৪৫৭ কিউসেক করে। মাত্র কুড়ি মিনিটে পানি ছাড়া হয় প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ কিউসেক। ফলে ভয়ঙ্কর রূপে গর্জে ওঠে তিস্তা নদী। আর সেই ধেয়ে আসতে শুরু করেছে তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশে। রবিবার দুপুর একটা পর্যন্ত ভারতের দো-মোহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৮৫.৯৫ মিটার) ২৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রবল স্রোতে শোঁ শোঁ শব্দে রাক্ষুসীরূপে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তিস্তা অববাহিকা এলাকা কাঁপিয়ে তুলছে তিস্তা। প্রচন্ডগতির শব্দ তিস্তাপাড়সহ তিস্তা ব্যারাজও কাঁপিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে দিয়েও উজানের ঢল সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে যেন। লালমনিরহাট ॥ রবিবার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষণের কারনে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি চতুর্থ দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী দুটি রুদ্ধমূর্তি ধারণ করেছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর প্রায় ৫০টি চর ও দ্বীপ চরে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েক দফায় পানি উঠায় তারা হতাশা ও নিদারুণ কষ্টে পড়েছে বানভাসি মানুষ। গাইবান্ধা ॥ গত চারদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২৭ সেমি এবং তিস্তা পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘাঘট, কাটাখালি, বাঙালী ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বগুড়া ॥ সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে রবিবার বিকেলে ১৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাঙালী নদীর পানি রবিবার বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। পাউবো জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাঙালীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। উজানী ঢল ও বৃষ্টিপাত দুইই বেড়েছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। সিরাজগঞ্জ ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারি বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত তিনদিনেই কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে ফের বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি এখনও বিপদসীমার ১৩ সেমির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। যমুনার নদীর চরাঞ্চলগুলো দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। আবারও পানিবন্দী হচ্ছে এসব এলাকার মানুষ। এদিকে বন্যার সময়ে নৌকাডুবির ঝুঁকি এড়াতে রবিবার দুপুরে খাজা ইউনুস আলী (র.) ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নৌকার মাঝিদের মধ্যে লাইফ বয়া বিতরণ করা হয়েছে। এনায়েতপুর যমুনার ঘাট হতে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা দ্বিতীয় পর্যায়ে আট মাঝির হাতে ৪৮টি বয়া তুলে দেন। এই সহযোগিতা বিপদে নৌকার যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা পালন করবে বলে মাঝিরা ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নেত্রকোনা ॥ উজানের পাহাড়ী ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে কলমাকান্দা এবং হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ আটটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া খালিয়াজুরী উপজেলাতেও তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা পয়েন্টে পাহাড়ী নদী সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
×