ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সভরেন ওয়েলথ ফান্ড ॥ বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার একমাত্র পথ

প্রকাশিত: ২২:২১, ১৩ জুলাই ২০২০

সভরেন ওয়েলথ ফান্ড ॥ বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার একমাত্র পথ

রহিম শেখ ॥ করোনাভাইরাস মহামারীতে একদিকে সরকারের বিশাল পরিচালন ব্যয়ের যোগান, অন্যদিকে রয়েছে প্রণোদনা প্যাকেজ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের চাপ। এই অবস্থায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অর্থ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে ব্যবহার করতে চায় সরকার। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ ব্যবহারের কৌশল নির্ধারণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে অন্য দেশের অভিজ্ঞতাও। তবে, চীন, সিঙ্গাপুরের মতো পৃথক প্রতিষ্ঠান করে অর্থ ব্যবহার করার পরামর্শ এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার থেকে ঋণ দেয়ার জন্য ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড (এসডব্লিউএফ) বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠন করে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়া যেতে পারে। তবে রিজার্ভ খরচ এবং ঋণের প্রকল্প নির্বাচন দুই ক্ষেত্রেই সতর্ক থাকতে হবে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বিশাল এ বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার দিয়ে মেটানো যাবে ৯ মাসের আমদানি ব্যয়। অথচ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, তিন মাসের মজুদ থাকাই যথেষ্ট। মূলত আমদানি ব্যয় কমে যাওয়া এবং রেমিটেন্স উলম্ফনের কারণে বেড়েছে রিজার্ভ। এমন অবস্থায়, বড় অঙ্কের এ বৈদেশিক মুদ্রা উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতে চায় সরকার। গত সপ্তাহে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ থেকে ঋণের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরে সাংবাদিকদের জানান। মান্নান বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বিদেশীদের কাছ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমাদের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আমরা ঋণ নিতে পারি কি না? বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের পক্ষে এই টাকা সংরক্ষণ করে। ওখান থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি। বিদেশ থেকে আমরা যে সুদে ঋণ আনি তা একটু কম হলেও দেশের টাকা ব্যবহার করলে লাভটা দেশেই থাকবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলেন সরকার প্রধান। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমদানি ব্যয় মেটানোসহ অন্য যে উদ্দেশে রিজার্ভ রাখা হয়, তা যদি পূরণ হয় তাহলে বিনিয়োগের জন্য রিজার্ভ কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে, সব দিক যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে ভিন্নভাবে অর্থায়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে, সব কিছুই বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে। শেষ পর্যন্ত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে পৃথক নীতিমালা করা হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থ অনেকটাই অলস পড়ে থাকে। পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি খরচ মেটানোর অর্থ রেখে সরকার চাইলে বাকিটা উন্নয়ন কাজে খরচ করতে পারে সরকার। তবে রিজার্ভের অর্থ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। কোনভাবেই যাতে অপচয় না হয়, তা দেখেই প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে। এজন্য এমন প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে, যার সুশাসন সর্বোচ্চ মাত্রায় নিশ্চিত হবে, দীর্ঘমেয়াদী হবে এবং নিশ্চিতভাবেই মুনাফা আসবে। মোট কথা তহবিলের অর্থ ফেরত পাওয়াটা যে কোনভাবেই হোক, নিশ্চিত করতে হবে।’ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রিজার্ভ। আগের অর্থবছর, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, বিশাল রিজার্ভ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিদেশীদের আস্থার নির্দেশক। তবে শুধু রিজার্ভ বেশি হলেই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বলার সুযোগ নেই। বেশি রিজার্ভ থাকলে অর্থনৈতিক খাতে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট মোকাবেলা করা যায়। এ জন্য প্রায় প্রতিটি দেশের আপৎকালীন আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয়। বিভিন্ন দেশ রক্ষিত এই রিজার্ভের অর্থের বিপরীতে খুব সামান্যই মুনাফা পায়। নব্বইয়ের দশকে এশিয়া অঞ্চলে সঙ্কট দেখা দিলে থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর রিজার্ভ থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়েছিল। এরপর ১৯৯৬ সালে একটি নীতিমালা করে আইএমএফ। বিশ্বের অনেক দেশ রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করেছে ॥ বিশ্বের যেসব দেশ রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করেছে, তাদের প্রক্রিয়া ছিল ভিন্ন। অর্থাৎ, স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর না করে, পৃথক কোম্পানি খুলে অর্থ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বিদেশী কেনাকাটার দায় মেটানোর কাজে এ অর্থ ব্যবহার হয় বেশি। যেখানে শর্ত ছিল, যে কোন সময় এ অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে। রিজার্ভ ব্যবহার করেছে চীন, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, সিঙ্গাপুর রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করেছে পৃথক কোম্পানির মাধ্যমে। যার নাম সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ করপোরেশন (জিআইসি)। জেআইসি হলো সেই দেশের সরকারের প্রধান বিনিয়োগকারী এজেন্ট। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়াও আলাদা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম কোরিয়ান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন (কেআইসি)। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে ২০ বিলিয়ন ডলারের মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করে। চীনের প্রতিষ্ঠানের নাম সেন্ট্রাল হুইজন ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (সিএইচসি)। দেশটি মূলত ব্যাংকের মূলধন চাহিদা মেটাতে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করে। যার পরিমাণ ৫৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। হংকং এভাবে অর্থ বিনিয়োগ করে। তবে, ভারত রিজার্ভ ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নিলেও পরে তা থেকে সরে এসেছে। দেশটির রিজার্ভ দিয়ে ১৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। ঋণ নেয়ার একমাত্র পথ ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার থেকে ঋণ দেয়ার জন্য ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড (এসডব্লিউএফ) বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এখানে একটাই পথ আছে। আর সেটা হচ্ছে, এসডব্লিউএফ গঠন করা। রিজার্ভ থেকে পাঁচ-সাত বিলিয়ন ডলার নিয়ে এই তহবিল গঠন করা যেতে পারে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণে এ তহবিলের অর্থ খরচ করবে সরকার। এর বাইরে অন্য কোন পথ নেই।’ আহসান মনসুর বলেন, ‘তখন আমরা ৫ বিলিয়ন ডলারের সভরেন ওয়েলথ ফান্ড গঠনের সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সেটা কেন করা হলো না, বুঝতে পারলাম না। তখন রিজার্ভ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার। এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এসডব্লিউএফ গঠন করা যেতেই পারে।’ তিন বছর আগে পর্যালোচনা কমিটি ও তহবিল গঠনের প্রস্তাব হলেও ঋণ নেয়া হয়নি ॥ পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই, তহবিলের কার্যপদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এর সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দিকগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে সদস্য ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, তৎকালীন অর্থ সচিব ও বর্তমানে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীও। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাধারণত মূলত খনিজ সম্পদ এবং উদ্বৃত্ত বাজেটসমৃদ্ধ দেশই এই সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠন করে। কারণ তাদের উদ্বৃত্ত বাজেট হয়। বর্তমানে প্রায় ৪৬টি দেশে এ ধরনের তহবিল আছে। বাংলাদেশে এ তহবিল গঠনের বিষয়ে কমিটি বলেছিল, বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ রফতানিকারক দেশ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রফতানি, প্রবাসীদের প্রেরিত আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রায় নিট ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত রিজার্ভ সৃষ্টি হয়েছে এবং যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ওইসময় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে সাত মাসের অধিক সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এ অবস্থা বিবেচনায় ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর পর রিজার্ভের বাকি অর্থ দিয়ে সরকার এসডব্লিউএফ করতে পারে। তাতে উদ্বৃত্ত রিজার্ভের আকার দাঁড়াবে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালের কমিটি বলেছিল, কেবল সরকারের মেগা প্রকল্পে বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে এ তহবিল থেকে অর্থায়ন করা যেতে পারে। তবে পিপিপি প্রকল্পের ভিজিএফ (ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং) অর্থায়নে এ তহবিল ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া তহবিলের অর্থায়নে প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকল্পের মেয়াদ যাতে দীর্ঘ হয় এবং পুরো সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে মুনাফা পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যতই উচ্চ সামাজিক সুবিধাসম্পন্ন প্রকল্প হোক না কেন, কোনভাবেই সামাজিক অবকাঠামো খাতে এ তহবিলের অর্থ ব্যয় করা উচিত হবে না। তখন কিছু প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০১৬ সালের মার্চে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ডলার চুরি হওয়ার পর সেই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এরপর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিাজর্ভ থেকে প্রতিবছর দুই বিলিয়ন ডলার করে নিয়ে পাঁচ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করা হবে। সরকার জনস্বার্থে এ তহবিল ব্যবহার করতে পারবে। এ টাকা ব্যবহারে পৃথক আইন ও কাঠামো তৈরি হবে। তারপর বোঝা যাবে কত টাকা সুদ হবে। যে কোন জরুরী প্রয়োজনে এ তহবিল ব্যবহার করা যাবে। বিশেষ করে অনেক প্রকল্পে বিদেশী সহায়তা নেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত পূরণে ব্যবহার করা যাবে।’ করোনায় ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ ॥ করোনাকালীন এ সময়ে কত দিনের বা কত মাসের রিজার্ভ রাখলে আমরা স্বস্তিবোধ করব, সেটা আগে চিহ্নিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশ রিজার্ভ রাখে ঝুঁকি মোকাবেলার অস্ত্র হিসেবে। গত অর্থবছরে আমাদের দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। রিজার্ভের উদ্বৃত্ত অর্থ উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে উদ্বৃত্ত রিজার্ভ আছে কি না, যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় যে পরিমাণ রিজার্ভ রাখা প্রয়োজন, তার তুলনায় বেশি আছে কি না? স্বাভাবিক সময়ে পণ্য আমদানি এবং সেবা আমদানি বাবদ ৩ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য রিজার্ভের অর্থ রাখা হয়। কিন্তু করোনাকালীন সঙ্কটে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় কত মাসের জন্য রিজার্ভ রাখা নিরাপদ সেটা আগে ঠিক করতে হবে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিশ্ববাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ৬ থেকে ৮ মাসের জন্য রিজার্ভের অর্থ রাখা প্রয়োজন। এরপরও যদি উদ্বৃত্ত থাকে তবে সেই অর্থ অগ্রাধিকার প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পে ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমে রেকর্ড রিজার্ভের অর্থ উদ্বৃত্ত আছে কি না, সেটা চিহ্নিত করতে হবে। যদি উদ্বৃত্ত থাকে সেক্ষেত্রে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেগুলো শেষ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উপকার হবে এমন উন্নয়ন কাজে এ অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। রিজার্ভ থেকে ঋণ দিতে ২০ কোটি ইউরোর তহবিল গঠন ॥ ইউরো অঞ্চলের আন্তঃব্যাংক সুদহার ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসায় ইউরো মুদ্রায় রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে লোকসান গুনে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় দিন দিন এই লোকসান বাড়ছে। এই লোকসান কাটাতে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ইউরো মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে ইউরো মুদ্রার এই ২০০ মিলিয়ন তহবিলও যুক্ত হবে। দেশে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলো ইউরিবর+১ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এই তহবিলের অর্থ নিতে পারবে। আর গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে তাদের তহবিল ব্যয়ের অতিরিক্ত ১-২ শতাংশ হারে এই অর্থ নিতে পারবেন। ফলে এই তহবিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার হবে ইউরিবর+৩ শতাংশ। পাঁচ থেকে ১০ বছরের মেয়াদে এই ঋণ নেয়া যাবে। তবে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে স্বল্পমেয়াদেও এই ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকবে। শিল্পখাতের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ছাড়াও কাঁচামাল আমদানিতে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যাবে। রফতানির নিমিত্তে আমদানিতেও বায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে এই তহবিলের অর্থ পাওয়া যাবে।
×