ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘করোনা সাহেদের’ জমি প্রতারণা

প্রকাশিত: ২২:২০, ১১ জুলাই ২০২০

‘করোনা সাহেদের’ জমি প্রতারণা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রিজেন্ট হাসপাতালের এমডি সাহেদের চিকিৎসা প্রতারণার সঙ্গে জমি প্রতারণারও তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে অপরের জমি নিজের বলে চালিয়ে দিতে সাইনবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে প্রতারণা করেছে সাহেদ। ওই ছবি নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করে এক ধরনের বাটপারি করেছে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতালে অনুমোদনহীন টেস্ট কিট এবং করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট ব্যবসা করে বহুল আলোচিত সমালোচিত সাহেদের আরেকটি প্রতারণা ধরা পড়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন ইমামের ডেইল এলাকায় সাহেদের তোলা ছবিটি নিয়ে কক্সবাজারবাসীর মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা প্রতারণা করায় এবং ইতালী থেকে বাংলাদেশী লোকজনকে ফেরত পাঠানোর দায় একমাত্র প্রতারক সাহেদের বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। এজন্য সাহেদকে ‘করোনা সাহেদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পর্যটন শহরের বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, গোলাম আকবর খোন্দকারের মালিকানাধীন রিজেন্ট গ্রুপের নামে ক্রয়কৃত খতিয়ানভুক্ত জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন জমির মালিক পক্ষ। প্রতারক সাহেদ ওই জমি নিজের বলে প্রচার করতে রিজেন্ট গ্রুপের টাঙানো সাইনবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে একটা বড় বাটপারির আশ্রয় নিয়েছেন। ওই জমিগুলোর প্রকৃত মালিক রিজেন্ট গ্রুপ তথা গোলাম আকবর খোন্দকার। তথ্যানূসারে দেখা যায়, রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত রিজেন্ট গ্রুপের অফিস ঠিকানা হচ্ছে-ডেল্টা ডালিয়া, কামাল আতা তুর্ক রোড, বনানী, ঢাকা। আর সাহেদের রিজেন্ট অফিস ঠিকানা হচ্ছে- উত্তরা, ঢাকা। সূত্র মতে, গত ২০০৯ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন উখিয়ার ইমামের ডেইল এলাকায় রেজিস্ট্রিমূলে ৮ একর জমি ক্রয় করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খোন্দকারের মালিকানাধীন রিজেন্ট গ্রুপ। রিজেন্ট গ্রুপ নামের ওই কোম্পানিটি ১৯৮৮ সালে রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধনকৃত। ২০১৫ সালের দিকে জনৈক সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপ নামে আরও একটি কোম্পানির আত্মপ্রকাশ করে। পর্যটন শহর কক্সবাজারে পাহাড় ও সমুদ্রের পাশে রিজেন্ট গ্রুপ নামে কোম্পানি কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমির মালিকানার সাইনবোর্ড দেখে হয়তো সাহেদ এখানে প্রতারণার ছক আঁকে। ওই সাইনবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের অক্টোবরে গোলাম আকবর খোন্দকার আইনজীবীর মাধ্যমে সাহেদের বরাবরে লিগ্যাল নোটিস পাঠান। কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপ নাম দিয়ে তার কুকর্মগুলো চালিয়ে যান। স্থানীয় মেরিন ড্রাইভ সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা বলেন, সাহেদ যে কত বড় বাটপার, তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই। আমরা নিজেরাই সাক্ষী ইমামের ডেইলে জমিগুলো কিনেছেন গোলাম আকবর খোন্দকারের রিজেন্ট গ্রুপ। সূত্র আরও জানায়, উত্তরা রিজেন্ট গ্রুপ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হয়তো ওই জমি দখলে নিতে নতুবা ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্টুডিওফ্ল্যাট বিক্রিকল্পে সাইনবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে প্রতারণা করেছেন তিনি। ছবি তুলে ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট ও দাবি করেন এটা তার কোম্পানির সম্পদ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির (আরজেএসসি) রেজিস্ট্রারের সঙ্গে সাহেদের রিজেন্ট গ্রুপ নিবন্ধিত নয়। সচেতন মহল বলেন, বহুরূপী এই প্রতারককে নেপথ্যে থেকে কারা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন? কাদের কারণে বারবার অপকর্ম করেও সে পার পেয়েছে? জেল থেকেও বেরিয়ে কী করে আবারও জড়িয়েছে একই ধরনের প্রতারণায়। এত মামলা আর অভিযোগ নিয়ে প্রতারক সাহেদ সমাজের মূল স্রোতধারায় যেভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন, এবং করোনা হাসপাতাল হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাতে দেশের মানুষ বিস্মিত। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছেন। তার কারণে ইতালীসহ সারাবিশ্বে বাংলাদেশে সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী এবং দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল সাহেদের। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সাহেদ করিম অল্পদিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। সাহেদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের ছবি যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে, তেমনি বিএনপি আমলের কয়েকজন হোমড়া চোমড়ার সঙ্গেও তার ছবি আর পেপার ক্লিপিং বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। চার দলীয় জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা থাকালীন বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় নেতার বিশ্বস্ত ছিলেন বাটপার সাহেদ। উল্লেখ্য, নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দিয়ে এসব অভিযোগে সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‌্যাব। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ।
×