ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত

ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১০ জুলাই ২০২০

ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার গাড়ি কেনার নিষেধজ্ঞা জারি করেছে সরকার। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রাজস্ব আহরণে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়। বিপরীতে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যয় বেড়েছে সরকারের। সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে গত বুধবার একটি পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয়, বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সকল প্রকার নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। জানা গেছে, একই দিন চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যয় না করলেই নয়, এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে এমন সব নির্দেশনা দিয়ে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পরিপত্র পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীভুক্ত প্রকল্পসমূহের উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীভুক্ত প্রকল্পসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর বা সংস্থাসমূহ উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহ যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে। মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে; মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর বা সংস্থাসমূহ স্বীয় বিবেচনায় সেসব খাতে অর্থ ব্যয় করবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় পরিহার করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে। প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮-সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ পরিপত্র অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায়ের বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে (সংশোধিত) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম আহরিত হবে বলে জানা গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে সরকার। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারীতে রাজস্ব আদায়ের নাজুক পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট দুই লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এ সময়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় কম হয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কমেছে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। আগের অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে আদায় হয়েছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ বছরের জন্য ব্যয় কমানোর পলিসিটা ঠিক আছে। তবে ব্যয় কমানোটা কোন সমাধান হতে পারে না। বরং রাজস্ব বাড়িয়ে ব্যয় বাড়ানোর শক্তি অর্জনটাই মূল কথা। কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সরকারের তেমন কোন পরিকল্পনাও দেখছি না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এডিপির আওতায় যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হচ্ছে ঋণের টাকায়। যদি আমরা রাজস্ব না বাড়াতে পারি তাহলে আগামীতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও দিতে হবে ঋণের টাকায়। তাই সরকারকে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়ার তাগিদ দেন এ অর্থনীতিবিদ।
×