ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১০ জুলাই ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ এন্ড্রু কিশোরের জন্য মন বড় কাঁদছে। সারাদেশের মতো শোক করছে রাজধানী ঢাকা। এ শহরেই ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন শিল্পী। তারপর বিদায়। শহর থেকে নয় শুধু, পৃথিবী থেকে। এক কদম দু কদম উল্টো হেঁটে সবার চোখের সামনে দিয়ে যেন চলে গেলেন তিনি। আহা বেদনা! এন্ড্রু কিশোর বলেই বেদনাটুকু আলাদা করে অনুভূত হচ্ছে। না, ভক্ত অনুরাগীদের কেউ চোখ ভিজিয়ে কাঁদছেন না। মাতম করছেন না। তবে ভেতরের হাহাকারটুকু পরিষ্কার। প্রকৃতই কষ্ট পাচ্ছেন শ্রোতা। কোন তারকা শিল্পী প্রয়াত হলেই আমরা তাকে ‘স¤্রাট’ বলতে ভালবাসি। অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রকৃত শব্দ খুঁজে বের করতে না পারার ব্যর্থতা এই শব্দ দিয়ে ঢাকার চেষ্টা হয়। এন্ড্রু কিশোরের বেলায়ও কেউ কেউ চর্বিত চর্বন করে বলছেন, ‘প্লেব্যাক স¤্রাট।’ আসলে বহু ব্যবহারে অর্থ বদলে যাওয়া এইসব বচন এন্ড্রু কিশোরকে রিপ্রেজেন্ট করে না। তারকা অনেকে হন, নাম কুড়ান, এন্ড্রু কিশোর হয়ে উঠতে পারেন খুব কম জন। প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে স্পর্শাতীত উচ্চতায় আসীন হয়েছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রের কোন গানটি নিজের অজান্তে গুনগুন করে গান আপনি? কার গান শুনে আবেগে ভালবাসায় মন ভরে ওঠে? এমন যে কোন প্রশ্নের উত্তরে এন্ড্রু কিশোর নামটি ওঠে আসবে। আসবেই। ভাবতে অবাক লাগে, কোন চটুল গান তিনি করেননি। স্ক্যান্ডালে জড়াননি। এই নারীর সঙ্গে প্রেম, সেই নারীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির খবরে শিরোনাম হননি। পত্রিকার পাতায় ছবি ছাপানো বা টেলিভিশনে ঘন ঘন ইন্টারভিউ ছাড়াই গানটা নিয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। এন্ড্রু কিশোর নামটি সবার জানা থাকলেও, গায়ককে বহুকাল কেউ তেমন দেখতে পাননি। ব্যক্তিগত প্রচার প্রপাগান্ডা এড়িয়ে শুধু সঙ্গীতের সাধনায় নিজেকে সপে দিয়েছিলেন শিল্পী। কণ্ঠের মাধুর্য আর স্বতন্ত্র গায়কী দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না, তুমি আজ কথা দিয়েছ, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, আমার গরুর গাড়িতে, তোমায় দেখলে মনে হয়, পড়ে না চোখের পলক, বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে, চাঁদের সঙ্গে আমি দেব না তোমার তুলনা...। তালিকা শেষ হওয়ার মতো নয়। এইসব গানের মাঝেই আজ হারিয়েছেন গায়ক। তাকে ফেরানোর চেষ্টাটি সম্পর্কেও কিছু বলা প্রয়োজন। ক্যান্সার আক্রান্ত গায়ককে বাঁচাতে যথারীতি এগিয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন সরকারপ্রধান সত্যি বিরল। বিপুল অর্থ খরচ করে গায়কের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। বাঁচানো যায়নি শেষতক। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের একজন ক্ষণজন্মা শিল্পীকে যে সম্মান দেখানো হয় তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর যে কথাটি না বললেই নয় সেটি হচ্ছে, অপারগ শিল্পীকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নেয়ায় নিষ্ঠুর সমালোচনা সইতে হয়েছিল। এই সমালোচকরা কি আজ একটু লজ্জিত হবে? নিজের ক্ষুদ্রতা ঘোচানোর কোন চেষ্টা কি তারা করবেন? গতানুগতিক আলোচনার বাইরে এ আলোচনাগুলোও এখন হচ্ছে। অন্য প্রসঙ্গ। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বৈ কমছে না। এ অবস্থায় সব কিছুই তছনছ হওয়ার পথে। আরও অনেকের মতো বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব কয়েক মাস ধরে বন্ধ। এ অবস্থায় নতুন একটি পদক্ষেপ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে ঘরে বসে ডিজিটাল ক্লাস করছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম দিকে ঢাকার বেসরকারী কিছু স্কুল বিচ্ছিন্নভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বর্তমানে সরকারীভাবে বৃহৎ পরিসরে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি স্বতন্ত্র চ্যানেল থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমেও চলছে এ কার্যক্রম। নতুন পদ্ধতি হলেও, ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীরা সহসাই এর সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করতে পেরেছে। এখন ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা টেলিভিশন কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ক্লাস করছে। গত ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভি ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ক্লাস করছে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। দক্ষ শ্রেণীশিক্ষকদের ক্লাসসমূহের ভিডিও ধারণ করে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা টিভি সেটের সামনে বসে প্রস্তুত করছে নিজেকে। সকাল ৯টায় শুরু হচ্ছে ক্লাস। বেলা ১২টা পর্যন্ত আটটি বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাসগুলো পুনঃপ্রচার করা হয়। শ্রেণীশিক্ষক ক্লাস শেষে বাড়িতে শিক্ষার্থীর করণীয় নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করছে। স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেয়া হবে খাতাগুলো। বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ডিজিটাল এই ক্লাস নিয়ে বেশ ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে ঢাকার শিক্ষার্থীদের। এক ধরনের চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাজধানীর ঘরে ঘরে। ঘুম থেকে ওঠেই টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সামনে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ছে ছেলে মেয়েরা। তদারকির কাজে ব্যস্ত বাবা মা। এমন ছবি আগে দেখা যায়নি বললেই চলে। একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, বিষয়টি নিয়ে এখন তারা খুব সিরিয়াস। লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি করোনাকালের হতাশা কিছুটা হলেও কাটছে এই পদ্ধতির পাঠদানে।
×