ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষায়ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১০ জুলাই ২০২০

বর্ষায়ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাতেকলমে এবার বর্ষা এসেছিল জুনের প্রথম দিকেই। বর্ষায় প্রথম থেকেই সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হলেও ধারাবাহিকতা এখন আর নেই। বিশেষ করে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। বৃষ্টির বদলে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসীর জীবন। গরম থেকে মুক্তি যেন মিলছেই না ঘোর এই বর্ষাতেও। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কিছু এলাকা থেকে বৃষ্টির খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু যেভাবে সক্রিয় হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। ফলে বাতাসে লঘুচাপের প্রভাব বাড়ছে। এ কারণেই মূলত ঢাকাসহ রাজশাহী খুলনা ফরিদপুর কুমিল্লা অঞ্চলে এবার বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। উল্টো বাড়ছে গরমের মাত্রা। ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না থাকার কারণে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে এবার মুক্তিই পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী। তারা জানান বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে ভ্যাপসা গরম আর প্রচন্ড রোদের ধারাবাহিকতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এবার জুনের ৭ তারিখে বর্ষা বা মৌসুমি বায়ু দেশের ভেতরে প্রবেশ করে। বর্ষা আসার আগ থেকে সারাদেশে প্রাক বর্ষায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আমফান চলে যাওয়ার পর থেকে বৃষ্টির ধারাবাহিকতা শুরু হয়। বর্ষার আগমনের পর পর এই ধারা কিছুদিন অব্যাহত ছিল। আবহাওয়া অফিস জানায়, মাঝে মধ্যে মৌসুমি বায়ু দেশের উত্তরের দিকে বেশ সক্রিয় হয়ে পড়ছে। ঝরছে ভারি বৃষ্টি। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টির এই প্রবণতা এবার সারাদেশে সমান হচ্ছে না। অঞ্চল বিশেষে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে। ফলে বাকি অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি না থাকায় গরমের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে সেন্ট্রাল পার্ট বিশেষ করে ঢাকা টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ফরিদপুর কুষ্টিয়া খুলনা ঢাকায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না থাকায় বাতাসে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব বাড়ছে। ফলে এসব এলাকায় বর্ষার শুরু থেকেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেক কম। এর বদলে প্রচ- রোদ আর ভ্যাপসা গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি জানান, রাজধানীতে এই ধারাবাহিকতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া দেশের মধ্যে মৌসুমি বায়ু মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও সারাদেশে এক সঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে না। ফলে দেশের কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবার কোথাও বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকার কারণে পশ্চিমা লঘুচাপের আধিক্য বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করেন। ্আবহাওয়াবিদরা জানান, এই সময়ে বাতাসে জলীয় কণার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ফলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বৃষ্টিপাত না হলে এই জলীয় কণা আরও অধিক গরম হয়ে ভ্যাপসা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এছাড়া এই সময়ে দিনের ভাগের পরিধি প্রায় ১৪ ঘণ্টা। এ কারণে গরমের মাত্রাটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তবে তারা জানান, আষাঢ়ে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। আষাঢ়ে কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হলে গরমের মাত্রা এমনিতেই বেড়ে যায়। আষাঢ় মাস বৃষ্টির সময়। সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টি হলো আষাঢ়ের বৈশিষ্ট্য। কোন কারণে আষাঢ়ে বৃষ্টিপাত না হলে গরমের মাত্রাটা এমনিতেই বেড়ে যায়। তার সঙ্গে জলীয় কণা গরম হয়ে এই মাত্রা অসহনীয় করে তোলে। দিনের পরিধি সবচেয়ে বেশি থাকায় বৃষ্টি না থাকলে সূর্যের কিরণ খাড়াভাবে এসে লাগে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। ফলে রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে তারা জানায়। সেইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
×