ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘমেয়াদী বন্যার শঙ্কা

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১০ জুলাই ২০২০

দীর্ঘমেয়াদী বন্যার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুদিন কমতে না কমতেই সব নদ-নদীর পানি আবারও স্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় দেশের সব প্রধান নদীর পানি আবারও দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ নদীর পানি সমতল আবারও দ্রুত বাড়তে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি দ্রুতই অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এই দফায় দেশের প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে। এবারের বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন আগামীকাল থেকে দেশের সব নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যাবে। দেশের ২৩ জেলা বন্যার কবলে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি মধ্যমেয়াদী রূপ নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী বন্যা দুসপ্তাহ স্থায়ী হলে সেটাকে মধ্যমেয়াদী বন্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গত ২৬ জুন উত্তরের বেশ কিছু জেলায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। পানি বাড়ার কমার মধ্যে দিয়ে বন্যার স্থিতি এর মধ্যে ২ সপ্তাহ পার হতে যাচ্ছে। তারা জানিয়েছে ১৪ দিন ধরে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১১টি জেলায় বন্যা কবলিত। গত ৭ জুলাই থেকে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করে। এর মধ্যে আবারও আভাস দেয়া হয়েছে আগামীকাল থেকে দেশের প্রধান নদীর পানি আবারও দ্রুত বাড়তে পারে। ফলে এই দফায় পানি বৃদ্ধি যোগ হলে নিশ্চিত দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান সাধারণ বন্যা পরিস্থিতি ৩ সপ্তাহ পার হলেও সেটাকে দীর্ঘমেয়াদী বলা হয়। এর আগে গত ১৯৮৮ এব! ৯৮ সালে দেশে প্রায় এক মাসের অধিক সময় ধরে বন্যা কবলিত ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান দেশের সব নদ নদীর পানি এক সঙ্গে বাড়তে শুরু করলে সে বছর বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। পরিধি এবং স্থিতি ও দীর্ঘ হয়ে পড়ে। এ বছর আগ থেকেই এ ধরনের বন্যার আভাস রয়েছে। জুনের প্রথম দেশের প্রধান নদী যমুনায় অস্বাভাবিক পানি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়তে শুরু করে তিস্তা এবং পদ্মা নদীর পানি। ফলে স্বাভাবিক সময়ের আগেই উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। তারা জানায় দেশে সাধারণ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে এক দফায় বন্যার কবলে পড়ে। এরপর মধ্যাঞ্চল হয়ে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে পানি মেনে যাওয়ার সময়। পরে আগস্টে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আরও এক দফার বন্যা কবলে পড়ে। কিন্তু এবার প্রধান তিন নদীর পানি এক সঙ্গেই বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক আবহাওয়া মডেলের তথ্য অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে এ সময় উত্তরাঞ্চলের এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ নদীর পানি সমতল দ্রুত বাড়তে পারে। ২৩ জেলার মানুষ বন্যাকবলিত হবে- ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ॥ এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে নতুন করে ২৩ জেলায় বন্যা দেখা দেবে। বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জনান। দেশের মধ্যে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। গত ২৬ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ছিল এ বন্যা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে যে সতর্কীকরণ করা হয়েছে, এতে বলা হয়েছে, ১১ জুলাই থেকে পানি বাড়বে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়বে। সেটা এবার ২৩টি জেলায় বিস্তৃতি লাভ করবে। ২৩ জেলার মানুষ বন্যাকবলিত হবে। বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে। এজন্য আমরা প্রত্যেক জেলায় ২০০ টন চাল, ৫ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা শিশুখাদ্যের জন্য, ২ লাখ টাকা গবাদি পশুর জন্য এবং ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট গতকালই আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। যাতে পানি বাড়লেও মাঠ প্রশাসন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেন জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারে।
×