ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু

অধস্তনদের ওপর দায় চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা নির্বাহীদের ॥ বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৫ জুলাই ২০২০

অধস্তনদের ওপর দায় চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা নির্বাহীদের ॥ বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার মধ্যে গ্রাহক হয়রানিকারীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া শুরু করেছে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সূত্র বলছে, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পাশাপাশি কর্মস্থল পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয়া হয়েছে। বিতরণ কোম্পানি বলছে শাস্তি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের বিলও ঠিক করে দিয়েছে বিতরণ কোম্পানি। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পরপর তিন মাস সারাদেশের গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। যাতে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে বিদ্যুত বিভাগ। সেই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হলো। আজ রবিবার সরকার গঠিত টাস্কফোর্স বিদ্যুত বিভগে প্রতিবেদন জমা দেবে। দুপুর ১টায় এ বিষয়ে একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে বিদ্যুত বিভাগ। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন দেয়ার আগেই পৃথকভাবে বিতরণ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। পৃথকভাবে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো ব্যবস্থা নিয়ে শনিবার তা বিদ্যুত বিভাগকে অবহিত করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা ছাড়াই কি করে এমনভাবে ঢালাওভাবে ওভার বিলিং হয় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে এভাবে ওভার বিলিং করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন এসে সব দায় ছোট ছোট কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে নির্বাহীরা বাঁচার চেষ্টা করছেন। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পনি (ডিপিডিসি) চার কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখস্ত করেছে। এদের মধ্যে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন। এছাড়া একজন করে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী এবং ডাটা এন্ট্রি সমন্বয়কারী রয়েছেন। এছাড়া অতিরিক্ত বিলের জন্য ৩৬টি নেটওয়ার্ক অপারেশন এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস (এনওসি) কার্যালয়ের প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ডিপিডিসি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে এখন বিতরণ কোম্পানির বিলিং হয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে। ঠিকাদারদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রিডিং এনে বিল করে তা আবার পৌঁছেও দেন। বিতরণ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা শুধু এসব বিষয় তদারকি করেন। ঠিকাদাররা কেন এমন করে কাজ করল জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদাররা কাজে ফাঁকি দেয়। সাধারণত যে জনবল নিয়োগ করার কথা তা তারা কখনোই করে না। শুধু করোনা নয় অন্য সময়ও ঠিকমতো মিটার দেখে বিল না করার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। গ্রাহককে পরপর দুই মাসে একই পরিমাণ বিল দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাস্টমার সাপোর্ট সার্ভিস (সিএসএস) ঠিকাদারদের ১৩ জন মিটার রিডার, একজন সুপার ভাইজারসহ মোট ১৪ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল করারও সুপারিশ করা হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক এটিএম হারুন অর রশীদ জনকণ্ঠকে বলেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে যারাই অভিযোগ করেছেন সকলের বিল ঠিক করে দিয়েছি। একই সঙ্গে ডিপডিসির গঠিত তদন্ত কমিটি শুক্রবার প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটি চারজনকে সাময়িক বরখস্ত, ৩৬টি এনওসির নির্বাহীদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। সে সঙ্গে সিএসএস এর ১৪ জনের নিয়োগ বাতিল এবং ১০ জনকে বদলি করেছে। তিনি জানেন ভবিষ্যতে যাতে কোন গ্রাহক আর এমন হয়রানির শিকার না হয় এজন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জানতে চাইলে আরইবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা আজকেও এসব বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছি। আমরা দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এজন্য পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএমদের দায়ী ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। আরইবি সূত্র বলছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীন সমিতিগুলো বিদ্যুত বিতরণ এবং বিল আদায় করে। প্রতিটি সমিতিই আলাদা ভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি সমিতির হিসেবও আলাদা। সঙ্গত কারণে আরইবি সমিতিগুলোতে দায়ী ব্যক্তিদের বের করে দিতে বললেও তারা তা দিচ্ছে না। বরং সমিতির জেনারেল ম্যানেজাররা দায়ী ব্যক্তিদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করছে। এজন্য শনিবার বিকেলে আরইবি থেকে বলা হয়েছে রবিবার সকালের মধ্যে দায়ীদের নামের তালিকা না পাঠালে জেনারেল ম্যানেজাররা দায়ী বলে ধরে নেবে আরইবি। এদিকে সব থেকে বেশি ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ আসা নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বলছে তারা সব বিল ঠিক করে দিয়েছে। আর দুএকজনকে বদলি করেই আপাতত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিষ্ঠানটি উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ করে। জানতে চাইলে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বিল বেশি আসার প্রেক্ষিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। একই সঙ্গে যাদের অতিরিক্ত বিল এসেছে তাদের সকলের বিল ঠিক করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দায়ী দুজনকে আমরা বদলি করেছি। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোডিকো) শনিবার গ্রাহকদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করেছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিক উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ২২৩ কর্মকর্মা কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছি। জানতে চেয়েছি কেন এভাবে গ্রাহককে অতিরিক্ত বিল দেয়া হলো। তিনি বলেন, আমাদের ৫৫৬ জনের অতিরিক্ত বিল এসেছে। আমরা গ্রাহকদের অনলাইন বৈঠকে বলেছি কারও কোন সমস্যা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরা বিলগুলো ঠিক করে দেব। আর যে ৫৫৬ জনের অতিরিক্ত বিল এসেছে সকলের বিল ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি ডেসকো বলছে তারা ইতোমধ্যে অভিযোগ পাওয়া সব বিল ঠিক করে দিয়েছে। একই কথা বলছে পিডিবি। তারাও বলছে খুব বেশি অতিরিক্ত বিল করা হয়নি পিডিবির গ্রাহকদের। দুই প্রতিষ্ঠান কারো বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
×