ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় পিসিআর ল্যাব না থাকায় দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে না রোগী

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৩০ জুন ২০২০

নওগাঁয় পিসিআর ল্যাব না থাকায় দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে না রোগী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ দেশের সীমান্তবর্তী বৃহত্তর জেলা নওগাঁয় প্রায় ৩০ লাখ লোকের বসবাস। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে করোনা সংক্রমণে ইতোমধ্যে হটস্পটে পরিণত হয়েছে এই জেলা। প্রতিদিনই এখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সচেতন মহলের দাবি জেলায় করোনা পরীক্ষায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় দ্রুত শনাক্ত করা যাচ্ছে না রোগী। ফলে সংক্রামণের হার দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় রয়েছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল আর ১৮ সালে স্থাপন করা হয়েছে নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজ। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে আধুনিক সদর হাসপাতালে সম্ভাব্য রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে প্রথম দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকায় । ফলে রিপোর্ট আসতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ দিন। লক্ষণবিহীন করোনায় আক্রান্ত রোগী নমুনা দিয়ে মনের অজান্তেই হরহামেশাই ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নতুন করে সংক্রামিত করছে অন্যান্য ব্যক্তিদের। এদিকে নওগাঁয় প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোন কোন দিন সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। এছাড়া বেসরকারি ভাবে নওগাঁর আর কোথাও করোনা পরীক্ষার কেন্দ্র না থাকায় সদর হাসপাতালে এসে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করে করোনা ভাইরাসের নমুনা দিতে হচ্ছে। আর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। জেলার ১১টি উপজেলার পাশাপাশি বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অধিকাংশ মানুষই চলাচল করে নওগাঁয়। অন্যদিকে বগুড়া ও রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার কেন্দ্র থাকলেও সেগুলোতে পরীক্ষার অনেক চাপ থাকার কারণে নওগাঁর নমুনা গুলো স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ নওগাঁয় যদি করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র থাকতো তাহলে মানুষ সহজেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলাফল জানতে পারতো। আর সঙ্গে সঙ্গেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিরোধমূলক জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। এতে করে করোনা সংক্রামণ উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমতো। অপরদিকে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে নওগাঁয় দ্রুত করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রামণের প্রথম থেকেই নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচী, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। নওগাঁ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী জানান, করোনা সংক্রামণের প্রথম থেকেই আমরা নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের জন্য শান্তিপূর্ন আন্দোলন চালিয়ে আসছি। করোনা নামক এই মরনঘাতি রোগ থেকে নওগাঁর আপামর মানুষকে বাঁচাতে হলে দ্রুত নওগাঁয় পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মনজুর-এ-মুর্শেদ জানান, নওগাঁয় পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে করোনা রোগীর জন্য অক্সিজেন খুবই প্রয়োজনীয় বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর নওগাঁয় কেন্দ্রীয় ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছে। তবুও আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: হারুন-অর-রশিদ বলেন, মাননীয় খাদ্যমন্ত্রীর ডিও লেটারসহ আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নওগাঁয় দ্রুত পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপনের জন্য লিখিত ভাবে আবেদন করেছি। এছাড়াও এই বিষয়ে আমরা সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সরকার দ্রুত নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব ও আইসিইউ স্থাপন করে লাখ লাখ মানুষকে করোনা নামক মরনঘাতক ব্যধির সংক্রামনের হাত থেকে ৩২ লাখ মানুষকে রক্ষা করবেন এমনটিই আশা নওগাঁবাসীর।
×