এশিয়ার পরমাণু সমৃদ্ধ দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই রবিবার চীনের সঙ্গে একটি সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দিয়েছে নেপাল। কাঠমান্ডুর দাবি, বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যের স্বার্থে সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে। এদিকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেছেন, তার সরকার উৎখাতের জন্য ভারতে বৈঠক হচ্ছে। রবিবার নেপালের সাবেক কমিউনিস্ট নেতা মদন ভান্ডাডারির ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের সরকারী বাসভবনে এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন। ওলি বলেন, তার সরকারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। উৎখাতের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। খবর কাঠমান্ডু পোস্ট, দ্য হিন্দু ও আলজাজিরা অনলাইনের।
সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিল্লী থেকে খবর আসছে। সংবিধান সংশোধন করে দেশের নতুন মানচিত্র গ্রহণ করায় ভারতে এই বৈঠকগুলো আয়োজিত হচ্ছে।
এমন সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রী তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের কথা তুললেন যখন তার পদত্যাগের দাবি নিজ দলের ভেতরেই জোরালো হচ্ছে। নেপালে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কাঠমান্ডুতে এখন কমিউনিস্ট পার্টির যে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলছে, সেখানে ওলি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং এই বৈঠকেই তার অপসারণের পথ প্রশস্ত হতে পারে। সাবেক মাওবাদী নেতা ও বর্তমানে নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় প্রধান পুষ্প কমল দাহাল ওরফের প্রচন্ড এ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেপালের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দেশটির সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী ১৩ জুন সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এতে নতুন মানচিত্র গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে বিতর্কিত লিমপিয়াধুরা-কালাপানি-লিপুলেখ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারত এই এলাকাগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে। ১৮ জুন বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবি ভান্ডারি। এ প্রসঙ্গে রবিবার ওলি বলেন, নেপালের ভূখণ্ড চিহ্নিত করায় খুশি হয়নি ভারত। আমাদের জাতীয়তাবাদ এত দুর্বল নয়। আমরা আমাদের মানচিত্র পরিবর্তন করেছি এবং এখন যদি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে গদিচ্যুত করা হয় তাহলে নেপালের কাছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ভারতে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ মনে করছে নেপালের নতুন মানচিত্র গ্রহণ করা অপরাধ। আপনারা হয়ত শুনেছেন ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বদলানো হতে পারে। তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য বলছি না। আমি দেশের জন্য বলছি। আমাদের দল, আমাদের সংসদীয় দল এমন ফাদে পা দেবে না। যারা চেষ্টা করছে, করুক। করোনা সংক্রমণের মধ্যে ও ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে রসুয়াগাড়ি সীমান্ত খুলে দিল নেপাল। এ সীমান্ত খুলে দেয়ার ফলে চিনের কার্গো ট্রাক এখন নেপালে প্রবেশ করতে পারবে। ভারতের সেনা প্রধান এমএন এমএন নারাভানে এর আগে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, নেপালের বর্তমান কর্মকান্ডের পেছনে বেজিংয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে নেপালের কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। কারণ ভারতও এসব এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে। এরপরই নেপাল সীমান্তে পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়। বিহারের সীতামারী সংলগ্ন ইন্দো-নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত এই ঘটনায় আহত হয় আরও দুজন। এছাড়া লগন যাদব নামে এক ভারতীয়কে গ্রেফতার করে নেপাল পুলিশ।
সীমানা নিয়ে দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যেই এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। নেপালের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘নেপালিজ আর্মড পুলিশ ফোর্স’-এর অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নারায়ণ বাবু থাপা বলেন, ঘটনাটি দক্ষিণ নেপালের সরলাহি জেলায় শূন্য রেখা থেকে নেপালের ৭৫ মিটার অভ্যন্তরে ঘটে। তার দাবি, ২৫-৩০ ভারতীয় নেপালী পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হয়। তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। পুলিশ ১০ রাউন্ডের মতো ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।