ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৭ জুন ২০২০

ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৬ জুন ॥ জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আরও পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা পরীক্ষা নিয়ে পড়েছে বিপাকে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার করোনায় সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় দিনাজপুরের আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং রংপুরে পিসিআর ল্যাবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডাঃ মাহফুজার রহমান সরকার জানান, জেলায় করোনায় এ পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০১ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৯৫ জন। বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ২০ জনের নমুনাসহ এ পর্যন্ত পরীক্ষার জন্য ২৫৪৭ জনের নমুনা দিনাজপুর পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২২৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১১ এপ্রিল। এরপর একে একে জেলায় ১৯৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত জেলায় দুই হাজার ৪৭০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে পিসিআর ল্যাব না থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে হয় দিনাজপুর অথবা রংপুরে। এতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে সময় লাগছে ১০-১২ দিন। ফলে নমুনা দেয়া ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কি-না স্বল্প সময়ে জানতে পারছেন না। তিনি অবাধে ঘুরছেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা নিজে যেমন সংক্রমিত হচ্ছেন তেমনি অন্যদেরও সংক্রমিত করছেন। এতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুর ও রংপুরে পাঠানো হয়। এখনও পাঁচ শতাধিক নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসেনি। ফলাফল আসতে সময় লাগছে ১০-১২ দিন। এ সময়ের মধ্যে নমুনা দেয়ার পর সম্ভাব্য করোনা রোগীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। তাদের কোন মনিটরিং নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্তদের শরীরে তেমন উপসর্গ না থাকায় অনেকে বুঝতেও পারছেন না তিনি করোনা পজিটিভ কি-না। ফলে ওই ব্যক্তি নিজের পরিবারসহ অন্যদের সংস্পর্শে গিয়ে করোনার সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও বীমার শাখা প্রধানরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। নমুনা দিতে গিয়ে দিতে পারছি না। আমাদের এখানে নয় সেখানে পাঠানো হয়। তারপরও নমুনা দিতে পারলে ফলাফলের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় নতুন দুজন আক্রান্ত ব্যক্তি জানান, উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা দেয়ার পর হাসপাতাল সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার দুদিন পর ফলাফল পেলাম পজিটিভ। এখন বাড়িতে আইসোলেশনে আছি। আবার নমুনা দিয়েছি। জানি না কবে ফলাফল পাব। ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রথমদিকে আমাদের নমুনা পাঠানোর দুইদিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। দিনে দিনে নমুনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলাফল আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জেলায় ল্যাব হলে বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, দেশে জেলা পর্যায়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন শুরু হলে ঠাকুরগাঁও জেলা অগ্রাধিকার পাবে। ঠাকুরগাঁও জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
×