ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় ৭ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট!

প্রকাশিত: ০১:১৪, ২৪ জুন ২০২০

নেত্রকোনায় ৭ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট!

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা \ জেলায় আবারও করোনা উপসর্গে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সংগ্রহ করা নমুনার পাহাড় জমছে, কিন্তু সাতদিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। এ কারণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা যেমন ব্যাহত হচ্ছেÑ তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আইসোলেশন প্রক্রিয়াও। সব মিলিয়ে জেলার করোনা চিকিৎসায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, নেত্রকোনার ১০ উপজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে। নেত্রকোনা ছাড়াও সেখানে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং সুনামগঞ্জের আংশিক এলাকার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ সালমা আহমাদ জানান, ময়মনসিংহের ল্যাবে স্থাপিত তিনটি পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ সাতশ’ ৫২টি নমুনার পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু পাঁচ জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে অনেক বেশি। এ কারণে ল্যাবটিতে নমুনার জট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন সব জেলার নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার একশ’ ৬১ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার রাত পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার তিনশ’ ৮৮টি নমুনার। বাকি সাতশ’ ৭৩টি নমুনা এখনও ল্যাবে জমা রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, গত ১৭ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত তিন দিনে নেত্রকোনার একটি নমুনাও পরীক্ষা করা হয়নি। ২০ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত পরবর্তী তিনদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র একশ’ ৯টি। ল্যাবে জমে থাকা নমুনার মধ্যে সাতদিন আগে সংগ্রহ করা নমুনাও রয়েছে। সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম খান জেলার করোনা পরীক্ষা নিয়ে মারাত্মক জটিলতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই সম্ভাব্য রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠাচ্ছি। কিন্তু ক্যাপাসিটির অভাবে ল্যাব কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নমুনা পরীক্ষা করতে পারছে না। এ কারণে রোগী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও স্থানীয় জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, নমুনা পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালককে একাধিকবার জানানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত একজন চিকিৎসক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘আমাদের উচিত রোগীদের দ্রæত শনাক্ত করা। কিন্তু নিয়মিত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে চিকিৎসা যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছেÑ তেমনি আইসোলেশনও ব্যাহত হচ্ছে। এটি একটি ভয়াবহ ব্যাপার।’ গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহেও নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে নেত্রকোনায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবিতে ভার্চুয়াল আন্দোলন হয়। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দ্রæত সময়ের মধ্যে জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু ওই প্রতিশ্রæতির আর বাস্তবায়ন হয়নি। জানা গেছে, নেত্রকোনায় এ পর্যন্ত তিনশ’ ৮৪ জন রোগীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন তিনজন।
×