ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে গ্রেফতার হেলাল হত্যার মূল আসামি চার্লস রূপম

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৩ জুন ২০২০

অবশেষে গ্রেফতার হেলাল হত্যার মূল আসামি চার্লস রূপম

রিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন(২৬) নৃশংস হত্যাকা-ের মূল আসামি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মাত্র ৫০ হাজার টাকার লোভে প্রতিবেশী চালর্স রূপম সরকার নামে এক ব্যক্তি তার ভাড়া বাসা দক্ষিণখান থানা মোল্লারটেক, তেঁতুলতলা বেকারির মোড়ে একটি বাড়ির দোতলায় ডেকে নিয়ে যায় ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনকে। সেখানে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ মেশানো চা পান করার পর হেলাল জ্ঞান হারান। এরপর রূপম সরকার ও তার স্ত্রী মনি সরকার ডিশ লাইনের তার অচেতন হেলালের গলায় পেঁচিয়ে দুই দিক থেকে প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত টেনে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর বঁটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে একেক জায়গায় মৃতদেহের একেকটি অংশ ফেলে রেখে আসে রূপম। এ কাজে তাকে স্ত্রী মনি সরকার (১৮) ও তার শাশুড়ি রাশিদা আক্তার(৪৮) সহযোগিতা করেন। ওই দু’জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়। তারা ইতোমধ্যে দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় হেলালের দেহের খ-িত অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে হত্যার রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। নিহত হেলাল নারায়ণগঞ্জের একটা মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে দক্ষিণখান থানা এলাকায় মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি মোবাইলের সিম, ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা, কলম, স্টেশনারি এবং খেলনাসামগ্রী বিক্রির ব্যবসা করে আসছিলেন। মূল আসামি গ্রেফতার রূপম সরকার প্রাথমিকভাবে হত্যাকা-ের দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে রূপম ডিবি পুলিশকে জানায়, তার পূর্ব পরিচিত হেলালের কাছে অনেক টাকাপয়সা আছে ভেবে টাকা আত্মসাত করার জন্যই সে এই হত্যাকা- ঘটায়। হত্যাকা-ের দিন দুপুর বেলা ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে হেলালকে ব্যবহৃত ফটোস্ট্যাট মেশিন কিনতে যাওয়ার কথা বলে রূপম সরকারকে তার ভাড়া বাসা দক্ষিণখান থানা মোল্লারটেক, তেঁতুলতলা বেকাীি মোড়ে একটি বাড়ির দোতলায় আসতে বলে। বাসায় এলে রূপম এবং তার স্ত্রী শাহিনা আক্তার ওরফে মনি সরকার হেলালকে চা পান করতে দেয়। চা তৈরি করার সময় রূপম চায়ের মধ্যে দুটি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেয়। চা পানের এক পর্যায়ে হেলাল ঘুমিয়ে পড়ে। এ সময় ডিশ এন্টেনার তার দিয়ে হেলালের অচেতন দেহের গলায় স্বামী রূপম তার স্ত্রী মনি দুই দিক থেকে টেনে হেলালকে হত্যা করে। হত্যার পর হেলালের পকেটে থাকা ২৫৩ টাকা, মোবাইল থেকে বিকাশ এবং নগদ এ্যাকাউন্টে থাকা টাকার মধ্য থেকে ৪৩ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। পরে হেলালের মৃতদেহ বাথরুমে নিয়ে বঁটি দিয়ে তিন টুকরা করে। পরে শপিং ব্যাগে করে খ-িত মাথাটি রেখে দেয় ভূঁইয়াপাড়া কবরস্থান সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে। মা রাশিদা আক্তারের কাছে ৩০ হাজার টাকা রেখে রূপমের স্ত্রী মনি সরকার বাসায় চলে এলে স্বামী-স্ত্রী মিলে খ-িত দেহের বাকি অংশের মধ্যে ধড়টি বড় একটি স্কুল ব্যাগে এবং পায়ের অংশ বস্তায় ভরে রাখে। পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রূপম অটোরিক্সায় বস্তা ও স্কুল ব্যাগটি নিয়ে রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সিসি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম ১৮ জুন তারিখে রূপম, স্ত্রী মনি সরকার এবং শাশুড়ি রাশিদা আক্তারকে আটক করে। তাদের দেয়া তথ্য এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ দক্ষিণখানের গাওয়ার এলাকার একটি ডোবা সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে যুবকের খ-িত মাথা উদ্ধার করে। এই দুজনের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি মূল আসামি চার্লস রূপম কখন, কোথায়, কিভাবে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় গুম করে রেখেছিল তা জানা যায়। হত্যার পরে লুট করা টাকার অংশবিশেষ নিয়ে রূপম ঢাকা ও বগুড়ায় আত্মগোপন করে বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিবি উত্তরের বিমানবন্দর টিম রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল ঘাতক খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী চার্লস রূপম সরকারকে গ্রেফতার করে।
×