ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫২.৮ শতাংশ রোগী সুস্থ ॥ এ পর্যন্ত মৃত্যু ৩০ জনের

ভয় না পেয়ে মনের জোরে দ্রুত সেরে উঠছেন পুলিশ সদস্যরা

প্রকাশিত: ২১:৪১, ২২ জুন ২০২০

ভয় না পেয়ে মনের জোরে দ্রুত সেরে উঠছেন পুলিশ সদস্যরা

আজাদ সুলায়মান ॥ সাদ্দাম হোসেন। ডিউটি করেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। মাসখানেক আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ভর্তি হন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। তিনি জানান, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসক ও বড় স্যারদের আন্তরিকতায় মনোবল বেড়ে যায়। ভয়ও কেটে যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে উঠি। হাসপাতালের প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। বড় স্যারদের আন্তরিকতায় সবার মনোবল বেড়ে যাচ্ছে। করোনার আসল ওষুধ হচ্ছে মনোবল বাড়ানো। ভয় পাওয়া যাবে না। সাদ্দামের মতো একই কথা বলছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরাও। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিনই করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর ফ্রন্ট লাইনে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা। প্রথমদিকে পুলিশ সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েই চলছিল। তবে গত এক মাসে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমে এসেছে। এই সময়ে ২৩.২ শতাংশ পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর আগে ছিল প্রায় ২৬ শতাংশ। কর্তৃপক্ষের সময়পোযোগী পদক্ষেপ এবং আক্রান্ত সদস্যদের জন্য আদর্শ চিকিৎসা নিশ্চিত করার কারণে সুস্থতার হার এখন ৫৫.৯২ শতাংশ। এই পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৬৬ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ৫৩৫৫ জন। এই প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, করোনায় পুলিশের যে সদস্যরা মারা গেছেন, মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়েই তারা জীবন দিয়েছেন। তাদের অবদান জাতি ভুলবে না। বর্তমানে এ দুর্যোগকালে আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়াই করছে পুলিশ। করোনাকালে নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে মানবিক পুলিশ হিসেবে মানুষের পাশে রয়েছে, তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনায় মৃত ব্যক্তিকে যখন আপনজনরা ছেড়ে যাচ্ছে, তখন পুলিশ তাদের দাফন-সৎকার করছে। করোনাকালে জনগণকে সেবা দেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে পুলিশ। এটি অব্যাহত রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলে তিনি মন্তব্য করেন। পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) ২৫০টি শয্যা, ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ১৫টি শয্যা এবং ১৪টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচপিইউ) রয়েছে। মে মাসে পুলিশের আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় হাসপাতালের জায়গা হচ্ছিল না। পরে বেসরকারী ইম্পালস হাসপাতাল ভাড়া নেয়া হয়। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক-ওয়ান, ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক-টু-২ এবং ১১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালে ৩৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতাল ও গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুলে (ডিটিএস) ১১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে চাপ কমে গেছে এবং এখন ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক-১-এ ১৬০ জন রোগী রয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক-২-এ ২১৯ জন রোগী এবং ডিটিএস-এর এখন মাত্র ৩৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম শান্তু বলেন, পুলিশে আক্রান্তের হার কমে এসেছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে উন্নতমানের চিকিৎসা চলছে। তাছাড়া রোগীদের মানসিক শক্তি বাড়াতে যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। আক্রান্তদের মনোবল বৃদ্ধি ও সঠিক পরিচর্যা দেয়ার কারণে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তারা। আগের চেয়ে আক্রান্তের হার অনেক কমে আসছে। তিনি বলেন, সিপিএইচ এবং আরও তিনটি অস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমাদের ১২০ জন ডাক্তার, ১৩০ জন নার্স এবং ৮০ জন ওয়ার্ড বয় রয়েছেন। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশিকা মেনে তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। আমরা এই হাসপাতালের প্রত্যেক রোগীকে একটি বৈদ্যুতিক চায়ের পাত্র এবং বাষ্প মেশিন সরবরাহ করেছি যাতে তারা গরম পানি ব্যবহার করতে পারে এবং চা পান করতে পারে। রোগীরা হাসপাতাল থেকে জিঙ্ক এবং ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ ভর্তি প্রোটিন পাচ্ছেন, যার মধ্যে মৌসুমি ফল, লেবু এবং আদা রয়েছে। তারা পরিচ্ছন্নতার যত্ন নিচ্ছেন এবং হাসপাতাল চত্বর এবং ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা কোন রোগীকে একা থাকতে দিচ্ছি না। প্রতি ঘণ্টায়, আক্রান্ত কর্মকর্তাদের দেখাশোনা করার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দল এবং বিশেষ দল রোগীদের কাছে যাচ্ছে এবং তাদের অভিযোগ শুনছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, মাঠে নিয়োজিত সদস্যরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও সুরক্ষিত থাকতে পারেন, সেজন্য সচেতনতার পাশাপাশি সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি জানানো হচ্ছে। সিনিয়র অফিসাররাও বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে তাদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলছেন। সুরক্ষা সামগ্রী ও পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মনোবল যেন অটুট থাকে এজন্য উর্ধতন অফিসাররা এবং তাদের লাইন চীফরা তাদের হাসপাতালে ভিজিট করছেন। এছাড়া অসুস্থদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর রাখার জন্য সদর দফতর থেকে স্ব স্ব ইউনিটকে জানানো হয়েছে।
×