ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৯ মে ২০২০

কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী রবিবার থেকে সীমিত পর্যায়ে সবকিছু খোলার ঘোষণায় দলে দলে লোক ঢাকায় প্রবেশ করছেন। শুক্রবার সকাল থেকে রাত অবধি এ চিত্র লক্ষ করা গেছে। রাজধানীর সবকটি প্রবেশমুখে ছিল স্বাভাবিক ব্যস্ততা। যানজট। গণপরিবহন না চললেও সড়ক মহাসড়কে যানবাহনের ভীড় বেড়েছে। দেদার চলছে প্রাইভেটকার সহ ব্যক্তিগত যান। এছাড়াও বাস ছাড়া অটোরিক্সা, লেগুনা, ইজিবাইক, ভ্যান, ট্রাক সহ সবকিছু চলাচল করতে দেখা গেছে। যে যেভাবে পরাছেন ছুটে আসছেন কর্মস্থলের দিকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ। এদিকে সরব হতে চলেছে রাজধানী ঢাকা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই স্বাভাবিক ভাবে চলছেন সবাই। অযথা বেড়েছে ঘোরাফেরা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এমনকি মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না অনেকেই। পার্ক, উদ্যান, শহীদ মিনার, টিএসসি, রবীন্দ্রসরোবহ সহ বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে আড্ডা। এদিকে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার খবরে দেশের সবকটি ফেরিঘাটে এখন ব্যাপক ভীড়। দিনভর যানবাহন ও মানুষের বাড়তি চাপ সামলাতে হয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তার ওপর আবার কিছু কিছু ঘাটে রয়েছে পানির অতিরিক্ত স্রোত। বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে অফিস খোলার প্রঞ্জাপন জারি করে সরকার। সেইসঙ্গে একই দিন থেকে ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৫জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এ ঘোষণার পর থেকেই ঢাকামুখি নামে মানুষের ঢল। সবাই কর্মস্থলে যোগ দিতে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ি এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ সনাক্ত হওয়া মোট রোগির ৫৪ভাগের বেশিই রাজধানীর। ২৮ মের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ৫৫৯ জনের মধ্যে ১৯৯জন ঢাকার। সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে হটস্পট হলো রাজধানী। তবুও সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও অর্থনীতি ও মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে সবকিছু স্বাভাবিক করা ছাড়া সামনে বিকল্প কিছু নেই। তবে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের মধ্যে রাজধানীমুখি মানুষের ভীড়ের কারণে সামনের দিনগুলোতে কতোটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই কঠিন হবে। তবে যারা আসছেন, তাদেরও সংসারের চাকা অচল হতে চলেছে। কাজে যোগ না দিলে চলার কোন পথ নেই। তাই করোনায় সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও কর্মস্থলে ফিরছেন প্রত্যোকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে ১৫দিন আক্রান্তের হার কমে ১০ শতাংশে নামলে বোঝা নামে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। হিসাব অনুযায়ি দিন দিন সংক্রমণ বাড়ায় সহসাই নিয়ন্ত্রণের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগি সনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সময় থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল। এরমধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণা আসে নির্ধারিত ছুটির আগেই। এদিকে, সড়ক মহাসড়কে পণ্যবাহি পরিবহনে যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। মহাসড়কগুলোতে পুলিশি তৎপরতা কম থাকার কারণে পণ্যবাহি যানে মানুষ পরিবহন করতে দেখা গেছে। এ্যাম্বুলেন্স সহ সরকারী কাজে ব্যবহৃত যানবাহনেও মানুষ পরিবহন করতে দেখা যায়। ভাড়াকরা মাইক্রো নিজস্ব পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গিয়ে ফেরার পথে গড়পরতায় যাত্রী উঠিয়ে ঢাকায় পরিবহন করতে দেখা গেছে। করোনা প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এদিন থেকেই গণপরিবহন লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর যানজটের নগরীর চিত্র একেবারেই পাল্টে যায়। সুনসান নীরব ঢাকায় ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। করোনা আতঙ্কে সরকারের পরামর্শে সবাই ঘরে চলে যান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এরকম ঢাকার চিত্র আর দেখা যায়নি। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ফের সরব হচ্ছে সবকিছু। দীর্ঘ সময় বন্ধুত্বের মোবাইল যোগাযোগের গন্ডি পেরিয়ে সবাই বাইরে আসতে শুরু করেছেন। টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ধানমন্ডি লেক ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা গেছে জমপেশ আড্ডা। শাহবাগেও বিকেলে জমেছে বন্ধুত্বের মিলনমেলা। কতোদিন দেখা নেই বন্ধু...। তাই হৃদয়ে জমে আছে না বলা কত কথা...। লকডাউনে থাকা স্মৃতি ঝড়ছে হাসি আর কান্নার মধ্য দিয়ে। তেমনি হাতে হাত রেখে প্রশান্তি নেয়ার চেষ্টা। এমনও আছে করোনায় দীর্ঘদিন মনে মনে রাখা কথাটি আর বলা হয়নি। এরমধ্যে দেখাও হয়নি। আজ তাই বলা হলো ‘ভালোবাসি বন্ধু তোমায়’, অনেক বেশি ভালোবাসি। চীরদিন পাশে থেকো, আগলে রেখো। বন্ধুত্বের মধ্যে প্রেম। তাই ফেরানো কি কারো সাধ্য আছে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বন্ধুও প্রেমের স্বীকৃতি জানালো। বললো, জানতাম তুমি একথাই বলবে, বলতে পারো। আমি প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম, তোমার মুখ থেকে চার অক্ষরের ‘ভালোবাসি’ কথাটি শোনার জন্য। ভালোবাসার জানালা দিয়ে যখন দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকা শহরের সাজানো পরিবেশের অনেকটাই বিকেলের বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগছিল ঠিক তখন সড়কে দেখা গেছে ব্যস্ততা। শাহবাগ, পল্টন, বাংলামোটর, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, মীরপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি গাড়ির চাপে যানজট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চলাচল করছে অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। নির্জনতা ভেঙ্গে কোলাহল মুখর হচ্ছে নগরী। বাজারে বাজারে ভীড় বেড়েছে মানুষের। তবে সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
×