ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাওয়া ৩১ মাঠ-পার্কে অন্যরকম দক্ষিণ ঢাকা

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৩ মে ২০২০

বদলে যাওয়া ৩১ মাঠ-পার্কে অন্যরকম দক্ষিণ ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকাসহ মহানগরীর দক্ষিণাংশ অনেক বেশি ঘিঞ্জি এলাকা বলে প্রায় সবার জানা। এই ঘিঞ্জি পরিবেশে প্রাণভরে শ্বাস ফেলারও জায়গা ছিল না। যে ক’টি মাঠ ও পার্ক ছিল, সেগুলো পড়েছিল অবজ্ঞা-অবহেলায়। আবর্জনা-দুর্গন্ধে অনেক মাঠ বা পার্কের দিকে তাকানোও যেত না। কিন্তু সেই দুর্দিন কেটে গেছে। এখন ঢাকা দক্ষিণের মাঠ ও পার্কগুলো পুরোপুরি বদলে গেছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা এবং খেলাধুলার রাইডে একেকটি মাঠ ও পার্ক হয়ে উঠেছে শিশু-কিশোর থেকে বয়স্ক, সব বয়সী মানুষের উপভোগ্য সময় কাটানোর আকর্ষণীয় কেন্দ্র। এই বদলে দেয়ার কাজটি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারা করপোরেশনভুক্ত ৩১টি মাঠ ও পার্ককে নগরবাসীর মনোরম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। সূত্র জানায়, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। ১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ ও পার্কগুলোর নবরূপের নক্সা প্রণয়নের কাজে নামেন রফিক আজমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। তাদের নক্সায় মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে শুরু হয় মাঠ ও পার্কগুলো সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়নের কাজ। এ প্রকল্পে শুরু হয় মতিঝিলের সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, জোড় পুকুর মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, ধলপুর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসসা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্কের সংস্কার কাজ। জাদুঘর, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, নেটে ক্রিকেট অনুশীলন, ফুটবল খেলা, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বসার বেঞ্চ, ফুলবাগান, পানির ফোয়ারা, ওয়াটার বডি, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্য, পাবলিক টয়লেট, ছাদবাগান করার মডেল, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, পানি নিষ্কাশনের বিশেষ ব্যবস্থা, কফি হাউস, ফুড কোর্ট, কার পার্কিংসহ বিশ্বমানের সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যোগ হতে থাকে মাঠ-পার্কগুলোতে। এছাড়া হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনীও গড়ে তোলা হয় কোন কোনটিতে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মাঠ ও পার্ক সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্তও করে দেয়া হচ্ছে। কিছুর কাজ শেষ পর্যায়ে। কাজ শেষ হলে সেই মাঠ ও পার্কগুলোও খুলে দেয়া হবে ঢাকাবাসীর জন্য। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে নতুন দুটি পার্ক যুক্ত করায় কাজের অগ্রগতির শতকরা হার কমেছে। আগামীতে আরও একটি পার্ক যুক্ত করা হবে। ১৬ মে সাঈদ খোকনের মেয়র পদে মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার আগেই সব মিলিয়ে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে যেসব পার্ক-মাঠের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেগুলো হলো- জোড়পুকুর পার্ক, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, বাহাদুর শাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, রসুলবাগ শিশুপার্ক, গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক ও আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক। অন্যদিকে আধুনিকায়নের কাজ চলছে কলাবাগান খেলার মাঠ (৮০ শতাংশ), সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ (৩৫ শতাংশ), বাংলাদেশ মাঠ (৮০ শতাংশ), সামসাবাদ খেলার মাঠ (২ শতাংশ), দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ (৮৫ শতাংশ), বালুরঘাট খেলার মাঠ (৯০ শতাংশ), শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম (৫ শতাংশ), বশির উদ্দিন পার্ক (৭০ শতাংশ), গজমহল পার্ক (৯৫ শতাংশ), বকশীবাজার পার্ক (৭৫ শতাংশ), হাজারীবাগ পার্ক (৭০ শতাংশ), আজিমপুর শিশুপার্ক (১৫ শতাংশ), সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক (৭৫ শতাংশ), বংশাল ত্রিকোণাকার পার্ক (৭৫ শতাংশ), ওসমানী উদ্যান (৫৫ শতাংশ), মতিঝিল পার্ক (৮০ শতাংশ), যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক (৮০ শতাংশ), মালিটোলা পার্ক (৮৫ শতাংশ), পান্থকুঞ্জ পার্ক (১৫ শতাংশ) ও গোলাপবাগ খেলার মাঠ (৭৪ শতাংশ)। এ কাজগুলো নির্ধারিত সময়েই শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছিলেন ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মেট্রোরেল প্রকল্প ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ বেশকিছু কারণে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। তবুও অল্প সময়ের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এসব পার্ক ও মাঠ সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায় নেয়া মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেখেছি নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পটি গ্রহণ করি। এর আওতায় আমাদের ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ বিশ্বমানের করে সাজিয়েছি। এগুলোতে জল ও সবুজের মেলবন্ধন রাখা হয়েছে। সাঈদ খোকন আরও বলেন, আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার কাজটি করতে চেষ্টা করেছি।
×