ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য বাড়াতে গঠন করা হচ্ছে টাস্কফোর্স

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২১ মে ২০২০

বাণিজ্য বাড়াতে গঠন করা হচ্ছে টাস্কফোর্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারী- বেসরকারী খাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে কাজ করবে এই টাস্কফোর্স। এছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এ কারণে আসন্ন ঈদের পরই টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির’ সপ্তম সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। ইন্টারনেটভিত্তিক ভার্চুয়াল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দন। বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত হন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র সচিব, শিল্পসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক প্রমুখ। সভায় জানানো হয়, করোনায় অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হলেও বেশকিছু জায়গায় সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এখন দ্রুত এই সম্ভাবনাগুলোকে নিয়ে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। এ কারণে টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পরিবর্তিত বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ যেসব সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করবে তা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে খুব শীঘ্রই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঈদের পরেই এটি করা হবে। তিনি জানান, বিদেশীরা সরাসরি জানতে চান ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা কি? তাই ঈদের পর যত দ্রুত সম্ভব একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা সুযোগ-সুবিধাগুলো জানাবে। টিপু মুনশি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানি অনেক দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করবে। আমরা সেই সুযোগটা যদি নিতে পারি তাহলে করোনা পরিস্থিতি থেকে কিছু সুযোগও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি কর্মহীনতার ধাক্কাটাও সামলানো যাবে। তিনি বলেন, সভায় এ বিষয়গুলো সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। এ জন্য অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে অনেক আলোচনা হয়েছে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে সূচকের দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। নতুন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কিন্তু দেশের বাইরে বসে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সূচকের পরিস্থিতির কথা জানতে চাচ্ছেন। সেখানে যদি তারা নেগেটিভ চিত্র পায় তাহলে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, এ কারণে আমরা যেটুকু পারব সেটুকুই বলব। আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কথা বলছি, কিন্তু তারা এসে দেখছে কোন ওয়ান স্টপ সার্ভিস নেই। ঈদের পরে স্থানান্তর হতে যাওয়া বিনিয়োগগুলো আমাদের দেশে আনতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করব। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। টিপু মুনশি বলেন, এই মুহূর্তে দরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা স্থানান্তর হওয়া কোম্পানিগুলোকে কতটা ধরতে পারি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন। ব্যবসায়ীদেরও কথা বলতে বলেছেন। শিল্পমন্ত্রীও বলেছেন আমরা ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছেন রাজস্বের কথা, আমরা রাজস্বের প্রশ্নে যেতে চাই না। কিন্তু আমরা বলতে চাই, যারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে, তারা অন্য দেশের তুলনায় বেশি সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, উজবেকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তারাও কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগ করতে চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের দুইটা খাত ভালভাবেই চলছিল একটি হলো রফতানি অপরটি হলো রেমিটেন্স। বাংলাদেশে যারা তৈরি পোশাক খাতে অর্ডার করেছিল ইতোমধ্যেই তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তারা যেন অর্ডার বাতিল না করে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। তারা অর্ডার বাতিল করবে না। এরমধ্যে ইউএস আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কাছ থেকে ওষুধ নেবে। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, করোনা পরবর্তীতে আমাদের বেশ করে কাজ করতে হবে। চলমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে। নতুন করে বিশ্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকরীদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, রিলোকেট কারীদের কিভাবে সুযোগ-সুবিধা দেব এখন সেটা চিন্তা করা উচিত। দেশে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা দেয়া গেলে জাপান ও আমেরিকার যে সকল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রিলোকেট করতে চাচ্ছে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এটা দূর করতে হবে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া বৈদেশিক বিনিয়োগের একটি বড় স্থান অধিকার করেছে। তারা নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করেছে। আমাদেরও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ছোট ছোট উদ্যোগগুলোকে সমন্বয় করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
×