মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিরামহীন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হওয়া দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ (কর্ণফুলী টানেল) এর নির্মাণ কাজ থমকে যাওয়ার পথে। বিপুলসংখ্যক চীনা বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন এই টানেলের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ আটকা পড়েছে দেশে এবং বিদেশে। স্থানীয় পর্যায়ের শ্রমিকদের কাজ রয়েছে বন্ধ।
টানেল নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে, ম্যান পাওয়ার মেশিন এ্যান্ড মেটেরিয়ালস এর সমন্বয়ে একটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ টানেল নির্মাণের কাজও দিনদিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ফলে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত অর্থবছরে এডিপিতে সংশোধিত ১৪৬ কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করতে না পারার বিষয়টি নিয়ে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২০১৫ সালের নবেম্বর মাসে এ টানেল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এ টানেল নির্মাণ করছে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী চীন থেকে আসছিল। এছাড়া এ প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২৯৩, যার মধ্যে ছুটিতে গিয়ে ২৭ জন আটকা পড়েছেন নিজ দেশে।
এদিকে, এ নির্মাণ কাজে বাংলাদেশী যেসব শ্রমিক জড়িত তারাও এখন কাজে যাচ্ছে না। সরকারী নানা নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে এরা কাজে যোগদান থেকে বিরত রয়েছেন। অপরদিকে, এ প্রকল্পে দেশীয় যেসব সামগ্রী ব্যবহৃত হয় তন্মধ্যে লৌহজাত সামগ্রী ও সিমেন্ট অন্যতম। এসব সামগ্রীর যোগান এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া চীন থেকে আমদানির বিভিন্ন সামগ্রীও খালাস হচ্ছে না। জাহাজ বোঝাই হয়ে এসব সামগ্রী রয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া সরকারী ছুটি থাকার কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্রের বিষয়টি বন্ধ রয়েছে।
অদ্ভূত পরিস্থিতিতে টানেল নির্মাণ প্রক্রিয়া দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সূত্র মতে, পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই প্রকল্প কাজে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারী উদ্যোগে এ প্রকল্পের আমদানি করা সামগ্রী কাস্টমসের মাধ্যমে ছাড় করার বিশেষ ব্যবস্থা করা হলে এবং এর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে প্রকল্প কাজ একেবারে বন্ধ না হয়ে এগোতে থাকবে। এক্ষেত্রে অন্যতম আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় শ্রমিকদের কাজে যোগদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা।