ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে কৃষিমন্ত্রী

এবার বোরো উৎপাদন গতবারের চাইতে বেশি হবে

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১ এপ্রিল ২০২০

এবার বোরো উৎপাদন গতবারের চাইতে বেশি হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরবর্তী সময়ে দেশে খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সারাদেশের মাঠপর্যায়ের চিত্র জানার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এ সময় করোনা পরিস্থিতি সামলে নেয়ার পরও যেন কোন রকম খাদ্য ঘাটতি না হয় সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীকে বলব আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এর জন্য যা যা করার তা করতে হবে।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে দেশের অনাবাদী জমিতে ফসল উৎপাদন করে ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ ইতোমধ্যেই তারা গ্রহণ করছেন। এখন চলছে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ। এপ্রিল থেকেই দেশের বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হচ্ছে। এটিই দেশের প্রধান ধান উৎপাদন মৌসুম। বোরো আবাদে কৃষকের বড় সমস্যা উৎপাদিত ধানের দাম না পাওয়া। তবে এবার সারাদেশে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এ্যাপসের মাধ্যমে সরকারের ধান কেনার উদ্যোগে আশা জেগেছে। গত বছর বোরো মৌসুমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছিল। ভিডিও কনফারেন্সে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সামনে আমাদের বোরো ধান কাটা শুরু হবে। করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সকলকে ছুটি দিলেও স্টেশন লিভ করতে (নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ) মানা করেছি। তিনি বলেন, বিভাগীয় পর্যায় থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কৃষি বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর উদ্দেশ্যে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আপনি কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। অতীতেও আমাদের ধানের উৎপাদন ভাল ছিল। ভবিষ্যতেও আমাদের উৎপাদন ভাল থাকবে। ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বোরো মৌসুমে আমাদের ফলন গতবারের তুলনায় বেশি হবে বলে আশা করছি। এছাড়া সামনে আউশ এবং আমন মৌসুম রয়েছে। এই সময়ে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা খাদ্য আমদানি করতে পারব না। কারণ যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হয় ওই সব দেশেও খাদ্য সঙ্কট থাকবে। সঙ্গত কারণে দেশের আউশ-আমন মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করেছেন। এসব জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করব আমরা। এছাড়া দেশে গত মৌসুমে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে আমার এবার কৃষকদের বলেছি মাচা করে পেঁয়াজ রাখা যায়। এভাবে পেঁয়াজ অনেক দিন ভাল থাকে। এর আগে এভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি হতো না। তিনি বলেন, এজন্য চাষীদের সংরক্ষণে উদ্ভুত করতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। পরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের প্রসঙ্গ এলে কৃষিমন্ত্রী ত্রাণে চালের সঙ্গে আলুকে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এতে কৃষকরা আলুর ভাল দাম পেয়ে উপকৃত হবে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবার পর বিশ্বব্যাপী খাদ্য বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীতে এখন লকডাউন চলছে। শিল্পের চাকা যেমন ঘুরছে না ঠিক একইভাবে কৃষকের লাঙ্গল মাঠে নামছে না। বিশ্বব্যাপী এই মন্দা পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদন ঠিক রাখা জরুরী বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে এই সঙ্কট মোকাবেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করছে। এর মধ্যে দেশের যেসব জমিতে ফসল উৎপাদন হয় না সেখানে আবাদ করার চিন্তা করা হচ্ছে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় আশার আলো দেখাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে দেশে লবণাক্ততার জন্য অনেক জমি অনাবাদী থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলের এসব জমিতে এর আগে ধানের আবাদ হলেও এখন তা হয় না। এছাড়া সেচের অভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশ কিছু জমি অনাবাদী থাকে। আবার দেশের সিলেট অঞ্চলে প্রবাসীরা জমি কিনে ফেলে রেখে যাওয়াতে ওই সব জমি পতিত হয়ে গেছে। বৈশি^ক মহামারীর কারণে যেহেতু খাদ্য উৎপাদন বিঘিœত হবে সঙ্গত কারণে এসব জমিকে আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মঈদ বলেন, সারাদেশে যেসব পতিত জমি রয়েছে সেগুলোকে আমরা আবাদের আওতায় নিয়ে আসছি। এখন পরিকল্পনা করা হচ্ছে কিভাবে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। কিন্তু বোরোতে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৪৭ লাখ হেক্টরে। এ সময় অবশ্য অন্য রবি শষ্যের আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু আউশ মৌসুমে চাষ হয় মাত্র ১১ লাখ হেক্টর জমি। ফলে আউশের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অবশ্য বলছেন করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা নেই। যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে খাদ্য সঙ্কট হবে না, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে, ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক খাদ্য কিনে মজুদ করারও প্রয়োজন নেই। এ মুহূর্তে দেশে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। যার মধ্যে গম তিন লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন, বাকি সব চাল। গত বছর এ মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।
×