ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে আটকেপড়া ওমরাহ যাত্রীদের ফেরা নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত: ১০:০১, ৩০ মার্চ ২০২০

  সৌদিতে আটকেপড়া ওমরাহ যাত্রীদের ফেরা নিয়ে সংশয়

আজাদ সুলায়মান ॥ বিশ্বব্যাপী করোনা তান্ডবে সৌদি আরব আকস্মিক ওমরাহ ভিসা বাতিল ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক যাত্রী। সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ আটকে পড়া ৪০৯ জন ওমরাহ যাত্রীদের বিমান ফিরিয়ে আনলেও এখনও রয়ে গেছে অজানাসংখ্যক যাত্রী। বিশেষ করে গত ১৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগও স্থগিত করায় এখন তাদের বিমানের পক্ষেও আনা সম্ভব হচ্ছে না। কার্যত এ জন্যই বিপদে পড়েছেন সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে যাওয়া বাংলাদেশীরা। যদিও সরকার ও হাবের তরফে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না ঠিক কতজন বাংলাদেশী সেখানে আটকে রয়েছেন তেল সমৃদ্ধ ওই দেশটিতে। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার দেশটিতে তিন দফা মিসাইল হামলা হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে তাবত দুনিয়ার ওমরাহ যাত্রীদের মাঝে। এ অবস্থায় হাব মনে করছে আটকে পড়া ওমরাহ যাত্রীদের দ্রুত দেশে ফেরাটা অনিশ্চিত। জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ ছিল ওমরাহ পালনে গিয়ে যারা আটকা পড়াদের রিপোর্ট দাখিল করা। কিন্তু অনেকেই ভয়ে সেই রিপোর্ট দাখিল করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে তাদের বিষয়ে সৌদি আরবের কাছ থেকেও প্রকৃত তথ্য পাচ্ছে না ঢাকা। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে আকাশপথের যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সৌদিয়া, কুয়েত এয়ারওয়েজসহ অন্য এয়ারলাইনসের মাধ্যমে যারা ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন তারাই মূলত এখনও দেশে ফিরতে পারেননি। বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দার কাউন্সেলর মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, তাদের ১৭ মার্চ বিশেষ ফ্লাইটে বিমান কর্তৃপক্ষ ফেরত নিয়ে গেছে। এখন যারা আটকা আছেন তারা মূলত সৌদিয়াসহ অন্য এয়ারলাইনসের মাধ্যমে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের কাছে ৬৩ বাংলাদেশীর আটকে পড়ার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জন এসেছেন সৌদিয়া এয়ারলাইনসের মাধ্যমে। বাকি দুজন এসেছেন কুয়েত এয়ারওয়েজে। যারা সবাই এখন ওই দুই এয়ারলাইনসের তত্ত্বাবধানে আছেন। এর বাইরেও যারা আছেন তাদের ২৮ মার্চের মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে। সৌদি আরবে আটকা পড়া কয়েকজন ওমরাহ যাত্রী গতকাল জানান, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশিদিন সেখানে অবস্থান করার ফলে অনেকেরই অর্থ ফুরিয়ে গেছে। এছাড়া রয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়। সব মিলিয়ে ওমরাহ যাত্রীরা এখন অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কবে নাগাদ তারা ফিরতে পারবেন সেটাও কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরবে যারা আটকা পড়েছেন, সেটার জন্য কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই। এতে কারোর কোন হাত ছিল না। কেননা করোনা তা-বে ল-ভ- হয়ে গেছে তাবত দুনিয়ার সব অফিস আদালতের কার্যক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওমরাহ স্থগিত করেছে সৌদি আরব। তবে আমার জানা মতে সৌদিতে বর্তমানে ৫০ জনের মতো আটকা আছেন। দেশের অচলাবস্থা কাটা বা বিমান চলাচল শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করবেন। তবে তাদের যাতে ঠিকমতো মানবিক সেবা নিশ্চিত করা হয় সে জন্য চিঠি লিখেছি সৌদির কাছে। তারা বলছে সঠিকভাবে তাদের সেবা যতœ দেয়া হবে। ভিসার মেয়াদ নিয়েও কোন সমস্যা হবে না। এদিকে হাব সূত্র জানিয়েছে, এখনও সৌদি আরবে যারা আটকা আছে, তারা মূলত ১১টি ওমরাহ হজ এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি এয়ারলাইনসে গত ১৬ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশটিতে যান। ওমরাহ পালন শেষে ১৪ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে তাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৌদি এয়ারলাইনস ও কুয়েত এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় আটকা পড়েন তারা। বর্তমানে তারা মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও রিয়াদে অবস্থান করছেন। আর হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকের কাছেই হোটেল ভাড়া, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ নেই। বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এরই মধ্যে সৌদিয়া এয়ারলাইনসকে চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ২৪ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ২২ ওমরাহ যাত্রীর দেশে ফেরার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সৌদিতে থাকার হোটেল ও বিমান টিকেটের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও এ সংখ্যা আটকে পড়াদের তুলনায় অনেক কম। জানতে চাইলে হাব সভাপতি মোঃ শাহাদত হোসেন তসলিম রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বিমান যখন সৌদিতে আটকে পড়া ওমরাহ যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে যায় তখন এসব হাজীরাও আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বিমান তখন যুক্তি দেখিয়েছে সাউদিয়া এয়ারের ফ্লাইটে যাওয়া যাত্রীদের আনা সম্ভব হবে না। আসলে বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগের সময় বিমানের উচিত হয়নি কোন হাজী কোন এয়ারলাইন্সে সৌদি গেলেন সেটা বিবেচনায় না নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের দেখা। কত ওমরাহ যাত্রী সৌদিতে বর্তমানে আটকা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রকৃত তথ্য নেই। যদিও এটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকার কথা। তবে মনে হয় না সেটা শতাধিক হবে।
×