ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শর্তসাপেক্ষে হোটেল-রেস্তরাঁ

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ৩০ মার্চ ২০২০

 শর্তসাপেক্ষে হোটেল-রেস্তরাঁ

বাস্তবসম্মত ও সময়োচিত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। করোনাভাইরাসজনিত জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটানা ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে বলেছে নিজেদের সুরক্ষাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। রিক্সাসহ প্রায় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন বটে; আবার অনেকে আটকাও পড়েছেন রাজধানী ও আশপাশে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, মুটে-মজুর, হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী ও মেসের অধিবাসীরা। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে নিত্যপণ্য পরিবহনসহ সুপারশপ, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হলেও সামাজিক নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে হোটেল-রেস্তরাঁগুলো। এতে অনেকেরই দৈনন্দিন খাবার পেতে অসুবিধাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রাজধানীতে সবাই যে পরিবার-পরিজন নিয়ে রান্না করে খেতে পারেন এমন তো নয়। তাছাড়া গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সাময়িক সঙ্কটও দেখা দেয় অনেক স্থানে। সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনায় এনে ডিএমপি কর্তৃপক্ষ কিছু শর্ত দিয়ে রাজধানী ও আশপাশের হোটেল-রেস্তরাঁগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রশংসনীয় অবশ্যই। প্রধান শর্তটি হলো, হোটেল বা রেস্তরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না কোন অবস্থাতেই। তবে খাবার পার্সেল করে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন ক্রেতা। হোম ডেলিভারিও বন্ধ। তৃতীয় শর্ত যেটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো খাবারটি বিশুদ্ধ তথা ভেজালমুক্ত হওয়া চাই অবশ্যই। কেননা, করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় কোনরকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেয়া যাবে না। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি অর্থাৎ মান নিয়ন্ত্রণ তথা তদারকি করবে ডিএমপি এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বলতেই হয় যে, এটি একটি ভাল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। কেননা, ভেজালমুক্ত তথা নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা ও প্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা আদৌ ভাল নয়। এর পাশাপাশি আবাসিক হোটেলগুলোকে হোম কোয়ারেন্টাইনের বিকল্প হিসেবেও ভাবা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা এমনিতেই নানা সমস্যায় আক্রান্ত ও বিপর্যস্ত। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা তো আছেই। যে কারণে মহানগরবাসী প্রায়ই পীড়িত ও অসহায় বোধ করে থাকে। এর পাশাপাশি নগরবাসীর অন্তহীন ভোগান্তির জন্য ভেজাল খাদ্য, পানীয়ও কম দায়ী নয়। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বানিখাক)। বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিআরওএ), সিটি কর্পোরেশন ভারতের একটি কোম্পানির সহায়তায় রাজধানীর দশ হাজারের বেশি হোটেল-রেস্তরাঁর গ্রেডিংয়ের কাজ শুরু করেছে পর্যায়ক্রমে। এর জন্য তারা প্রাথমিকভাবে হোটেল-রেস্তরাঁর সার্বিক অবস্থা বোঝার জন্য ৩৫টি প্রশ্নের একটি চেকলিস্ট তৈরি করেছে। মূলত এর ভিত্তিতেই নিরূপণ হবে একটি হোটেল বা রেস্তরাঁর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও পরিবেশ, কিচেনের ব্যবস্থাপনা, কর্মচারীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, খাবারের মান, পানি ও পানীয় দ্রব্যের গুণাগুণ, কাঁচামাল ও খাবার সংরক্ষণ তথা ফ্রিজিং পদ্ধতি, বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি ইত্যাদি। মূলত এসবের ভিত্তিতেই হোটেল-রেস্তরাঁর মান নির্ধারণ করে এ-প্লাস, এ, বি ও সি গ্রেডিং দেয়া হবে। ইতোমধ্যে মতিঝিল-দিলকুশায় ৫৭টি রেস্তরাঁকে গ্রেডিং প্রদান করা হয়েছে। দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় হলো, এ গ্রেডপ্রাপ্ত রেস্তরাঁয়ও পরে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে ভেজাল, বাসি ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য। সে অবস্থায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তা না হলে ভেজালের দৌরাত্ম্য কমবে না কিছুতেই। অন্তত করোনাকবলিত দুঃসময়ে সর্বস্তরের মানুষ ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা চায়।
×