ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৫৮ নদী খনন শুরু হয়েছে ॥ খালিদ মাহমুদ

নদী দখলকারীরাই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৫ মার্চ ২০২০

নদী দখলকারীরাই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদী রক্ষার জন্য এক শ’ ৫৮টি নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশের প্রতিটি নদীতে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপগুলো একের পর এক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একসময় নদী দখলকারীদের ভয়ে নদী রক্ষা আন্দোলনকারীদের পালিয়ে বেড়াতে হতো। কিন্ত এখন দখলকারীরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রভাবশালী যেই হোক নদী দখল করে কেউ পার পাবে না। নদীর জায়গা উদ্ধারের জন্য সারাদেশেই কাজ শুরু হয়েছে। নদীকে নদীর মতো করে প্রবাহ তৈরি করা হবে। এখানে কাউকে ছাড় নয়। নদী দেশের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। নদী ছাড়া কৃষি প্রধান দেশ বাঁচতে পারে না। পানির সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক। আমাদের দেশ মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে কি না তা নির্ভর করছে নদীর পানির ওপর। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে ‘দূষণ ও দখলমুক্ত নদীপ্রবাহ’ শীর্ষক সেমিনার শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হল রুমে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। আলোচনায় বক্তারা দেশের নদীগুলোর সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সমস্যা শুধু আমাদের একার নয়-একই সমস্যা ভারতেরও। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। সমাধান হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের নদীগুলোর সমস্যা সমাধানে জন্য আন্তর্জাতিক জনমত আমাদের পক্ষে আনতে হবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এই নদীকে কেন্দ্র করে বেঁচে আছে হাজারো মানুষ। কিছু অসাধু, অসচেতন মানুষের জন্য নদী আজ বিপণেœর পথে। এর প্রভাবে প্রতিবছরই কোন না কোন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই আগে নদীকে রক্ষা করতে হবে, নদী রক্ষা পেলে মানুষও রক্ষা পাবে। নদী রক্ষার মাধ্যমে আমাদের বেঁচে থাকা মানে দেশের মানুষের ভাল থাকা। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার সাদতের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মিহির বিশ্বাস বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার আমিনুল হক টুটুল, একরাম এলাহী খান সাজ, ড. মোঃ মহসীন আলী ম-ল প্রিন্স, যুগ্ম সম্পাদক ড. বোরহান উদ্দিন অরণ্য, মোঃ তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ বশির উদ্দিন, সাংবাদিক আনিছুর রহমান খান ও সাংবাদিক মহসীনুল করিম লেবু, কেন্দ্রীয় জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সম্পাদক হাছিবুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোঃ শহীদুল্লাহ, সাংবাদিক আবিদ হোসেন বুলবুল, প্রিন্সিপ্যাল হুমায়ুন কবির, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি কবি জামান ভূইয়া, হাজী মাসুদ, কুমিল্লা জেলার সভাপতি সঞ্জয় চক্রবর্তী, পাবনা জেলার সভাপতি কেএম নাজমুল হাসান, পুরান ঢাকার সভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ, প্রফেসর আমিনুল ইসলাম লিন্টু, নারীনেত্রী শাহ্নাজ পারভীন, নদীযোদ্ধা মিজানুর রহমান। আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশ সঠিক পথে চলেনি। তাই নদীর স্বার্থ দেখার মতো কেউ ছিল না। বরং দেশের নদীগুলোকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নদী দখলের বিষয়ে ‘জিরো ট্রলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। নদী গবেষণার বিষয়ে আমাদের দেশ দুর্বলতা রয়েছে। যারা গবেষণা করছেন, তারাও ঠিকমতো পৃষ্ঠপোষকতা পাননা। তাই সরকার গবেষণার সঙ্গে যুক্তদের সহায়তা করবে। যেন দেশের নদীগুলো রক্ষার মাধ্যমে সঠিক কাজে ব্যবহার করা যায়। নদী আমাদের অস্তিত্ব-তাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। নদীর পাড়ের মানুষদের সঙ্গে নদী বিশেষজ্ঞদের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং নদী রক্ষায় তাদের মতামত নিতে হবে। আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নদী বাঁচাতে আন্তরিক। তার জন্য নদী টাস্কফোর্স ও নদী রক্ষা কমিশন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু গত ১০ বছরে একটি নদীও পুরোপুরি উদ্ধার হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি-সরকার ইচ্ছা করলে নদী রক্ষা পাবে। এবারে নদীরক্ষা দিবসরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের নদীকর্মী ও নাগরিক সমাজের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য সেøাগানটি হচ্ছে, ‘নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন বন্ধ কর, কারণ যথেষ্ট বালু উত্তোলন, নদী ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ’। আলোচনায় সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, দখল ও দূষণকারীদেরকে নদী আদালত গঠনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা বিষয়ক এবং বিশিষ্ট নদী ও পানি প্রকৌশলী ড. প্রকৌশলী মোঃ লুৎফর রহমান নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ বিষয়ক প্রবন্ধ। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ভাঙ্গন রোধের প্রথাগত পদ্ধতির সঙ্গে প্রবন্ধের মিল রয়েছে যা সত্যিই টেকসই দেশীয় প্রযুক্তি। আলোচনা সভা শেষে আনিছুর রহমান খানকে সভাপতি ও মহসীনুল করিম লেবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।
×