ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুচরা বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রভাব

বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ল ॥ মার্চ থেকে কার্যকর

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ল ॥ মার্চ থেকে কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাইকারি খুচরা উভয় ধরনের বিদ্যুতের দামের সঙ্গে সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম বৃদ্ধির আদেশ দিয়েছে। আগামী মার্চ থেকে নতুন বিদ্যুতের দাম কার্যকর হবে। কমিশনের আদেশে বলা হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম চার টাকা ৭৭ পয়সা থেকে ইউনিট প্রতি আট দশমিক চার ভাগ বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ পাইকারি বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মূল্য বাড়ছে ৪০ পয়সা। খুচরা বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম বাড়ছে ৩৬ পয়সা। এতে গড়ে গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য ছয় টাকা ৭৭ পয়সা থেকে পাঁচ দশমিক তিন ভাগ বাড়িয়ে সাত টাকা ১৩ পয়সা নির্ধারণ করেছে। বিদ্যুতের মূল্য হারের সঙ্গে সঞ্চালন ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন আদেশে ইউনিট প্রতি সঞ্চালন ব্যয় শূন্য দশমিক ০১৪৭ টাকা বেড়েছে। আগের তুলনায় পাঁচ দশমিক তিন ভাগ সঞ্চালনে ব্যয় বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও পিডিবির উচ্চমূল্যে তেল ক্রয় এবং বসে থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার জন্যই এবার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে কমিশন বলছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হওয়াতে পুরাতন কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আর তা নবায়ন না করতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। যদিও বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে নবায়ন করছে না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে এবার গ্রাহক শ্রেণী বিবেচনায় প্রান্তিক এবং নিম্ন বিত্ত শ্রেণীকে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একইভাবে শিল্পের ক্ষেত্রেও ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ব্যয় যাতে খুব বেশি না বৃদ্ধি পায় সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। গৃহস্থালির খুচরা বিদ্যুতের মূল্যহার লাইফ লাইনে (০-৫০ ইউনিট) তিন টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে তিন টাকা ৫৭ পয়সা করা হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে (০-৭৫ ইউনিট) ৪ টাকা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ১৯ পয়সা, দ্বিতীয় ধাপে (৭৬-২০০ ইউনিট) ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৭২ পয়সা, তৃতীয় ধাপে (২০১-৩০০ ইউনিট) ৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ছয় টাকা, ৪র্থ ধাপে (৩০১-৪০০ ইউনিট) ৬ টাকা ০২ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা, ৫ম ধাপে (৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট) ৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ৬ষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের উর্ধে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে। গৃহস্থালির পাশাপাশি দাম বেড়েছে কৃষি সেচ, শিল্প এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও। নতুন দাম অনুযায়ী কৃষিতে ইউনিট প্রতি ১৬ পয়সা দাম বেড়েছে। আগে কৃষি সেচে এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা এখন যা হলো চার টাকা ১৯ পয়সা। এর আগে সেচে দাম বাড়ানো না হলেও ২০১৭ সালে সব শেষ দাম বৃদ্ধির সময় তিন টাকা ৮২ পয়সা থেকে দাম বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য নতুন দাম হচ্ছে ফ্ল্যাট ৮ টাকা ৫৩ পয়সা, অফপিকে ৭ টাকা ৬৮ পয়সা এবং পিক আওয়ারে ১০ টাকা ২৪ পয়সা। নির্মাণে নতুন দাম ইউনিট প্রতি ১২ টাকা ধর্মীয়, শিক্ষা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দাম হচ্ছে ৬ টাকা ০২ পয়সা, রাস্তার বাতিতে ৭টাকা ৭০ পয়সা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফ্ল্যাট রেইট ইউনিট প্রতি ১০ টাকা ৩০ পয়সা, অফপিকে ৯ টাকা ২৭ পয়সা এবং পিকে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা। এ ছাড়াও ইলেকট্রিক যানের ব্যাটারি চার্জ দিতে পৃথক বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ফ্ল্যাট ৭ টাকা ৬৪ পয়সা, অফ পিক ৬ টাকা ৮৮ পয়সা, সুপার অফ পিক ৬ টাকা ১১ পয়সা এবং পিক ৯ টাকা ৫৫ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, দাম বাড়ানোর জন্য কমিশন যে সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে তার মধ্যে আমদানিকৃত কয়লার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বৃদ্ধি, অবচয় ব্যয় বৃদ্ধি, তুলনামূলক কম মূল্যে পল্লী বিদ্যুত সমিতিসমূহের অধিক পরিমাণ বিদ্যুত ক্রয় এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছিল সেগুলোর সুদ পরিশোধ এবং প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দামের ওপর ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা। এসব বিষয় বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে। তিনি বলেন, আমরা লাইফ লাইন গ্রাহক ও নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রাহকদের গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের বিদ্যুতের দাম খুব একটা বাড়েনি। আমরা স্পষ্টভাবেই আদেশে বলেছি, এখন থেকে আর কোন তেলভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না এবং গ্যাস নেটওয়ার্ক আছে এমন এলাকাগুলোতে তেলভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না। গতবছরের অক্টোবর মাসে পিডিবি ও বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গত ২৮ নবেম্বর থেকে চার দিনব্যাপী গণশুনানি করে কমিশন। দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×