ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু হোক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

সুষ্ঠু হোক নির্বাচন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনার পারদ চরমে উঠছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এই নির্বাচনে বুঝি প্রধান দুটি দলই অংশ নিচ্ছেÑ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বামপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলও আছে মাঠে। তবে তাদের হাঁক-ডাক, হৈ-হুল্লা, গান-বাজনা তেমন চোখে পড়ে না। তাই বলে প্রচার-প্রচারণা থেমে নেই বিভিন্ন দলের মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর প্রার্থী, নারী কাউন্সিলর ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। সবাই যে যার অবস্থান থেকে প্রচার চালাচ্ছেন নিজেদের সাধ্যমতো। তবু বলতেই হয় যে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নিশ্চিতভাবেই প্রধান দুটি দলের প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। এ দুটো রাজনৈতিক দলের বাইরে তৃতীয় কোন পক্ষ বা শক্তির বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর এ কারণেই বুঝি রাজধানীর সর্বত্রÑ একেবারে শহর থেকে শহরতলী, অনেক অনগ্রসর অনুন্নত এলাকায়ও কেবলই চোখে পড়ে নৌকা ও ধানের শীষের পোস্টার। আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, এবারই বোধকরি প্রথমবারের মতো প্রায় সব প্রার্থী ডিজিটাল প্রচার-প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছেন। যেমন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, মোবাইল এসএমএস ইত্যাদি। পোস্টারেও যোগ হয়েছে পলিথিনের কোটিং, যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ দূষণের। গুজব ছড়ানোর চেষ্টাও আছে। নির্বাচনী ডামাডোলে এসব মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। রাজধানীর প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের চার মেয়র প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তাতে নানা প্রতিশ্রুতি, নানা অঙ্গীকার, নানা আশাবাদ ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত। প্রতিশ্রুতি প্রদানে কেউ কারও থেকে কম যাচ্ছেন না। নির্বাচনে সাধারণ ভোটারের ব্যালটের মাধ্যমে যিনিই জিতুন না কেন, বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব পালনকালে কতটুকু করতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে। এক্ষেত্রে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা মোটেও ভাল নয়। বলতেই হয়, নির্বাচনী প্রবল উত্তেজনাকে ঘিরে এ পর্যন্ত বড় কোন অঘটন বা সহিংসতা ঘটেনি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বস্তরের মানুষ স্বস্তি ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন এমনকি কলকাতা পুরসভা নির্বাচনেও ব্যাপক হানাহানি, মারামারি, সংঘাত, সংঘর্ষ-গোলাগুলি, বোমাবাজি এমনকি হতাহতের ঘটনা ঘটে। আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে, এখন পর্যন্ত রাজধানী ও আশপাশে তা ঘটেনি। এখন অপেক্ষার পালা নির্বাচনের দিন থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত। তবে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সজাগ ও তৎপর। রাজধানীতে বহিরাগতদের গ্রেফতারসহ গত রাত থেকে বিশেষ অভিযানের কথাও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে কোনরূপ অশান্তি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে নাÑ এ টুকুই সবার প্রত্যাশা। মানুষ যেন অবাধে নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের। সর্বাগ্রে সবাইকে মনে রাখতে হবে, রাজধানীর সমস্যা অনেক। দুই কোটির বেশি অধিবাসী অধ্যুষিত রাজধানীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সর্বোপরি গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি-বাস, ট্রাক, টেম্পো, লরি, মাইক্রো, প্রাইভেটকার, লেগুনা ইত্যাদি। সেই অনুপাতে নেই খোলা জায়গা, মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক, গাছপালা, নদী-নালা। সুতরাং ঢাকার বায়ুদূষণ যে বিশ্বে সর্বাধিক মাত্রায় হবে, তাতে আর বিচিত্র কি? নগরবাসীর এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। এবারের নির্বাচনকে ঘিরেও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত মেয়রদ্বয় ও কাউন্সিলরদের এসব সমস্যার সমাধানে আন্তরিক হতে হবে। রাজধানীর যানজট সমস্যা, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন, মশকনিধন, ফুটপাথ ও বস্তি উচ্ছেদ সর্বোপরি ডেঙ্গুর ভীতি থেকে রক্ষা করতে হবে রাজধানীবাসীকে। বিজয়ীরা যেন এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কখনই ভুলে না যান।
×