ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে বিএনপি এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে এই দলটির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে এর বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি নালিশ নির্ভর দল মন্তব্য করে কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম ব্যর্থ বিরোধী দল আর আসেনি। তারা যেমন আন্দোলনে ব্যর্থ তেমনি নির্বাচনেও ব্যর্থ। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় দেখে বিএনপি নেতারা এখন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজছেন। গাড়িচালকদের মতো রাজনীতিবিদরাও বেপরোয়া বলে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদদের কথামালা ফরমালিনের বিষের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাদের কথার কারণে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। জানি না কবে ধৈর্যের কাছে, শৃঙ্খলার কাছে ফিরব। ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১ নারী গাড়িচালকের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কাদের বলেন, রাজনীতিতে বেপরোয়া নেতারা। চালকরা সড়কে বেপরোয়া, পথচারীও তেমন বেপরোয়া। কে কার কথা শোনে। আইন না মানার যে প্রবণতা এ দেশে, এটা কবে যে শেষ হবে। আমরা সবাই সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু সড়কে তো শৃঙ্খলা নেই। মানুষ হামাগুড়ি দিয়ে আইল্যান্ড পার হচ্ছে। মা সন্তানকে নিয়ে সড়ক পার হচ্ছে। অথচ পাশেই ফুটওভারব্রিজ। কে কাকে বোঝাবে। মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর সিটিং সার্ভিস হচ্ছে চিটিং সার্ভিস। গণপরিবহন নিয়ে এত কাজ হচ্ছে, তারপরও ফলাফল আসছে না। বিআরটিসিতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে বিআরটিসি লাভের মুখ দেখে না। এ সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা কঠিন। তবুও চেষ্টা করছি বাধার প্রাচীর ভেঙে ফেলার জন্য। আমি হতাশ হবো না, যদিও হতাশ হওয়ার মতো অনেক কারণ রয়েছে। সড়কে প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে। মন্ত্রী হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারি না। অনেক পরিবার সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নারী চালকরা ঠা-া মাথায় গাড়ি চালায়। এজন্য তাদের গাড়ি চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া আমাদের প্রয়োজন। তাদের উৎসাহিত করতে হবে। বিআরটিসিতে অনেক সিন্ডিকেট, তারপরও চেষ্টা করবো নারী চালক নিয়োগ দিতে। কাদের বলেন, যারা সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন নয়, তাদের সচেতন করতে হবে। স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রান্তিক মানুষ ছিলেন, শিকড়ে নিয়ে যেতেন ব্র্যাকের কার্যক্রম। শিকড়ের অনুসন্ধানে ব্র্যাকের যে ইতিহাস, ড্রাইভিং স্কুলে সেই ধারা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ জাতিকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তার অবদান চিরস্মরণীয়। বেঁচে থাকলে তিনি আরও অনেক কিছু দিতেন। ব্র্যাকের উদ্যাগে এগিয়ে নিতে সরকার সহযোগিতা করবে। রোড সেফটির জন্য বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়ার কথা, কিন্তু কবে দেবে জানি না। আমরা আশা করব বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আখতার বলেন, ব্র্যাকের নারী চালক তৈরির উদ্যাগ সত্যিই প্রশংসনীয়। ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল যে কাজ করছে, এটা নারীদের স্বাবলম্বী করতে অনেক বড় হাতিয়ার। ব্র্যাকসহ অন্য সংগঠন পেশাদার চালক তৈরি করতে যে এগিয়ে এসেছে, তা নারীর ক্ষমতায়নে বড় পদক্ষেপ। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে নারীরা এখন গাড়ি চালকের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। ড্রাইভিং পেশায় নারীরা এগিয়ে এলে সড়ক দুর্ঘটনার সংকট কাটিয়ে উঠবে। নারীদের বৈষম্যের জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন। ইভিএমে কারচুপি হবে প্রমাণ দিন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট কারচুপি হবে, এমন অভিযোগ না করে বিএনপিকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিএনপি নেতাদের বলব, অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে প্রমাণ দিন, কোথায় ইভিএমে ভোট কারচুপি হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনেও ইভিএমের দুই কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং ইভিএম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ অহেতুক। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা কথায় কথায় বলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কই আমি তো কোথাও ভোট চাইতে যাইনি। কোন নির্বাচনী কার্যালয়েও যাইনি। তারা (বিএনপি) শুধু বিরোধিতার জন্য এসব কথা বলে। অন্ধকারে ঢিল না মেরে প্রমাণ দেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইভিএমে যদি কারচুপির কলাকৌশল কাজ করে, জালিয়াতির কাজ করে, তাহলে চট্টগ্রামে ভোটার উপস্থিতি বাড়ত না। এ সময় ইভিএম পদ্ধতিতে কোথায় কোথায় কারচুপি হয়েছে, তার প্রমাণ দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। বিশেষ আবেদন কার কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে তার পরিবারের বিশেষ আবেদন করার ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা বিশেষ আবেদনের কথা বলছেন, তারা আসলে আবেদন কার কাছে করবেন? আদালত নাকি সরকারের কাছে? বেগম জিয়া কিন্তু এখন আদালতের এখতিয়ারে। এখানে সহমর্মিতা-সহানুভূতির বিষয় নয়, এটা লিগ্যাল ব্যাপার। আসলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা বা সহানুভূতির ঘাটতি নাই। কিন্তু এক্ষেত্রে সহানুভূতির কথা বলে তো আমরা আদালতকে প্রভাবিত করতে পারি না। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিশেষ আবেদন করবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। যদি খালেদা জিয়ার পরিবার তার মুক্তির জন্য বিশেষ আবেদন করে সে ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান কী হতে পারে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষ আবেদন আদালতে নাকি সরকারের কাছে করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। এটা আমরা জানিও না, আর সরকারের কাছে আবেদনের বিষয়ও নয়। বিএনপির অভিযোগ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জেতার জন্য সরকার সবকিছু ‘ব্যবহার’ করছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা উল্টো চিত্রটাই জানি। বিএনপির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য নানামুখী অজুহাত খুঁজছে।’ তিনি বলেন, তারা তথ্যপ্রমাণ দিক। কোথায় কোথায় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখছেন। সেটা তো প্রমাণ করতে হবে তার প্রমাণ দিক। দেশবাসী জানুক, শুধু মনগড়া কথা বললে তো হবে না! বিএনপি তো অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে। অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো বক্তব্য দিলে তো হবে না। কোথায় সরকার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে বলুক। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা চাইলেই ইভিএমের মাধ্যমে জালিয়াতি করতে পারবেন এবং কাউন্সিলরদের সমর্থন দিয়ে প্রত্যেকটি দলের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সদ্য সমাপ্ত চট্টগ্রাম উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয় লাভ করেছে। আবার বগুয়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছে। যদি ইভিএমে কারচুপি করার সুযোগ থাকে এবং নির্বাচন নিয়ে কোন জালিয়াতি হয় তাহলে চট্টগ্রাম ও উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম কেন? সরকারের যদি এখানে খারাপ কোন উদ্দেশ্য থাকত তাহলে তো নির্বাচনে উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে যেত! নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ করা যুক্তিহীন।
×