ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরেক ছেলেকে বন্দীদশা থেকে পুলিশের উদ্ধার ॥ অভিযোগের তীর বাবা ও সৎমায়ের দিকে

ফতুল্লায় ঘরে বন্দী রেখে নির্যাতনে এক ছেলের মৃত্যু!

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

  ফতুল্লায় ঘরে বন্দী রেখে নির্যাতনে এক  ছেলের মৃত্যু!

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুই ভাইকে ঘরের ভেতর বন্দী রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন খাবার না দিয়ে মারধরের কারণে বৃহস্পতিবার রাতে এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকাবাসীরা অভিযোগ তুলেছে। এ সময় আরেক ভাইয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে হেমায়েত হোসেন সুমন (৩৫) নামে এক ভাইয়ের লাশ ও আরেক ভাইকে জীবিত অবস্থায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে। দ্বিতীয় ছেলে সাফায়েত হোসেন রাজুকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এলাকাবাসীর অভিযোগের তীরটি তাদের বাবা ও সৎ মায়ের দিকেই। বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লার দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় হাবিবুল্লাহ ক্যাশিয়ারের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতনের শিকার দুই ভাইয়ের বাবা হাবিবুল্লাহর দাবি, তার ওই দুই ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই তাদেরকে ঘরে বন্দী রেখে চিকিৎসা করানো হয়। দক্ষিণ রসুলপুর এলাকায় তার পৃথক তিনটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করেন। দীর্ঘদিন তিনি কাজী নজরুল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করেছেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন। এদিকে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিত রাজু জানায়, সে নোয়াখালী জেলার রামনগর কেএমসি হাই স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার মা মোহসেনা বেগম ইন্তেকাল করেন। এরপর তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে তাকে ফতুল্লায় নিয়ে আসে বাবা হাবিবুল্লাহ। এর কিছুদিন পর তার বাবা তাদের খালা হিনু বেগমকে বিয়ে করলেও অল্পদিনের মধ্যে খালাও মারা যান। পরে তাদের বাবা হাবিবুল্লাহ অন্য একজন মহিলাকে বিয়ে করলেও তিনিও তার বাবার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলে যান। এরপর বাবা হাবিবুল্লাহ এক বছর পূর্বে হনুফা বেগম নামে আরেকজন মহিলাকে চতুর্থবারের মতো বিয়ে করেন। এরপর থেকে তাদের দুই ভাই সুমন ও রাজুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। দুই ভাইকে দুটি রুমে এক বছর যাবত তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। কখনও খাবার দেয়া হয় আবার কখনও লাঠি দিয়ে বাবা ও সৎ মা তাদের মারধর করে। রাজু অভিযোগ করে আরও জানান, কয়েকদিন আগে রাতে সুমনকে অনেক মারধর করে বাবা ও সৎ মা। এরপর সে সারারাত কান্নাকাটি করেছে। তখন আমি অনেক চিৎকার করে আশপাশের লোকজনদের ডাকাডাকি করেছি কিন্তু আমার বাবা ও সৎ মায়ের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। রাজুর দাবি, আমি ও আমার ভাই ‘পাগল’ না। আমার বাবার সম্পত্তি জমিজমার কাগজপত্রে অর্ধেক মালিকানা আমার মা মোহসেনা বেগমের নামে। এই জমি একাই বাবা ও সৎ মা আত্মসাৎ করার জন্য তাদের দুই ভাইকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে এক বছর ধরে ঘরে আটক রেখে নির্যাতন করতেন। তার বড় ভাই সুমন নির্যাতনেই মারা গেছেন বলে রাজু দাবি করেন। তবে ছেলে রাজুর অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবুল্লাহ বলেন, আমার ৫ ছেলে। তবে কোন কন্যা সন্তান নেই। পাঁচ ছেলের মধ্যে দু’জনই মানসিক রোগী। অপর তিনজনের মধ্যে সেফায়েত হোসেন মোহন, ফাহিম হোসেন শাহিন ও ফাহাদ হোসেন শাকিল লেখাপড়া করে। অসুস্থ দুই ছেলেকে চিকিৎসা করেছি অনেক। বড় ছেলে অসুস্থ হয়েই মারা গেছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ফজলুল হক জানান, মৃত সুমনের শরীরের পিছনের অংশে পচন ধরেছে তবে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহরের জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে আরেকজনকে বন্দী অবস্থা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তার বাবা হাবিবুল্লাহর কাছে রাখা হয়েছে। তবে তাকে যেন আর বন্দী করা না হয় সে বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ আসলাম হোসেন জানান, কবি নজরুল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হাবিবুল্লাহর দুই ছেলে ‘প্রতিবন্ধী’ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
×