ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি ডাঃ মোজাম্মেল আর নেই

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১১ জানুয়ারি ২০২০

  বীর মুক্তিযোদ্ধা এমপি ডাঃ মোজাম্মেল  আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএস-এমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন) তিনি এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে ড. মাহমুদ হোসেন। নিবেদিতপ্রাণ জননেতা পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সহ সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে তার মরদেহ বাগেরহাটে নিয়ে আসা হয়। জুমার নামাজ শেষে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে তিনটায় মোরেলগঞ্জ এসএম কলেজ মাঠে এবং বিকেল ৫টায় কচুবুনিয়া গ্রামে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এ সময় শোকার্ত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ১৯৪০ সালের ১ আগস্ট মোরেলগঞ্জের কচুবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুলেই তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া করেন। এরপর সরকারী পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছেন। ১৯৯১ সালে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। পরবর্তীতে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন। তার সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান শুরু হয়। তার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, প্রাক্তন এমপি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পীকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি বীরমুক্তিযোদ্ধা, বাগেরহাট থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন- এর জানাজা শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কফিনে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মরহুম মোঃ মোজাম্মেল হোসেন- এর কফিনে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন-এর কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে মরহুমের কফিনে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি ও হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতার পক্ষ থেকে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন- এর কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। মরহুমের জানাজায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এমপি, সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মির্জা আজম এমপি, আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মোঃ কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস.এম.এ কামাল, এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শরিক হন। মরহুমের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। পরে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শরিক হন।
×