ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব

বিদ্যুত খাতে ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  বিদ্যুত খাতে ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস সম্ভব হলে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে না। কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, বিদ্যুত খাতে ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে। এটা কমানো গেলেই বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলা সম্ভব। যুক্তি হিসেবে ক্যাবের বক্তব্য হচ্ছে, সরকার বলছে কৃষকের উন্নয়নের জন্য সেচে ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুত দেয়া হয়। কিন্তু এতে বিদ্যুত খাতের ঘাটতি হয় চার হাজার কোটি টাকা। এই চার হাজার কোটি টাকার ঘাটতিমূল্য সমন্বয়ের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে তুলে নেয়া হয়। ভর্তুকির কথা বলে আবার গ্রাহকের কাছ থেকেই সরকারের সেই টাকা তুলে নেয়া অযৌক্তিক দাবি করল ক্যাব। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০ বছর বয়সের উর্ধে দুই হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলো বিদ্যুত উৎপাদন করুক বা না করুক শুধু টিকিয়ে রাখতেই বিপুল পরিমাণন ব্যয় হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি রয়েছে সাত হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। কিন্তু ক্যাব দাবি করছে, অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে আট হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার বিদ্যুত খাতে অনেক কাজ করছে। কিন্তু কিছু কিছু কাজে সমালোচনা হচ্ছে। এরমধ্যে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি অন্যতম। অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। আমরা চাই বিইআরসি সবার মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিক। ক্যাব তাদের সুপারিশে বলছেÑ বিদ্যুত এবং জ¦ালানি খাতের কাছে অলস পড়ে আছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর ভোক্তার দেয়া অর্থে বিভিন্ন তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। সব মিলিয়ে এই ৮০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে তহবিল গঠন করে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, আমরা বিইআরসিকে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছি। সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বদলে কমানো সম্ভব। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ পর্যায়ে মোট অযৌক্তিক ব্যয় ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। এই ব্যয় সমন্বয়ে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম এবং সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যৌক্তিক ব্যয়ে বিদ্যুত উৎপাদন হয় না বলেই মূল্যহার নির্ধারণে ভোক্তা সুবিচার পায় না। ভোক্তার ভাগ্যে সঠিক মূল্যে গ্যাস এবং বিদ্যুতের কোনটিই জোটে না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যৌক্তিক ব্যয় এবং চাহিদার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। যে বিনিয়োগ আসলে সরকারের কোন কাজে আসছে না। এখন এই ব্যয়ের জন্য মাসুল গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন পর্যায়ের অতিবিনিয়োগের কারণে ধুঁকছে বিদ্যুত খাত। এরপর দেশে বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য মানসম্মত সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ তিন জায়গার দুর্বলতা চিহ্নিত করতে ভোক্তা প্রতিনিধিসহ সকল পক্ষের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়। যদিও এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি বিইআরসি। ক্যাব বলছে, আমরা আবারও একই দাবি করছি। ক্যাবের বিদ্যুত ও জ্বালানি সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সভাপতি এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এখন বিইআরসির কাছে দাম বৃদ্ধির অযৌক্তিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শহরে যেভাবে বিদ্যুত পাওয়া যায় গ্রামে একইভাবে পাওয়া যায় না। অথচ দাম একই। এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরোধিতা করেন তিনি। বিদ্যুত ও জ্বালানি সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সদস্য বদরুল ইমাম বলেন, অপরিকল্পিত ব্যয়বহুল আমদানি করা জ্বালানির কারণে বাড়ছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ। বাংলাদেশের উচিত সাশ্রয়ী জ্বালানির যোগান দেয়া, যাতে করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। তিনি দেশীয় জ¦ালানি সম্পদ উত্তোলন এবং অনুসন্ধানে সরকারকে মনোযোগ দিতে অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের অন্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
×