ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘হ্যালো সিএমপি কমিশনার’ পেজে অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা

চট্টগ্রামে নারীর শ্লীলতাহানি ঠেকাতে কাজ করছে সাইবার ক্রাইম টিম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 চট্টগ্রামে নারীর শ্লীলতাহানি ঠেকাতে কাজ করছে সাইবার ক্রাইম টিম

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে গণপরিবহনগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারীদের জন্য। এক্ষেত্রে গাড়ির চালক ও হেলপাররা নারীদের যাত্রা অনিরাপদ করে তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে সিএমপির মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ক্রাইম টিমের বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণে। তবে এক্ষেত্রে ভিকটিমকে একটু সচেতন করতে খোলা হয়েছে ‘হ্যালো সিএমপি কমিশনার’। কারণ অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে হলে ভিকটিমকে ঘটনা মনে রাখতে হবে। কে, কোথায়, কখন,কিভাবে এবং কার সঙ্গে অপরাধ ঘটেছে তা মনে রাখতে পারলেই অপরাধীদের শনাক্ত করা কোন কঠিন কাজ নয় এমন তথ্য জানিয়েছেন সিএমপির সাইবার ক্রাইম টিমের ইন্সপেক্টর আজিজ আহমেদ। মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ইন্সপেক্টর আজিজ আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি এই টিমটি গঠন হয়েছে। আমরা নগরবাসীকে নিরাপদে রাখতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিএমপি কমিশনারের তত্ত্বাবধানে থাকা ‘হ্যালো সিএমপি কমিশনার’ পেজে অভিযোগ করলেই পুলিশ সত্যতা যাচাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে নামে। ফলে অপরাধীর পালিয়ে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তাঘাটে এমনকি সম্প্রতি গণপরিবহনেও নারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালাচ্ছে অপরাধী চক্র। এক সময় দূর থেকে নারীদের ইভটিজিং করার চেষ্টা করলেও এখন একেবারেই মেয়েদের গা ঘেঁষেই শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালাচ্ছে ইভটিজাররা। এখন আর কিশোরী বা তরুণীই নয়, শিশু থেকে গৃহবধূও বাদ যাচ্ছে না ইভটিজার থেকে। রাস্তার হাঁটতে গেলে যেমন নারীরা নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন না তেমনি গণপরিবহনে উঠেও নারীরা নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও রক্ষা পাচ্ছে না লোলুপদৃষ্টির নরপিশাচদের কাছ থেকে। ফলে নারীরা আইনের আশ্রয় নিতে পুলিশের সাহায্য নিচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে অপরাধীদের পাকড়াও করতে সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান ফেসবুকে ‘হ্যালো সিএমপি কমিশনার’ নামে একটি পেজ খুলেছেন। এই পেজে যে কেউ সিএমপি কমিশনারকে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারবেন। এই পেজের কারণে গত ২৭ নবেম্বর বাস চালক ও হেলপারেরর লোলুপদৃষ্টিতে শ্লীলতাহানির চেষ্টাকারীদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হবার পর থেকে নারীরা অনেকটা বুদ্ধি এঁটে পরিবহনে চলাচল শুরু করেছে। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,‘হ্যালো সিএমপি কমিশনার’ পেজের প্রথম অভিযানটিই ছিল চাঞ্চল্যকর। গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের সাইবার ক্রাইম টিমের অভিযানে চট্টগ্রামের ‘সোহাগ এক্সপ্রেস লিঃ’ নামে একটি বাসসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টাকারী বাস চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার রুটের বাস (ঢাকা মেট্টো ব-১৫-৬০৭৭)। গ্রেফতারকৃত সুপারভাইজার মোঃ আলী আব্বাস (৩৫), ড্রাইভার এহছান করিম (২৭) ও হেলপার মোঃ ফারুক রহমান ওরফে ভুট্টু (৩৪) পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে মেয়েটির শ্লীলতাহানির কথা। গত ২৭ নবেম্বর বিকেলে পটিয়ার মুন্সেফ বাজার থেকে ‘সোহাগ এক্সপ্রেস লিঃ’ পরিবহনের একটি বাসযোগে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরবর্তীতে বাসটি চট্টগ্রাম শহরের নতুনব্রিজ এলাকায় এলে বাসে থাকা বেশিরভাগ যাত্রী নেমে যায়। এরপর চান্দগাঁও থানার সামনে এলে বাসে থাকা অবশিষ্ট যাত্রীদের সঙ্গে ভিকটিমও নামার চেষ্টা করলে বাসের হেলপার ভিকটিমকে ২নং গেটে নামিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তখন ভিকটিম পেছনে তাকিয়ে দেখে বাসে সে ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই। তখন বাসের ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারকে ভিকটিম ২নং গেটে যাব না বলে নামিয়ে দিতে বলে। পরে বাসটি বিকেল সোয়া চারটার দিকে খাজা রোডের মুখ এলাকা অতিক্রম করার সময় বাসের সুপারভাইজার, হেলপারকে বাসের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভারকে গাড়িটি দ্রুত চালাতে বলে।
×