ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমদানি কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরবর্তীতে লাইসেন্স নবায়ন

স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পেল ১৮ প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স  পেল ১৮ প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি করতে মধুমতি ব্যাংকসহ ১৮ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুই বছরের জন্য এ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরবর্তীতে লাইসেন্স নবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পক্ষ থেকে মনোনীত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে লাইসেন্স হস্তান্তর করা হয়। জানা যায়, অবৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি ঠেকাতে নীতিমালা করে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১১ মার্চ সোনা আমদানির ডিলার নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বর্ণের ডিলার নিয়োগের আবেদন করার সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময়ে মাত্র ৪৭ প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক ও ৪৫ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংকসহ ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, আমিন জুয়েলার্স, ভেনাস জুয়েলার্স ও শারমিন জুয়েলার্সসহ ১৮ প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সোনা আমদানির ডিলার লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার অফেরতযোগ্য পে-অর্ডারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম মূলধন থাকতে হবে এক কোটি টাকা। সোনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভল্টের ব্যবস্থা ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ৭৫০ বর্গফুটের কার্যালয় থাকতে হবে। সব ধরনের নিয়ম মেনে লাইসেন্স পাওয়ার পরও একটি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কোন কারণ দর্শানোর নোটিস ছাড়াই লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, সকাল থেকেই ডিলারশিপের লাইসেন্স কপি হস্তান্তর শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমি বিকেলে এটা গ্রহণ করেছি। কারা কারা স্বর্ণ আমদানির ডিলারশিপ পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ তালিকা আমাদের কাছে এখনও সরবরাহ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এটা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে জানানো হবে। তখন আমাদেরও তালিকা সরবরাহ করা হবে। এই তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ৪৭ প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ আমদানির অনুমতির জন্য আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাই করে প্রথমে ১৮ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আরও লাইসেন্স দেয়া হবে। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা জানান, আগামী দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে আমদানি কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরবর্তীতে বেশ কিছু কোম্পানিকে লাইসেন্স নবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বছরে ২০-৪০ টন সোনা লাগে। সব মিলিয়ে দেশে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৮ হাজারের মতো। বৈধ ব্যবসায়ী মাত্র ৩২ হাজার। ঢাকা শহরে স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ৮০৩ প্রতিষ্ঠানের। এতদিন কোন নীতিমালা না থাকায় ৯০ শতাংশ অবৈধ পন্থায় এসব স্বর্ণ আসত। এর ফলে বৈধ পথে দেশে স্বর্ণ না আসায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারায়, অপরদিকে পাচার হয়ে যায় দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার স্বর্ণ আমদানি উন্মুক্ত করার জন্য স্বর্ণ নীতিমালার ওপর একটি গেজেট প্রকাশ করে। গত বছর ২৯ অক্টোবর এ নীতিমালা জারি করার পর কীভাবে স্বর্ণ আমদানি করা হবে, কারা আমদানি করবে-এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দেয়া হয়। জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ভরি স্বর্ণ আমদানিতে সরকারকে দুই হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। তবে এ শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে এক হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে বিভিন্ন সময় চোরাইপথে আসা আটককৃত স্বর্ণের বার জমা রয়েছে ২ হাজার ১৩১ কেজি ৫৫৪ গ্রাম ৫৪০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে আটককৃত স্বর্ণালঙ্কারের মজুদের পরিমাণ ৮৪৫ কেজি ৮২৬ গ্রাম ৬৬৩ মিলিগ্রাম। এসব স্বর্ণের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন স্বর্ণের বারের পরিমাণ ২ হাজার ১১১ কেজি ৮০ গ্রাম ৮৪০ মিলিগ্রাম এবং স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ ৮১৯ কেজি ২৮১ গ্রাম ১৯৩ মিলিগ্রাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ পাচারের অর্ধশতাধিক মামলা প্রায় ধামাচাপা পড়ে আছে। অধিকাংশ মামলারই অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়। কোন কোন মামলা ঝুলে রয়েছে বছরের পর বছর। তদন্তের নামে বিভিন্ন সংস্থার হাতবদল হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া পর্যন্ত যেতেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে বরাবরের মতো আড়ালেই থাকছে চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অন্যদিকে জড়িতরা শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় স্বর্ণ চোরাচালানের প্রবণতাও বাড়ছে।
×