ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ জঙ্গীবাদ নির্মূলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম ॥ মাহবুবে আলম

চাঞ্চল্যকর এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সন্তুষ্ট ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

চাঞ্চল্যকর এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সন্তুষ্ট ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির মাথায় জঙ্গী সংগঠন ‘আইএসের টুপি’ থাকার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রকম চাঞ্চল্যকর এবং যেসব মামলা দেশের শিকড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়, সেসব ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করতে পারছি, এটাও সন্তুষ্টির কারণ। আমার মনে হয়, আমরা সারা বিশ্বকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে বাংলাদেশে এ রকম হত্যাকান্ড হলে তার বিচার অত্যন্ত দ্রুত হয় এবং সঠিক বিচার আইনী সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিচার সম্পন্ন করা হয়। অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এ মামলা থেকে আমাদের দেশ যে জঙ্গীবাদ উৎপাটনের ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম এটি প্রমাণ হচ্ছে। এ রায়ের পরে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য) হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসবে। তখন আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে এ মামলাটি পরিচালনা করার চেষ্টা করব। জঙ্গীবাদের ব্যাপারে আদালত যে রায় দিয়েছে, সে রায়টি যাতে বহাল থাকে। বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমানের আদালতে রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নি জেনারেল নিজ কার্যালয়ে পৃথক পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নুসরাতের মামলার পেপারবুক আগামী ৩১জানুয়ারি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হত্যা মামলার পেপারবুক ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। আগামী বছর এ দুই মামলার হাইকোর্টের শুনানি শেষ করা হবে। হলি আর্টিজান মামলার রায়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রকম চাঞ্চল্যকর এবং যেসব মামলা দেশের শেকড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়, সেসব ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করতে পারছি, এটাও সন্তুষ্টির কারণ। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি পরে আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানসহ দুজন এজলাসে যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ প্রশ্নের জবাব আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। তবে এ ব্যাপারটার তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত যেন হয়, সেজন্য এ প্রেস কনফারেন্স শেষ করেই কথা বলব আমি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আইনমন্ত্রী হলি আর্টিজানের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, সেখানে ইতালীয়, জাপানী ও বাংলাদেশী নাগরিকসহ পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা ছিলেন। ঘটনা ঠেকাতে চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেরা প্রাণ দিয়েছেন। ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গী হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ৫ জন ঘটনার দিন অভিযানে নিহত হন। আরও ৮ জন পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। সন্ত্রাস দমন আইনে বাকি আট আসামির মধ্যে সাত জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে; একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলতে চাই এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আরও বলতে চাই, এ রকম চাঞ্চল্যকর যেসব মামলা দেশের শেকড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়, সেসব মামলা দ্রুত শেষ করতে পারছি- সেটাও মনে হয় সন্তুষ্টির কারণ। যখনই দুর্ঘটনা ঘটেছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, এসব অপরাধীর দ্রুত বিচার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আজ সেই কথারই সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছিল। আমরা বিচার কার্যক্রম ও রায়ে সন্তুষ্ট। এর ফলে বিচার বিভাগ নিয়ে বিশ্বের সামনে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, আমরা সারা বিশ্বকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে বাংলাদেশে এ রকম হত্যাকান্ড হলে তার বিচার অত্যন্ত দ্রুত হয় এবং সঠিক বিচার আইনী সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিচার সম্পন্ন করা হয়। বিচারে এক আসামির খালাসের বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা তার উত্তরে বলেন, আমি তো এখন জাজমেন্ট পড়িনি। কেন খালাস পেল জাজমেন্ট দেখে নেই তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মৃত্যুদন্ডের রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে সাত দিনের দিনের মধ্য উচ্চাদালতে চলে যাবে। সেখানে গেলে পেপারবুক তৈরি হবে। এটার বিচার সেখানেও যাতে দ্রুত শেষ হয় আমি এর আগেরবার নুসরাত হত্যা মামলায় রায়ে যে কথা বলেছি, দ্রুত পেপারবুক তৈরি করে হাইকোর্টের তালিকায় আনা যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুত বিচারের দাবির সপক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ এসব ন্যক্কারজনক হত্যাকান্ডের বিচার যত দ্রুত সম্ভব ‘আইনী ফর্মালিটি’ শেষ করে মামলা শেষ করা হয়েছে। তবে সাত বছর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনী হত্যা ও তিন বছর আগে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এগুলো তদন্তাধীন আছে। তদন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে, তদন্তকারী সংস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগপত্র বা ফাইনাল রিপোর্ট কোনটাই দেয়া উচিত নয়। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তাদের এ সময় দেয়া উচিত। গতকালের (মঙ্গলবার) একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি, আমেরিকায় একটা মামলায় ৩৬ বছর জেল খাটার পর আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে- এরকম ঘটনা যেন না ঘটে সেটাও আমাদের দেখার দরকার। নুসরাতের মামলার পেপারবুক আগামী জানুয়ারি ৩১ তারিখে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক ৩১ ডিসেম্বরে মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। আগামী বছর এ দুই মামলার হাইকোর্টের শুনানি শেষ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। দন্ডিত এক আসামির মাথায় পরা কালো টুপিতে আইএসের চিহ্ন থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কী এর জবাব দিতে পারব? সেটা নিশ্চয় তদন্ত করা হবে, প্রেস কনফারেন্স শেষ করে তদন্তের জন্য কথা বলব। ডেথ রেফারেন্স আসলে রায় বহালের চেষ্টা করব হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলা মামলার রায় ঘোষণার পরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এ মামলা থেকে আমাদের দেশ যে জঙ্গীবাদ উৎপাটনের ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম এটি প্রমাণ হচ্ছে। এ রায়ের পরে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য) হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসবে। তখন আমরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে এ মামলাটি পরিচালনা করার চেষ্টা করব। যাতে জঙ্গীবাদের ব্যাপারে আদালত যে রায় দিয়েছে, সে রায়টি যাতে বহাল থাকে। বুধবার নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর সুপ্রীমকোর্ট নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলনে। তিনি বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার যারা বিত্তবান ঘরের ছেলে তারাই ভাল স্কুলে পড়াশোনা করছে, তারাই এ সমস্ত জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে স্কুল সরকারী, বেসরকারী, ইংরেজী মাধ্যম, মাদ্রাসাসহ সব জায়গায় অন্ততপক্ষে জঙ্গীবাদের প্রতি কোনরকম যাতে শিক্ষা না দেয়া হয়, কোনরকম আকৃষ্ট করা না হয়, উৎসাহিত করা না হয়। এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার দরকার। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, এ মামলা থেকে আমাদের দেশ যে জঙ্গীবাদ উৎপাটনের ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম এটি প্রমাণ হচ্ছে। এ ঘটনাটি আমাদের দেশের ভাবমূর্তি অনেকটা ম্লান করেছিল। এ রায়ের ফলে সে ভাবমূর্তি, দেশে আইনের শাসন জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকারের যে তৎপরতা এটা প্রমাণিত হয়েছে। এ রায়ের পরে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য) হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসবে। তখন আমরা সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে এ মামলাটি পরিচালনা করার চেষ্টা করব। জঙ্গীবাদের ব্যাপারে আদালত যে রায় দিয়েছে, সে রায়টি যাতে বহাল থাকে।
×