ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লোকসঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

লোকসঙ্গীত উৎসব

সঙ্গীত মানুষের বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সুরের মূর্ছনা আর বাণীর আবেদনে গীত, নৃত্য আর বাদ্যের যে অনবদ্য সংযোগ, তা মানুষের হৃদয় রাঙানো এক শৈল্পিক দ্যোতনা। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সঙ্গীতের অবিস্মরণীয় ভা-ার লোকজ সুর ও বাণীর ব্যঞ্জনায় তার নিরন্তর দ্যুতি আজও মানুষের অন্তর নিঃসৃত আবেদনের এক অবিমিশ্র যোগসাজশ। মেঠো অনুভবের সমৃদ্ধ বাণী যখন সুর সাধনায় ঝঙ্কার তোলে, সে সময় সোঁদা মাটির গন্ধে দর্শক-শ্রোতার হৃদয় আপ্লুত হয়। শিকড়ের সন্ধানে লোকজ সম্ভারের অনবদ্য মিলনযজ্ঞ যে মাত্রায় ভক্তকুলকে অন্য জগতের আত্মিক অনুভবে সাড়া জাগায়, তেমন অনুরণন তো যাপিত জীবনের নিজস্ব সম্পদ। উপমহাদেশের সঙ্গীত জগত সেই পুরাকাল থেকেই সমৃদ্ধ এবং আপন বৈভবে বিশ্বনন্দিত। দেশজ মাটির টানে সঙ্গীতজ্ঞদের যে মাত্রায় অন্য আলোয় জীবনকে অবগাহন করায়, সেখানে সর্বমানুষের যোগসাজশে যে মিলন দ্যোতনা, শেষ অবধি তাই এক অভাবনীয় উৎসবে পরিণত হয়। কারণ নিজের আনন্দ-আবেগ আর সাধনায় যে কণ্ঠ অনাবিল সুধা বর্ষণ করে তা তো কোনভাবেই একার নয়। সর্বজনের একীভূত হওয়ার মধ্যেই তার প্রাপ্তি, যথার্থতা। আর এখানেই উৎসব হয় শ্রোতা আর সুর সাধকের মিলন দ্যোতনায় নান্দনিক অনুভব যেখানে দেশজ বৈভব হয় তার অকৃত্রিম ভুবন। বাঙালীর মনন ও সাংস্কৃতিক যোগসাজশে সুরের সা¤্রাজ্য যে মাত্রায় তার সম্পদকে সর্বজনের উপভোগ্য করে তোলে তা সত্যিই অনুপম। আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। আনন্দের মিলন মেলায় উৎসবের যে অপার উদ্দীপনা সেটাই বাঙালীর যথার্থ ঐতিহ্য। এবারের আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীতের উৎসবে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, রাশিয়াসহ ছয় দেশের শিল্পীরা দর্শক-শ্রোতাদের সুরের ব্যঞ্জনায় আপ্লুত করে দেশজ সংস্কৃতিকে কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। লোকজ সুরের সহজিয়া অনুভবে ঝঙ্কৃত হয়েছে যাপিত জীবনের অন্তর্নিহিত বোধের গভীর দর্শন। যেখানে শুধু প্রেম কিংবা মিলন-বিরহের সুর গাঁথাই নয়, অতীন্দ্রিয় ধ্যান-ধারণার শুদ্ধ চেতনায় মনোজগত নির্মোহ হওয়ারও এক অনবদ্য সাধনযজ্ঞ। সুর মানেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণ করে ধ্যানমগ্ন হয়ে সর্বমানুষের হৃদয়কে পূর্ণতায় ভরিয়ে দেয়া। এক প্রকার নিবেদিত সাধনাও বটে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের কার্যক্রমে সঙ্গীতশিল্পীদের চমৎকার অনবদ্য উপস্থাপন পুরো আয়োজনকে ভরিয়ে তুলেছে। প্রতিটি দেশের আপন সংস্কৃতির বেড়াজালে মাটির টানের যে গভীর আবেদন, সেটাই কোন নির্দিষ্ট সীমানার নিজস্ব বৈভব। ফলে সাংস্কৃতিক অবিমিশ্রতায় যেমন মিলন শোভা আলোকিত হয়, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে প্রতিটি অঞ্চলের শিকড়ের মূল বার্তাও দর্শক- শ্রোতাদের উদ্বেলিত করে। আর এখানেই সংস্কৃতির আদান-প্রদান, পারস্পরিক যোগসাজশে একীভূত হওয়ার যে সম্প্রসারিত আয়োজন, তার যথার্থ আবেদন সর্বজনের মাঝে পৌঁছে যায়। প্রতিটি দেশের আপন বৈভবের অপার সম্ভাবনায় পারস্পরিক সম্পর্কের যে সংহত অবস্থান, সেটাও এমন মহৎ আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। আমরাও জাতি হিসেবে সাংস্কৃতিক পরিম-লের এক ঐশ্বর্যবান উত্তরসূরি। তেমন সুর সাধনায় শিকড় সন্ধানী এই মহোৎসব সঙ্গীতসাধক আর প্রেমীদের হৃদয় কানায় কানায় ভরে উঠেছে।
×