ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমেরিকার ডেনভারে আছে মৃত প্রাণীর এক সংগ্রহশালা

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

আমেরিকার ডেনভারে আছে মৃত প্রাণীর এক সংগ্রহশালা

অনলাইন ডেস্ক ॥ আমেরিকার কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারের ঠিক বাইরে একটি বিশাল গুদামঘরে রয়েছে অদ্ভুত কিছু বস্তুর সমাহার। মৃত বাঘ, হাতির শুঁড় এবং পাঙ্গোলিন কাউবয় বুট। বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ ব্যবসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম একটি ধাপ বলা যায় এটি। এভাবে কলোরাডোর রকি পর্বতমালার মাঝখানে গোপন একটি ভবনে মৃত প্রাণীর এক ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলা পশু পাচারের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করছে ইউএস ফিস অ্যান্ড ওয়াইল্ড-লাইফ সার্ভিসে এবং ন্যাশনাল ওয়াইল্ড লাইফ প্রপার্টি রিপোসিটরি-এটি বন সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনন্য সংস্থা। মার্কিন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বিভিন্ন বন্দরে এবং অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদে আটক করা অবৈধ বন্যপ্রাণী এবং পণ্য নিয়ে আসা হয়। ২২ হাজার বর্গফুট আয়তনের গুদামঘরটিতে বারো লাখের বেশি ধরনের মৃত বাঘ, হাতির শুঁড়ের বাতি, হাজার হাজার ভালুকের নখ, চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন পণ্য থেকে প্যাঙ্গোলিনের চামড়ার কাউবয় বুটজুতো ইত্যাদি উপকরণ মজুদ রয়েছে । এটা যেন আলাদীনের মৃত্যুর গুহা। এই সংগ্রহশালাতে কেবল মৃত পশু-প্রাণী রাখা হয় তেমনটি নয়, বরং বিরল গাছপালা এবং গাছ থেকে তৈরি পণ্যও রয়েছে। এসবের অনেক পণ্য বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসরণ করে আনা। শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সারা মেটযার চারবছর ধরে সংগ্রহশালায় কাজ করেছেন। তার কাছে এটা কেবল প্রাণীদের কোন অন্তিম ঠিকানা নয় কিন্তু এটি নতুন কোনও সূচনা ঘর যেখানে এসব পণ্যের নতুন করে শুরু করার সুযোগ। "এটা কোন সমাধি ক্ষেত্র নয়, তাদের নতুন এক উপায়ে নতুন উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হয়েছে। এটা ভুল ধারণা যে, যেসব বস্তু আমাদের কাছে আসে সেগুলো এরপর কেবল চিরকালের জন্য তা বসিয়ে রাখা হয়, এবং ধুলোয় মলিন নয়, আসলে তা নয়। এসব বস্তু যেন তার প্রজাতির প্রতিনিধি। বন্যপ্রাণী নিয়ে বৈশ্বিক ব্যবসা বহু প্রাণী বিলুপ্তির বড় একটি কারণ। অক্টোবর মাসে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, পৃথিবীর প্রতি পাঁচটি মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে একটি পাচারকারীদের শিকার হয়ে নিয়ে আসা হয় এবং বন্যপ্রাণীর বাজারে বেচে দেয়া হয়।কেবল মাত্র সাতজন কর্মী , মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা সম্পদ, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ, বন সংরক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে চালু করা হয়েছিল এই সংগ্রহশালা। কেবলমাত্র ছোট্ট একটি অংশ সাধারণ ব্যক্তিদের উন্মুক্ত, এবং সেটা পূর্বানুমতি সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দিনে হতে হবে। ইউএস ফিস অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিসের ন্যাশনাল ফরেনসিক গবেষণাগারের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই সংগ্রহশালা, কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই সংগ্রহশালার নিজস্ব স্থান দরকার এবং সুতরাং এই স্থান নির্ধারণ করা হয়। "বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চিড়িয়াখানা, প্রাকৃতিক নিদর্শন-কেন্দ্র এবং যাদুঘর-এসব বিভিন্ন সত্ত্বা পরিবেশগত শিক্ষার কাজ করে অথবা সংরক্ষণ কাজ অবশ্যই এখানে কিছু উপকরণের অভিগমনের অধিকার পাবে শিক্ষাগত এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য"। সংরক্ষণাগারের পক্ষ থেকে বিদেশ থেকে কেবল প্রাণী, উদ্ভিদ বা জীবজন্তু আমদানি করা হয় তেমনটি নয়। এর একটি পূর্নাঙ্গ শাখা রয়েছে যারা অবৈধভাবে পাচারের সময় ধরা পড়া উত্তর আমেরিকার পশু-প্রাণী নিয়ে কাজ করে। মিজ মেটযার বলেন, "এইসব বন্দরের প্রবেশ পথে এবং অপরাধ তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসলে যা জব্দ করা হয়, তার হিসেবে এখানে আপনি যা দেখবেন তা সিন্ধুতে কেবল একটি বিন্দুর মত। আমরা কী গ্রহণ করছি সে ব্যাপারটি খুবই সুনির্দিষ্ট কারণ আমরা নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতি তুলে ধরতে চাই যেগুলো অবৈধ চোরা-কারবারীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গতমাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প-এর প্রশাসন বিপন্ন প্রজাতি রক্ষার আইনের বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে। বর্তমানে এটি আমেরিকায় ১৬০০-র বেশি প্রজাতির সুরক্ষা দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন গাছপালা এবং প্রাণী ও প্রজাতিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেয়া সুরক্ষা অপসারিত হবে এবং বিপন্ন প্রজাতির তালিকা থেকে প্রজাতির বাদ পড়ার প্রক্রিয়া সহজ করবে। এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন নিরপেক্ষ বন সংরক্ষকরা। এই গুদামঘরে মৃত বিশাল বিশাল বিড়াল রয়েছে, তারা নানা রকম ভঙ্গিমায় রয়েছে। এর কারণ বড় বিড়ালের চামড়া এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ সবসময়ই খুবই মূল্যবান শিক্ষাগত উপকরণ। "আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু প্রজাতিকে তুলে ধরার জন্য এগুলো ব্যবহার করছি এবং যেগুলো খুব খুব বেশি মাত্রায় হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে সেগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি", বলেন মিজ মেটযার এসব উপকরণ যেভাবে আটক করা হয়েছিল সংগ্রহশালায় ঠিক সেরকমই রাখা হয়েছে। "আমরা এগুলো কোনভাবেই পরিবর্তন করছি না। এগুলো যেভাবে আমাদের কাছে আসবে সেভাবেই রাখা হাবে"। "যখন দর্শনার্থীরা বা স্কুল শিক্ষার্থীরা আসে তারা এগুলোর সাথে একাত্ম হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে প্রশংসা কুড়ানো, সচেতনতা বাড়ানো, এবং এসব প্রজাতি সম্পর্কে জানানো সম্ভব" এমনই মনে করেন মিজ মেটযার। এই গুদামে কমপক্ষে তিন হাজার ভাল্লুকের নখযুক্ত থাবা রয়েছে। এই ভবনটি কোনও মিউজিয়াম বা যাদুঘর নয়, বলেন মিজ মেটযার, "এইসব বস্তু সংরক্ষণ করার জন্য নয়, এগুলো দূর করার জন্যই আমরা কাজ করছি"। সমগ্র ব্যবস্থাটি পরিচালিত হয় অনন্য এক উপায়ে অর্জিত এক তহবিলের অর্থ থেকে। আর তা হল নির্দিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের সময় বিভিন্ন জরিমানা এবং ফি থেকে অর্জিত অর্থ। কোন কোন উপকরণ বাজেয়াপ্ত করার পরে সংগ্রহশালায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বছরে বছর খানেকও পেরিয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো বাড়ি পরিচ্ছন্ন করার সময় কেউ কেউ এই সংগ্রহশালায় কোন উপকরণ দান করতে আগ্রহী হলে তারা চাইলে এর বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রমও চালাতে পারে। পুরনো প্রজন্মের যেরকম মূল্যবোধ ছিল তরুণ প্রজন্মের মূল্যবোধ একইরকম নয়, বলেন মিজ মেটযার। "সুতরাং তাদের কাছে এসব উপকরণের জন্য একইরকম সহজাত মূল্যায়ন পাবে না, এবং একই সাংস্কৃতিক বন্ধন হবে না। ফলে তারা এটিকে দায়বদ্ধ-ভাবে নিষ্পত্তি করে দিতে চায় এ ধরনের কোন সংগ্রহশালায়।" সূত্র : বিবিসি বাংলা
×