ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

১৬ আসামির ফাঁসির রায়ে ফেনীতে স্বস্তি

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

  ১৬ আসামির ফাঁসির রায়ে ফেনীতে স্বস্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ২৫ অক্টোবর ॥ ফেনীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামির ফাঁসির রায়ে ফেনীর সর্বত্র আলোচনা চলছে। এ রায়ে নুসরাতের পরিবারসহ সবাই সন্তুষ্ট হলেও স্বস্তিতে নেই তার পরিবার, বাবা-মা, ভাই। তারা শংকিত। যদিও প্রশাসন থেকে তাদের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। রায় কার্যকরের চূড়ান্ত পর্ব শেষ হতে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও তাদের অতীত অপকর্ম সবার জানা। তাদের সঙ্গীরা যারা বাইরে আছে তারা এমন কোন কাজ নেই যা করতে পারে না। তারা ও তাদের সঙ্গীরা নুসরাতকে পুড়িয়ে নির্বিঘ্নে সরে গিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার মামলায় ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে আদালত। রায় ঘোষণার পর এজলাসে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা নুসরাতের বাবা ও ভাইকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর প্রশাসন থেকে সোনাগাজীর নুসরাতের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। আগে ৩ পুলিশ তাদের বাড়িতে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে এক সাব ইন্সপেক্টর, এক সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর ও ৫ কনস্টেবল দেয়া হয়েছে। তারা পালাক্রমে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নুসরাতের পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী নুসরাতের কবর জিয়ারত করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে। নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আসামিরা আদালতের কাঠগড়া থেকে যেভাবে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে তাতে তারা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নুসরাতকে পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের ওপর বা তাদের বাড়িতে হামলা হবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ জীবিকার কারণে তাদের বাড়ির বাইরে যেতে হয়। এদিকে নুসরাত হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ফেনীর একটি সমাজ কমিটির সভাপতি কে বিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ রায় দেশের অপরাধীদের জন্য একটি মেসেজ। অপরাধ করে কোন লোক পার পাবে না। এ্যাডভোকেট আক্তামুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ না হলে এ মামলা এত দ্রুত শেষ হতো না। অনেক মামলা যেমন আলোর মুখ দেখে না তেমনি নুসরাত হত্যা মামলাও এক সময় সকলের নজরের বাইরে চলে যেত। পিবিআই সূত্র জানায়, মামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনায় আইজিপি ও ডিজি পিবিআইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে নুসরাত হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টায় জড়িতরা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকায় আলোচনা চলছে। তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম, স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক ও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নুসরাত আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালিয়েছিল। তাদের এ মামলার অভিযোগপত্রে আনা হয়নি। এ চক্রটি যেকোন সময় তাদের দ-প্রাপ্ত সাথীদের হয়ে নুসরাত পরিবারের ওপর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নুসরাত হত্যায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অনেকে স্থানীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিং দৃশ্যমান। রুহুল আমিন খালাস পাবেন আবার সভাপতি হবেন এমন আশায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কয়েক দফা পেছানো হয়েছিল। তাদের আশা পূরণ না হওয়ায় তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নুসরাতের মামলার রায় হওয়ার পর ফেনীর বিভিন্ন সংগঠন বৃহস্পতিবার বিকেলে আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তারা বলেন, আদালতের এ রায়ের কারণে স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া জরুরী। কারণ আর কোন প্রতিষ্ঠানে যেন নুসরাতের মতো ঘটনা না ঘটে। তারা নুসরাত হত্যা মমলার রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
×