ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

নির্মাণ ব্যয় ২ কোটি টাকা ॥ ১৪ বছরেও যাননি কোন অতিথি

আলিয়ারহাটের ডাকবাংলো এখন পোকামাকড়ের বাসা

প্রকাশিত: ০৮:২২, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 আলিয়ারহাটের ডাকবাংলো এখন  পোকামাকড়ের বাসা

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ প্রাচ্য নক্সায় আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত সুদৃশ্য দ্বিতল ভবন। পরিচিতি সরকারী ‘ডাকবাংলো’। কোন নগরীতে নয়। প্রত্যন্ত গ্রাম আলিয়ারহাটে। যেখানে পৌঁছাতে প্রথমে যেতে হবে বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটিার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলা সদরে। সেখান থেকে আরও ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পৌঁছার পর লোকজন আপনাকে দেখিয়ে দেবে। তার আগে আপনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কৌতূহলী প্রশ্ন মনের মধ্যে রেখেই আপন মনে বিড়বিড় করবে-এই লোক কি ডাকবাংলোতে থাকার জন্য এসেছেন! কেউ কিছু দূরে গিয়ে মৃদু হেসে বলবে- যাও বাবা যাও। ওই ভুতুড়ে বাড়িতে পোকামাকড়ের সঙ্গে থাকো। হাড় হাড়ে টের পাবে। সিরামিক ইট, দামী কাঠের দরজা, থাই এ্যালুমিনিয়ামে কাঁচের জানালা, টাইলসের মেঝে,উন্নত খাট, ফোমের দামী বিছানা ও চাদর ও বালিশ, সাইড টেবিল, দামী সোফা সেট, ডায়নিং টেবিল, উন্নত ওয়াশরুম বেসিন, কমোড টয়লেট, গিজার ব্যবস্থায় সাওয়ার, এয়ার কন্ডিশনার ব্যবস্থাসহ অনেক কিছুতে ডাকবাংলো নির্মিত হয়। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি টাকারও বেশি। অর্থায়নে ছিল জেলা পরিষদ। ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকারের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিজ গ্রামকে উপজেলায় রূপান্তরের পরিকল্পনায় সরকারের বহুকোটি টাকা ব্যয়ে অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেন। নিজের বাড়িকেও তিনতলা ভবনে উন্নীত করে দৃষ্টিনন্দন শান বাঁধানো পুকুর তৈরি করেন। আলিয়ারহাট গ্রামের ভেতরে অন্তত ৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন। যাতে বগুড়া, পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার কয়েকটি পথে আলিয়ারহাট পৌঁছা যায়। অতিথি, সরকারী কর্মকর্তা ও পর্যটকদের ওই গ্রামে গিয়ে খ-কালীন থাকার লক্ষ্যে নির্মিত হয় আধুনিক এই ডাকবাংলো। তারপর গত ১৪ বছরে এই ডাকবাংলোয় কোন অতিথি যাননি। দিনে দিনে অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। কোনটিতে ঘুনপোকা ঢুকে কুড়েকুড়ে খেয়ে ভঙুর করে দিয়েছে। কিছু উধাও হয়েছে। কক্ষগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে। চারদিকে ধুলা বালির আস্তরণ। নড়বড়ে হয়েছে জানালা দরজাগুলো। বাতি জ¦লে না বহুদিন। মানুষের বদলে ঘরগুলোর দখলে নিয়েছে সাপ ব্যাঙ, টিকটিকি, বেজি, ইঁদুর বিড়াল বাদুর চামচিকা। পোকামাকড়ের ঘরবসতি। রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক ও জোনাকির আলোয় মনে হবে ভুতুড়ে বাড়ি। রাতে কেউ আশপাশে দিয়ে হেঁটে গেলে বাতাসের কোন শব্দে গা ছমছম করে ওঠে। দিনের বেলার ডাকবাংলোর স্টিলের বড় ফটক খুলে কেউ খড় শুকিয়ে খড়ের পালা দেয়। কেউ গোবর শুকিয়ে ঘুঁটে বানায়। কেউ ধান শুকায়। তবে কেউ ঘরে যায় না। একজন বললেন, ‘কি জানি ভুতটুত যদি ঘাড় মটকে দেয়।’ ডাকবাংলোর বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মকবুল হোসেন বলেন, শুনেছেন সেখানে একটি ডাকবাংলো আছে। যেটা অব্যবহৃত। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর কথা, সম্পদ তালিকায় আছে। তবে কখনও ব্যবহার হয়নি। তিনি এমনই জানেন।
×